তুষারময় পাহাড়ের রত্ন কেনছুয়ে
2024-03-29 17:02:04

মার্চের মাঝামাঝি এক ভোরে, পশ্চিম সি ছুয়ান মালভূমিতে সিয়ান শুই নদীর তীরে এখনও তুষারপাতের সূক্ষ্ম রেখা দেখা যায়। সি ছুয়ানের কাচি চাং জাতীয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তাও ফু কাউন্টিতে গ্রামবাসীরা কোদাল, বেলচা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার মিটার উপরে পাহাড়ের ধারে জড়ো হয়। এ দিন তারা এক দফা বেগোনিয়া চারা রোপণ করতে চান, যেগুলোকে ‘রুবি’র মতো মূল্যবান বলে তারা মনে করেন।

বেগোনিয়াকে আবার কেনছুয়ে হিসেবে চিহ্নিত করেন স্থানীয়রা। কেনছুয়ে গাছে সাদা ফুল ফোটে এবং লাল ফল ধরে। এর ফল দিয়ে জ্যাম, পানীয়সহ নানা খাবার তৈরি করা যায়। শরত্ ও শীতকালে গুচ্ছ গুচ্ছ কেনছুয়ে ফল উজ্জ্বল লাল রঙের স্ট্রিংয়ের মতো দেখায়। স্থানীয় বন্ধুরা একে "তু’রময় পাহাড়ে রুবি’ হিসেবে গণ্য করেন।

চাষাবাদের স্থলে তাও ফু উপজেলার তে’র‍ওয়া গ্রামের অধিবাসীরা দু’জন করে একটি গ্রুপ গঠন করেন। গ্রুপের একজন বেলচা দিয়ে মাটি তৈরি করেন এবং অন্যজন চারা রোপণ করেন। তেরওয়া গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদক লিয়াং তেং লুং জানান, মোট ৫৭ জন গ্রামবাসী এ কাজে অংশ নিয়েছিল এবং এই বছর প্রথমবারের মতো চারা রোপণ করা হয়েছে।

তাওফু বন বিশেষজ্ঞ হ্য সিং মিন সাংবাদিককে বলেন, কেনছুয়ে গাছে ৩-৫ বছর ফল ধরে। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে ফুল ফোটে এবং মে ও জুন মাসে কুঁড়ি থেকে চা তৈরি করা হয়। ওষুধের জন্য পাতা সংগ্রহ করা হয়। জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে পাতা সংগ্রহ করে ওষুধ তৈরি করা হয় এবং অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে  প্রক্রিয়াকরণের জন্য ফল সংগ্রহ করা হয়। গ্রা গত বছর মাজি দেরওয়া গ্রামের একজন গ্রামবাসী উ রি  কেনছুয়ে গাছ থেকে পাতা এবং ফল সংগ্রহ করে ৫ হাজার  ইউয়ান উপার্জন করেছেন।

 লিয়াং তেং লুং জানিয়েছেন, ‘কেনছুয়ে সহজে পরিচর্যা করা যায়। খরার পাশাপাশী এর শীত প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশি। জানা গেছে, বিপুল পরিমাণে চাষের আগে এ গাছটি লাগানো হতো গ্রামবাসীদের ঘরের সামনে ও পিছনে। আগে তারা বন্য কেনছুয়ে’র ফল নাস্তা হিসেবে খেতেন। এ ফল শুকানোর পর স্বাদ অনেকটা আঙ্গুরের স্বাদের মতো। তাওফু পরিবেশ ও বন ব্যুরোর মহাপরিচালক ছেন কাং সাংবাদিককে বলেন, ২০১৬ সালে তাওফু জেলায় ছিল ৫০ হাজার বন্য কেনছুয়ে। যার বার্ষিক ফল উত্পাদনের পরিমাণ দেড় হাজার টন ছাড়িয়েছে। পাহাড়জুড়ে কেনছুয়ে’র ফল। অধিকাংশ ফল জমিতে পড়ে পচে যায়। ফলগুলো নিয়ে পরীক্ষা করে তারা বুঝতে পারেন, এ ফলে রয়েছে বেশ  কয়েকটি ভিটামিন, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফ্ল্যাভোনয়েড ইত্যাদি।

২০১৭ সালে তাওফু জেলা কেনছুয়ে ফল বাণিজ্যিকভাবে উন্নয়ন শুরু করে এবং এ থেকে একটি পানীয় তৈরি করেছে।

ছেন কাং বলেন, ‘২০১৭ সালে এ পানীয়’র স্বাদ টক ছিলো। ২০১৮ সালে এটাকে উন্নত এবং ক্যানড করেছি। ২০১৯ সালে এটি বড় পরিমাণে বাজারজাত শুরু হয়েছে।’

ছেন কাং বলেন, তারা কখনই পানীয়ের সংস্পর্শে আসেনি এবং কারখানা তৈরির কোনো অভিজ্ঞতাও ছিল না। বিদেশে পড়াশোনা করার এবং বিনিয়োগের প্রবর্তন করার সময় তারা গোড়া থেকে শুরু করে। আজ, তাওফু কাউন্টিতে কেনছুয়ে জ্যাম, ক্যান, পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত করা যেতে পারে। এ পানীয় তাওফু কাউন্টির প্রত্যেক পরিবারের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। যার স্বাদ টক-মিষ্টি ।

২০২২ সালে তাওফু জেলায় ৩২ হাজারটি কেনছুয়ে লাগানো হয়। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে। চলতি বছরে তাওফু জেলা কর্তৃক স্থানীয় চারা চাষীদের কাছ থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার চারা কিনতে ৯৭ লাখ ৩৫ হাজার ইউয়ান অর্থবরাদ্দ করবে।

গত দু’বছরে কেনছুয়ে চারা চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ৬টি জেলার ২ হাজার পরিবারের ১০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। যা থেকে বার্ষিক উপার্জন হয়েছে ২ হাজার ইউয়ান। প্রতি বছরে জেলা পর্যায়ের প্রক্রিয়াজাত উদ্যানের কর্তৃপক্ষ এ গাছের পাতা ও ফল সংগ্রহ করে। যা থেকে বার্ষিক ৬ লাখ ইউয়ান আয় লাভ করা সম্ভব হয়েছে।

(রুবি/হাশিম)