আকাশ ছুঁতে চাই ৬৩
2024-03-28 17:02:15


 

 

১. পর্যটনশিল্পে নতুন গতি এনেছেন নারী

২. হোমস্টের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী চোং সিয়ান

৩. পশুচিকিৎসা পেশাতে সফল বাই হুয়া

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

পর্যটনশিল্পে নতুন গতি এনেছেন নারী

পর্যটক বললে আগে পুরুষের কথাই মনে আসতো। কিন্তু এখন প্রচুর সংখ্যক নারী নিজের অর্থ ব্যয় করে পর্যটন করছেন, একা অথবা দলবেঁধে ঘুরতে যাচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে। নারীদের এই ব্যাপক অংশগ্রহণ চীনের পর্যটন শিল্পে এনেছে নতুন গতি। 

 

একা একা দূর দেশে বেড়াতে যাচ্ছেন নারী। কয়েকজন বান্ধবী মিলে ঘুরছেন দেশবিদেশ। এমনটা আগে তেমন শোনা যেত না। কিন্তু এখন চীনের নারীদের মধ্যে পর্যটনকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শুধু তরুণীরাই নন, মধ্য বয়স্ক এবং প্রবীণ নারীরাও পর্যটন করছেন, নিজের ইচ্ছেমতো ব্যয় করছেন। 

সম্প্রতি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ট্রিপ ডট কম গ্রুপ ২০২৪ সালে নারীদের পর্যটনে অংশগ্রহণভিত্তিক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে দেখা যায় ভ্রমণখাতে পুরুষের তুলনায় নারীদের ব্যয় গত বছরের চেয়ে এ বছর ৮ শতাংশ বেড়েছে। 

 

নারী পর্যটকদের মধ্যে ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে জন্ম এমন মধ্য বয়সী নারীদের সংখ্যা ৬২.২ শতাংশ। তারা খরচও করেন বেশি। এমনিতেই  নারীদের ভ্রমণখাতে বার্ষিক ব্যয় পুরুষের চেয়ে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর কারণ হলো আগের তুলনায় চীনের নারীদের এখন আয় অনেক বেড়েছে। বেড়েছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা । চলাচলের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাও বেড়েছে।  

 

ছেন ইয়ান বাস করেন সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতু শহরে। তিনি সম্প্রতি নেপাল ঘুরে এসেছেন। ছেন প্রচুর ভ্রমণ করেন। চীনের ভিতরে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যেমন গেছেন তেমনি বিদেশেও পর্যটন করেছেন তিনি। সাধারণত স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলো দেখার জন্য তিনি বেশি আগ্রহী। 

ট্রিপডটকম গ্রুপের সিইও সুন চিয়ে মনে করেন নারীদের ট্রাভেল প্ল্যানিং এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বেশি। তারা তাদের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করেন। 

নারী ভ্রমণকারীরা স্থানীয় কারুশিল্প ও ফ্যাশন আইটেম কেনার বিষয়েও বেশ আগ্রহী। ফলে সেখানকার পর্যটন-সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোও চাঙা হচ্ছে। 

 

শুধু মা ও মেয়ের ট্রাভেলও বাড়ছে। চাও থিংথিং শাংহাই এর বাসিন্দা। ১৯৮০ এর দশকে তার জন্ম। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি প্রায়ই তার বান্ধবীদের সঙ্গে বেড়ান। কিছুদিন আগে তিনি তার ১১ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ক্রুজ শিপে সারা বিশ্ব ঘুরেছেন। 

অনেক তরুণী নারী তার মধ্যবয়সী মাকে নিয়ে ভ্রমণ করেন। কারণ তারা মাকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দর সময় কাটাতে ভালোবাসেন।

আবার দলবেঁধে বান্ধবীরা মিলে কোন জায়গায় বেড়ানোর বিষয়টিও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 

 

নিজস্ব অর্থায়নে স্বাধীনভাবে নারীদের এই পর্যটন স্থানীয় হোমস্টে, বুটিক হোটেল এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক পর্যটন ব্যবসাকেও গতিশীল করে তুলেছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

হোমস্টের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী চোং সিয়ান

 

দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশের এক নারী চোং সিয়ান। সমুদ্রতীরের বোয়াও শহরে বাস করেন তিনি। হোম স্টের ব্যবসা করে তিনি এখন আত্মনির্ভরশীল। 

চীনের দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের সমুদ্রতীরবর্তি শহর বোয়াও। এখানে বোয়াম ফোরাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিগগিরি। বোয়াও ফোরামকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে চোং সিয়ানের হোম স্টে ব্যবসা। 

 

৩৬ বছর বয়সী উদ্যোগী নারী চোং সিয়ান। হাইনানের ছিয়ংহাই সিটিতে তার জন্ম। ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। কুয়াংচৌ এবং হাইখৌ সিটিতে কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন রকম কারুশিল্প ও নকশায় দক্ষ তিনি। 

 

২০১৬ সালে নিজের হোমটাউনে ফিরে তিনি একটি হোমস্টে গড়ে তোলেন। নাম দেন ক্যাপটেইন ভেজিটেরিয়ান বি অ্যান্ড বি। নান্দনিক নকশা, আন্তরিক পরিষেবা এবং  ভালো খাবারের কারণে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে তার ব্যবসা জমে ওঠে বোয়াও ফোরামকে কেন্দ্র করে। বোয়াও ফোরামের সময় দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক আসেন। সে সময় বোয়াও শহরের হোটেল ও হোমস্টেগুলো ভরে ওঠে। 

 

চোং সিয়ানের রয়েছে নিজস্ব কিছু ভাবনা। তিনি শিশু ও অভিভাবকদের নিয়ে নানা রকম মজার ইভেন্টের আয়োজন করেন। ঝিনুক দিয়ে কিভাবে খেলনা বা ছবি বানাতে হয় সেসব শেখার জন্য বিনামূল্যে কর্মশালারও আয়োজন করেন। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে তার হোমস্টেতে থাকতে চান অনেকেই।

এভাবে হোম স্টের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন হাইনানের উদ্যোগী নারী চোং সিয়ান।  

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

পশুচিকিৎসা পেশাতে সফল বাই হুয়া

চীনের নিংশিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবিকা মূলত কৃষি ও পশুপালনের উপর নির্ভরশীল। দুর্গম এ অঞ্চলটির প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে মানুষের জীবন কঠিন, সেখানে পশুচিকিৎসা সেবা প্রায়ই অনুপস্থিত। এরকম এক অঞ্চলে সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে পশুচিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বাই হুয়া নামে এক নারী। সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে সূচনা করেছেন নতুন দিনের। 

 

নিংশিয়ার একটি ছোট্ট গ্রামে বেড়ে ওঠেন বাই হুয়া। ছোটবেলা থেকেই ছিল প্রাণীদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। পশুচিকিৎসক পিতার কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বাই হুয়া মনে মনে স্থির করেন তিনি নিজেই গ্রামের পশুদের চিকিৎসা সেবা দেবেন।

 

এরপর স্বপ্ন পূরণে সমাজের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক অনটনের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাই হুয়া পশুচিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি নিংশিয়ার একটি সরকারি পশু হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি নিজ গ্রামে ফিরে পশুদের চিকিৎসা শুরু করেন। গরিব ও অসহায় মানুষদের গৃহপালিত পশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।

 

খুব অল্প সময়ের মধ্যে পশুচিকিৎসক হিসেবে তার দক্ষতা ও পশুদের প্রতি তার সহানুভূতির জন্য খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বর্তমানে পশুর চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ করে গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে পশুদের চিকিৎসা প্রদান করেন এই নারী।

নিংশিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান বাই হুয়া। তিনি বিশ্বাস করেন, পশুদের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব। ইতোমধ্যেই তার কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনে অনেক ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গ্রামে পশুদের রোগের হার কমেছে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

বাই হুয়া পশুদের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন। তিনি গরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, উট এবং অন্যান্য পশুদের টিকা দেওয়া, প্রজনন পরামর্শ প্রদান এবং জরুরী অস্ত্রোপচার করার মতো কাজও করে থাকেন। অসুস্থ কিংবা রোগাক্রান্ত প্রাণীদের চিকিৎসা করার সময় বাই হুয়া সবসময় গোলাপি জ্যাকেট, গ্লাভস পরেন এবং গোলাপি ঔষধের বাক্স ও স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করেন। এর জন্য তিনি ‘গোলাপি ভেট’ নামে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘গোলাপি রং আমার পেশা এবং প্রাণীদের প্রতি আমার অগাধ ভালোবাসার নির্দেশ করে। এই উজ্জ্বল রঙের মাধ্যমে আমি আমার কর্মজীবন ও জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করি।’

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তিনি। পাহাড়ি এলাকার অসংখ্য পশুর জীবন রক্ষা করছেন।

এর জন্য অনেক পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। চীন সরকার তাকে ‘জাতীয় নারী মডেল’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি তিনি চীনের সেরা ‘পশুচিকিৎসক’ খ্যাতিও পেয়েছেন।

বাই তার দৈনন্দিন কাজ এবং চিকিৎসা জ্ঞান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শেয়ার করেন। মূলত পশুচিকিৎসা শিল্পে তরুণদের আগ্রহী করে তুলতেই তিনি তার কাজের মজার বিষয়গুলো সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করছেন।

একজন নারী হিসেবে বাই হুয়া সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে নতুন দিনের সূচনা করেছেন। কেননা একটা সময় পর্যন্ত চীনে পশুচিকিৎসা পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই কম। বাই হুয়ার অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। নারীরাও এখন পশুচিকিৎসা বিজ্ঞানকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। তিনি দেখিয়েছেন, নারীরাও পুরুষদের মতো যেকোনো কাজে সফল হতে পারে।

দেশটিতে পশুচিকিৎসা পেশায় গত কয়েক দশক ধরে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বর্তমানে চীনে পশুচিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী। পশুচিকিৎসা সংক্রান্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। 

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল