মার্চ ২৯: বোআও এশিয়া ফোরামের এ বছরের চারদিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন চীনের হাইনান প্রদেশের বোআওয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অতিথিরা সাক্ষাত্কারে বলেছেন, চীনা অর্থনীতির আগের অবস্থায় ফিরে আসা এবং ভাল হওয়ার ধারায় সংশ্লিষ্ট সবাই এশিয়ার ভবিষ্যত উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদী হয়েছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনর্গঠন ও স্থিতিশীল উন্নয়নে চীনের প্রবল চালিকাশক্তি যোগানোর বিষয়েও প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বৈশ্বিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পুঁজি-সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উন্নয়নের আস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি গোটা বিশ্বের বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদানের হার ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চীনা অর্থনীতির অবদান-সম্পর্কিত আলোচনার সময় বোআও এশিয়া ফোরামের চেয়ারপারসন বান কি-মুন বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের ধীর গতি এবং বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদ গুরুতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে চীন সবসময় উন্নয়ন সমস্যার সমাধানে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে প্রচেষ্টা চালিয়েছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবং যৌথ উন্নয়নে চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। এই সম্পর্কে বান কি মুন বলেন,
“চীন এখন রূপান্তর হওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি শুধু ঐতিহ্যবাহী প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে না, বরং উন্নয়নের গুণগত মান এবং সেটা টেকসই হওয়ার প্রতি আরও বেশি গুরুত্বারোপ করে। এই প্রক্রিয়ায় নিঃসন্দেহে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ ও সাহস দরকার। দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, এই পরিবর্তন চীনা অর্থনীতির অবিরাম উন্নয়নকে এগিয়ে নেবেই। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর। এই ধরনের পরিবর্তন কেবল যে চীনের নিজের জন্য কল্যাণকর, তা নয়; বরং এশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বিশ্বের জন্য ইতিবাচক।”
বর্তমানে উন্নয়নের নতুন গুণগত মানের উত্পাদনশক্তি লালন করছে চীন এবং উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নকে এগিয়ে নিচ্ছে। ব্রিটিশ-সুইডিশ বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ও বায়োটেকনোলজি কম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার গ্লোবাল সিইও প্যাসকাল সোরিও মনে করেন, রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, চীনের উন্মুক্তকরণ নানা প্রযুক্তি বিশ্বের কাছে নিয়ে যাবে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,
“চীন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশাল অবদান রাখছে। এটি সবার চোখে সুস্পষ্ট। পাশাপাশি, আরেকটি অবদান উপেক্ষা করা যায় না। সেটা হলো উদ্ভাবন। জৈবিক ক্ষেত্র ও অন্যান্য ক্ষেত্রে চীনের সবুজ রূপান্তর প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের দ্রুত উন্নয়নে শক্তিশালী সহায়তা যোগাবে। সফলভাবে এসব প্রযুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং অবদানও আরও ব্যাপক হবে।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পরিবেশ-বান্ধব সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চীন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। যেমন, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক আন্তঃদেশীয় সরাসরি বিনিয়োগ নিম্ন পর্যায়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে চীনের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ সামষ্টিকভাবে এ ধারা বদলে দেয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর চীনে সকল খাতে অ-আর্থিক বিভাগে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ‘বেল্ড অ্যান্ড রোড’ বরাবর দেশগুলোর অ-আর্থিক বিভাগে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ২০ শতাংশ বেশি। ডেহলার টেকনোলজি কম্পানির চীন বিষয়ক উপ-প্রধান লিউ মিং হুয়া মনে করেন, চীন বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির অনেক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,
“বৈশ্বিক বহুপাক্ষিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় অঞ্চলে সবুজ উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, উদ্ভাবন প্রভৃতি। এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশাল অবদান রেখেছে চীন।” (ওয়াং হাইমান/রহমান)