সিনচিয়াংয়ের উইগুরদের বিয়ের অনুষ্ঠান (১)
2024-03-29 15:18:56


 

এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও সিচাং-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর সিচাং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।

 

বিবাহ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায় এবং সুখের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। অতএব, বিবাহের দিনটি একটি শুভদিন, যা সতর্কতার সাথে আগাম নির্বাচন করা হয়। বিভিন্ন শহরে এটি সাধারণত ছুটির দিনে বাছাই করা হয়। কৃষি অঞ্চলে শিথিল সময়ে এটি আয়োজন করা হয়। পশুপালক অঞ্চলে সাধারণত শরতে যখন গবাদিপশু ও ভেড়াগুলো মোটা ও শক্তিশালী হয়, তখন বিয়ের আয়োজন করা হয়। উইগুর এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, তাঁরা রমজান মাসে বিয়ে করতে পারে না।

সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিয়ের অনুষ্ঠান রঙিন, অনন্য এবং সমৃদ্ধ জাতিগত রীতিনীতিতে পূর্ণ। বিবাহটি নবদম্পতির জন্য শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান নয়, বরং তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব, এমনকি তাদের নিজ নিজ গ্রামের জন্যও একটি প্রধান অনুষ্ঠান। এটি স্থানীয় কমিউনিটির জন্য একটি দুর্দান্ত উত্সব। উভয় পরিবারই উদযাপন করে, যা প্রায়শই বেশ কয়েক দিন ধরে চলে। তারা উত্সবের মতো পরিবেশে লোকদের সাথে বিবাহের আনন্দ ভাগ করে নেয়।

উইগুর বিবাহ হল গান ও নাচের বিবাহ। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা একসাথে গান ও নাচের সাথে উদযাপন করতে একত্রিত হয়, যা খুব প্রাণবন্ত ও দুর্দান্ত। বিয়ের প্রথম দিন সকালে, কনের বাড়িতে একটি ‘নিখা’ (মূল বিবাহ) অনুষ্ঠিত হয়। ইমাম বিয়ে পড়ান। তিনি বর ও কনেকে জিজ্ঞাসা করেন যে, তারা স্বামী ও স্ত্রী হতে ইচ্ছুক কি না। ইমাম সাধারণত তিন বার জিজ্ঞাসা করেন। বরের কাছে একবার জিজ্ঞাসা করার পরে, বর কেবল উচ্চস্বরে ‘হ্যাঁ’ উত্তর দেবে, আর কনের জন্য তো তিনবার জিজ্ঞাসা করার পরে লাজুকভাবে উত্তর দেবে ‘হ্যাঁ’। এর পরে, বর ও কনেকে নোনা জলে ভিজিয়ে নান খেতে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যার অর্থ ‘আনন্দ ও দুঃখ ভাগ করে নেওয়া এবং চিরকালের জন্য একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করা’। নান খাওয়ার প্রক্রিয়া খুবই মজার। যে প্রথমে নান খেতে পারবে, সে পারিবারিক বিষয়ের দায়িত্বে থাকবে। এ সময় কনে আর লাজুক থাকে না, বরং দ্রুত নান হাতে নিতে চায়! এই অনুষ্ঠানশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে বাড়ি চলে যান বর।

বর ও কনের পরিবার অতিথিদের আপ্যায়ন করার জন্য একই সময়ে নিজ নিজ বাড়িতে ভোজসভার আয়োজন করে। লোকেরা গান গায় ও নাচে। পরিবেশটি আনন্দ ও হাসিতে পূর্ণ থাকে। বিকেলে, নববধূ তার বিয়ের পোশাক পরে, ফুলের মতো ঘোমটা দিয়ে মাথা ঢেকে বাড়িতে অপেক্ষা করে। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের ঘেরা সদ্য সাজে বর কনেকে নিতে কনের বাড়িতে যায়। পথের ধারে, নববধূকে স্বাগত জানাতে থাকা যুবকরা খঞ্জনি বাজিয়ে, সুওনা বাজিয়ে, রেভাফু বাজায় এবং প্রফুল্ল "বধূ-স্বাগত গান" গায়।

যখন কনে বিয়ের দলের গান শুনেন, তখন তিনি অবিলম্বে দরজা আটকে দেন। বরের কাছ থেকে উপহার পাওয়ার পরেই তিনি দরজা খোলেন এবং বিবাহের দলকে প্রবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানান। কনে বিয়ের অতিথিদের উষ্ণভাবে আপ্যায়ন করেন। এরপর যারা কনেকে তুলে নিয়েছিল তারা বিয়ের উত্সবমুখর পরিবেশে কনের বাড়ির উঠানে কিছুক্ষণ নাচানাচি করে। নববধূকে তোলার আগে তাকে তার বাবা-মার কাছে বিদায় নিতে হয়। কনের বাবা তার মেয়েকে প্রার্থনা ও আশীর্বাদ করেন।  কনে তার পরিবারকে বিদায় জানান। এই সময়ে, কনের পক্ষে বিবাহের দল আবারো বিয়ের গান গায়।

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ঊর্মি/আলিম)