চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’।
এই পর্বে থাকছে:
১. চীনের বিওয়াইডি আনুষ্ঠানিক ভাবে গাড়ি বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশে
২. চীনা ইউয়ান বেশি ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ ৮ দেশ
৩. চীনের অনলাইনে অডিওভিজ্যুয়াল ব্যবহারকারী ১০০ কোটি ছাড়ালো
কর্পোরেট প্রোফাইল:
চীনের বিওয়াইডি আনুষ্ঠানিক ভাবে গাড়ি বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশে
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও লেগেছে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির হাওয়া। জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর গাড়ির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। আর সেই পালে নতুন বাতাস এনে দিয়েছে চীনের গাড়িনির্মাতা বিওয়াইডি।
২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। আর সেই লক্ষ্যপূরণে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার বাড়াতে সহযোগিতা করবে বিওয়াইডির সদ্য চালু হওয়া শোরুম।
ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি এদেশের বাজারে তাদের দুটি ফ্ল্যাগ শিপ গাড়ির দাম নির্ধারণ করেছে।
বিওয়াইডি সিল এক্সটেন্ডেড মডেল ৮৯ লাখ ৯০ হাজার ও পারফমেন্স মডেলের পাওয়া যাবে ৯৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায়।
বিয়ন্ড ইয়োর ড্রিম (বিওয়াইডি) যার অর্থ স্বপ্নেরকে ছাড়িয়ে। নামের সাথে মিল রেখেই কাজ করে চলেছে বিওয়াইডি। ৩১০ হর্সপাওয়ারের এক্সটেন্ডেড মডেল ফুল চার্জে চলবে ৫৭০ কিলোমিটার এবং ৫২২ হর্সপাওয়ারের পারফমেন্স মডেলের মাইরেজ ৫২০ কিলোমিটার। বিওয়াইডি সিল-এ ব্যবহার করা হয়েছে বিওয়াইডি’র নিজেদের উদ্ভাবিত নিরবচ্ছিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ই-প্ল্যাটফর্ম ৩.০, ভয়েস কমান্ড, আছে কলিশন ওয়ার্নিং প্রযুক্তিও। যা রাস্তায় হঠাৎ পথচারী পার হতে গেলে জরুরি ব্রেক কষবে।
আরও আছে আইটিএসি (ইন্টেলিজেন্ট টর্চার অ্যাডাপশন কন্ট্রোল) ভেজা কর্দমাক্ত পথে চাকাকে রাস্তার সাথে আঁকড়ে ধরে রাখবে। আছে ট্রাফিক সাইন রিকগনিশন এবং ভেহিক্যাল ডায়নামিক কন্ট্রোল সিস্টেম। বিওয়াইডি সিলে আছে দুর্দান্ত বাঁকানো গ্লাসের ছাদ, ওয়াটারড্রপ মিরর ও এলইডির বহুমুখী ব্যবহার।
ভোক্তাদের জন্য চার্জিং স্টেশন ছাড়াও বাড়ির গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। স্টেশনে চার্জ হতে ১ ঘণ্টা সময় লাগলেও গ্যারেজে সময় নেবে ৮ ঘণ্টা। আরও থাকছে তিন পিনযুক্ত ভ্রাম্যমান চার্জার যা যেকোনও জায়গায় জরুরি চার্জ দেওয়া সম্ভব। বিওয়াইডি তাদের ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি দিচ্ছে ৮ বছর বা এক লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সরকারের ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে মাথায় রেখে বিওয়াইডি জানিয়েছে, পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারে পরিবেশের সুরক্ষায় অবদান রাখতে আরও উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে তারা।
।। প্রতিবেদন: শাহানশাহ রাসেল
।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
ভিন দেশে চীন:
চীনা ইউয়ান বেশি ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ যে ৮ দেশ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সুযোগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দিন দিন প্রভাব বিস্তার করছে চীনের মুদ্রা ইউয়ান। ইতোমধ্যেই ডলারকে হটিয়ে রাশিয়ার সর্বাধিক লেনদেন হওয়া বিদেশি মুদ্রায় পরিণত হয়েছে চীনা মুদ্রা। এদিকে বিদেশি মুদ্রায় আমদানি ও রপ্তানি দায় তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি করতে আরটিজিএসে অন্তভূর্ক্ত হচ্ছে চীনা মুদ্রা ইউয়ান ।
দেশে দেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেনে এবং রিজার্ভ বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে রাখা হচ্ছে ইউয়ান। এরই মধ্যে দেশটির মুদ্রা ব্যবসা-বাণিজ্যে, আন্তর্জাতিক লেনদেনে, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় লেনদেনে ও বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভে ইউয়ানের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে।
· রাশিয়া: ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে রুশ অর্থনীতি। পরিস্থিতির সামলাতে ইউয়ানের ব্যবহার বাড়াচ্ছে তারা। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে ইউয়ানের ব্যবহারে হংকং, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রের পর পঞ্চম শীর্ষ স্থানে রয়েছে মস্কো। গ্যাস ও স্বর্ণ ইউয়ানে বিক্রি করছে তারা।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিএস লোমবার্ড’র প্রধান চীন বিষয়ক অর্থনীতিবিদ ররি গ্রিন জানান, রাশিয়ায় অফশোর ইউয়ানের ব্যবহার ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ, আর ২০২৩সালের জানুয়ারিতে দেখা যায় তা ২ দশমিক ৫৭ শতাংশে ঠেকেছে।
· সৌদি আরব: তেল বিক্রির ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে চীনা ইউয়ান গ্রহণের কথা ভাবছে সৌদি আরব। গ্যাস ও তেলের বাণিজ্যে মুদ্রাটির ব্যবহার বাড়াতে চায় দেশটি।
· আর্জেন্টিনা:চীন থেকে পণ্য আমদানিতে ডলারের বদলে ইউয়ান ব্যবহার করছে আর্জেন্টিনা। গেল বছর আর্জেন্টিনার সঙ্গে ইউয়ান লেনদেনের সীমা ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ১৬৫ বিলিয়ন করে পিপলস ব্যাংক অব চায়না।
· ব্রাজিল: ইউয়ানে বিনিয়োগ গ্রহণ করছে ব্রাজিল। সুইফটের বিকল্প হিসেবে ‘ক্রস-বর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমে’ দেশটিতে ইউয়ানের লেনদেন ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে।চীনের অন্যতম সর্বোচ্চ বাণিজ্য-অংশীদার ব্রাজিল। ব্রাজিলের ব্যবসায়ী ওয়াল্টার সালকা বলেন, ইউয়ান দিনকে দিন গুরুত্ব পাচ্ছে। ক্ষুদ্র পরিমাণে হলেও কিছু লোক এতে আগ্রহী।
· বাংলাদেশ: পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থ ইউয়ানে পরিশোধে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও রাশিয়া। গত বছর আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম সুইফট থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে দেশটিকে ডলারে অর্থ শোধ করতে পারবে না বাংলাদেশ। পরিপ্রেক্ষিতে চীনের ‘ক্রস-বর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমে’ ইউয়ানে এ অর্থ দেবে বাংলাদেশ।
· পাকিস্তান: রাশিয়ার কাছ থেকে ইউয়ানে অপরিশোধিত তেল কিনতে যাচ্ছে পাকিস্তান। চীন তাতে সহায়তা কথা জানিয়েছে।
· ইরাক: ইরাকে বেসরকারি পর্যায়ের আমদানিকারকেরা ইউয়ানে অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তবে তেল বাণিজ্য এর বাইরে রাখা হয়েছে।
· থাইল্যান্ড: ব্যাংক অব থাইল্যান্ড এবং পিপলস ব্যাংক অব চায়নার মধ্যে ই্উয়ান ও বাথে বাণিজ্যের প্রসার বাড়ানোর কথা হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে মুদ্রা-বিনিময় চুক্তি নবায়ন করে তারা।
।। প্রতিবেদন- আফরিন মিম
।। সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
চীনের অনলাইনে অডিওভিজ্যুয়াল ব্যবহারকারী ১০০ কোটি ছাড়ালো
চীনে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রেকর্ড সংখ্যক ১০০ কোটি অনলাইন অডিওভিজ্যুয়াল ব্যবহারকারী ছিল। অর্থাৎ দেশটির প্রায় শতভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই অডিওভিজ্যুয়াল ব্যবহার করছে।
চায়না ইন্টারনেট অডিও ভিজ্যুয়াল সার্ভিস ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতুতে ১১তম চায়না ইন্টারনেট অডিও ভিডিও সম্মেলনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বুধবার বিষয়টি প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, শুধু ২০২৩ সালেই শর্ট ভিডিও, লাইভ স্ট্রিমিং, অডিওসহ অন্যান্য অনলাইন অডিও ভিজ্যুয়াল শিল্পে প্রথমবারের মতো চীনের বাজার ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৪১ বিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়ে মোট ১ দশমিক ১৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে।
এখানে বলা হয়েছে, ২০২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দিনে মাথাপিছু ৪৩৫ মিনিটের মধ্যে অডিও ভিজ্যুয়াল অ্যাপগুলোয় সময় ব্যয় করেছে ১৪৭ মিনিট।
চীনে একই সময়ে অনলাইনে প্রায় ১৫৫ কোটি শর্ট ভিডিও একাউন্ট ছিল যেখানে দেড় কোটিরও বেশি পেশাদার লাইভ স্ট্রিমার রয়েছেন।
গত দুই বছরে চীনের গ্রামীণ এলাকা থেকেই নতুন ব্যবহারকারীরা এসেছেন। ২০২২ সালে প্রায় ৩০ কোটি ও ২০২৩ সালে ৩২ কোটি গ্রামীণ ব্যবহারকারী অডিও ভিজ্যুয়াল সেবা নিয়েছেন।
।। প্রতিবেদন: শাহানশাহ রাসেল
।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শাহানশাহ রাসেল
অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী