মার্চ ২৮: দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইন আরও বেশি ‘নাটক’ শুরু করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপপুঞ্জের অবৈধ আগ্রাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ফিলিপাইন কখনও `দুঃখজনক পরিবেশনা’ করে, কখনও দেখায় চটকদার কিছু। গেল সাপ্তাহিক ছুটিতেও একই কাণ্ড ঘটিয়েছে আবার।
গত ২৩ মার্চ চীনের রেন আই দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি সামুদ্রিক অঞ্চলে চীনের নৌ পুলিশের আইনানুসারে বাধা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে ফিলিপিনো জাহাজ থেকে চটজলদি ‘সাদা পতাকা’ দেখানো হয়েছে। এর পর দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সার্বভৌমত্ব নিয়ে চীনকে আন্তর্জাতিক সালিসির মুখোমুখিও দাঁড় করাতে চান ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
এ বছরের মার্চ থেকে ‘রেন আই’ দ্বীপপুঞ্জে উস্কানিমূলক তৎপরতা বাড়িয়েছে ফিলিপাইন। গত ৫ মার্চ তাদের ২টি মালবাহী জাহাজ এবং ২টি সামুদ্রিক পুলিশ জাহাজ ‘রেন আই’ দ্বীপপুঞ্জে পা দিয়েছে, এবং ইচ্ছাকৃতভাবে চীনা সামুদ্রিক পুলিশ জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে সামান্য আঁচড়ও লাগিয়েছে। ওই সময় আইনানুসারেই চীনা সামুদ্রিক পুলিশ তাদের বিতাড়িত করেছে।
ওই ঘটনার ১৮ দিন পর, প্রতিশ্রুতি মেনে না চলে ফিলিপাইন পুনরায় তাদের ১২টি মালবাহী জাহাজ এবং ২টি সামুদ্রিক পুলিশ জাহাজ পাঠিয়ে অবৈধভাবে ‘রেন আই’ দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করে।
এবারের মালবাহী জাহাজে ত্রাণ-সামগ্রী ছিল না, বরং অবৈধভাবে তাদের যুদ্ধজাহাজের সক্ষমতা বৃদ্ধির উপকরণ ছিল। তাদের অপচেষ্টাটি ছিল মূলত চীনের জনশূন্য দ্বীপপুঞ্জে একটি স্থায়ী আউটপোস্ট নির্মাণ করা। চীনা সামুদ্রিক পুলিশ পুনরায় আইনানুসারে ব্যবস্থা নিয়ে এই উস্কানিমূলক অপচেষ্টা প্রতিহত করেছে।
এই দুইবার অবৈধ আগ্রাসনের পর ফিলিপাইন আবারও গত ২১ মার্চে ৩৪ জনকে নিয়ে গঠিত এক ‘বড় দল’ পাঠিয়ে চীনের সতর্কতা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে চীনের থিয়ে সিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ঢুকে পড়ে। চীনা সামুদ্রিক পুলিশ আইনানুসারে এবারের অপচেষ্টাও প্রতিহত করেছে।
সম্প্রতি ফিলিপাইন যে দক্ষিণ চীন সাগরে বেশ এ সমস্যা সৃষ্টি করে চরেছে, এর নেপথ্যের পরিকল্পনা কী? বিশ্লেষকরা বলছেন, পেছনে তিনটি ষড়যন্ত্র রয়েছে।
প্রথমত, ফিলিপাইন এ ধরনের ‘স্যাডফিশিং’ তথা নাকিকান্নার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সামজে চীনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের অবৈধ ষড়যন্ত্রকে চালিয়ে নিয়ে যেতে চায়। যেমন, সিএনএন-এর সংবাদদাতা এ ঘটনায় অংশগ্রহণ করে চীন ও ফিলিপাইনের জাহাজের ‘সংঘর্ষের’ ভিডিও তুলে ওয়েবসাইটে দিয়েছে। এমনকি ‘বট’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটা সামাজিক প্ল্যাটফর্মেও ছড়িয়েছে, যার উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক জনমতে বিভ্রান্তি তৈরি করা।
দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা তৈরি করে আঞ্চলিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর অজুহাত তৈরি করা। গেল বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের যৌথ মহড়া চালানোর পর, দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের আগ্রাসন স্পষ্টভাবে বেড়েছে।
গত ২৩ মার্চ ‘রেন আই’ দ্বীপপুঞ্জে অবৈধভাবে পা দেওয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন ফিলিপাইন সফর করেন। এমনকি, পুনরায় ফিলিপাইনের ‘নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি’র কথাও টেনে আনেন। এ ঘটনার পর, বাস্তবতা ও চীনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ন্যায়সঙ্গত আচরণকে উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর বাক্যবাণ ছুড়ে মারে। এ থেকে স্পষ্ট যে, উপর থেকে দেখলে মনে হবে, এটি ফিলিপাইনের ষড়যন্ত্র; অথচ আড়ালে এটি পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রেরই চক্রান্ত।
তাছাড়া, আগামী এপ্রিলে ওয়াংশিটনে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ফিলিপাইনের শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পূর্বাভাস রয়েছে যে, দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু এবারের শীর্ষ সম্মেলনের ফোকাস হিসেবে থাকবে। দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের এই ‘পরিবেশনা’র আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে এই শীর্ষসম্মেলনে দক্ষিণ চীন সাগরের আলোচ্য বিষয়ে আরও বেশি ইন্ধন যোগানো।
সম্প্রতি ফিলিপাইনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই অঞ্চলের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির ‘দারুণ তাৎপর্য’ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপাইন জোট এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা এনেছে নাকি বিশৃঙ্খলা বাড়িয়েছে? ইতোমধ্যেই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে বাস্তবতা।
ওয়াং হাইমান/ফয়সল