‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৬৩
2024-03-27 15:18:07

                           

                             

 

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা। 

 

১. চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের মধ্যে চলছে শিক্ষা সংক্রান্ত আদান-প্রদান

 

ভবিষ্যতে দুই দেশের বন্ধুত্ব কেমন হবে তা অনেকটা নির্ভর করে বর্তমান সময়ে তারুণ্যের সেতুবন্ধনের ওপর। আর সেই বন্ধন তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য দুই দেশের তরুণদের মধ্যে চলছে শিক্ষা সংক্রান্ত আদান-প্রদান। যার অংশ হিসেবে সম্প্রতি ২৪ জন আমেরিকান তরুণ এসেছে চীনে। চীনের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে তারা। এমনকি হুবেই প্রদেশের একটি পাহাড়ের চূড়ায় চীনের ঐতিহ্যবাহী মার্শাল আর্ট থাই ছি’ও শিখতে দেখা গেল তাদের।

 

দক্ষিণ চীনের হুবেই প্রদেশের উতাং মাউন্টেন এলাকায় সম্প্রতি এসেছিল ২৪ মার্কিন তরুণ। চাইনিজ মার্শাল আর্ট থাই ছি’র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তারা। 

 

 

তাওয়িজম চর্চার জন্য খ্যাতি পেয়েছে চীনের উতাং পাহাড়।  থাই ছি নামের প্রাচীন চীনের একটি শরীরচর্চার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এটি, যে চর্চার মানসিক ও স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে অনেক। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের স্টেইলাকুম শহরের হাইস্কুল পড়ুয়ারা উতাংয়ের পাহাড়ের ওপর একটি মন্দির পরিদর্শন করেছিল। সেখানে তারা থাই ছি বিশেষজ্ঞ পেশাদার মার্শাল আর্ট অনুশীলনকারীদের কাছ থেকে নিয়েছে নির্দেশনা। 

 

এখন পর্যন্ত এটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এটি সত্যিই দুর্দান্ত। আরেক ছাত্র মুগ্ধ হয়েছেন চীনের সৌন্দর্যে। তিনি বললেন,‘উতাং পর্বতমালা সত্যিই সুন্দর। উপরের দৃশ্যগুলো আশ্চর্যরকম ছিল। পুরো জায়গাটি সত্যিই উপভোগ করেছি।‘

 

আগামী পাঁচ বছরে ৫০ হাজার তরুণ আমেরিকানকে চীনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন  চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই ওই ২৪ তরুণ ১০ দিনের চীন সফরে আসেন।

 

বাকিদের কেউ কেউ জানিয়েছে , তারা তাদের স্কুলে ফিরে গিয়ে বন্ধুদের বলবে এ অভিজ্ঞতার কথা। এমনকি এই থাই ছি যে দুটি সংস্কৃতির সেতুবন্ধনের কাজ করতে পারে সেটাও বুঝতে পেরেছে তারা।

 

উতাংয়ের একটি স্থানীয় মার্শাল আর্ট সংস্থা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেইলাকুম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি  চুক্তি করেছে। যার অধীনে এটি সেখানকার বয়স্কদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুশীলন করতে শেখাবে। সেই সঙ্গে ওয়াশিংটনের তরুণদের স্থূলতা থেকে শুরু করে মেরুদণ্ডের সমস্যা মোকাবিলা করার ব্যাপারে জানাতে থাই ছি মাস্টারও পাঠাবে ওরা। 

আর এ ব্যাপারে ভীষণ আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রের স্টেইলাকুম শহরের মেয়র রিচার্ড ওয়াল্টার মুরি।

‘আমি যে শুধু অনেক কিছু শিখেছি তা নয়, এখন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪ জন রাষ্ট্রদূত রয়েছে। এই চব্বিশ যুবক তাদের যার যার জায়গায় ফিরে যাবে এবং বন্ধুদের জানাবে। হয়ত আমরা এখানে অচিরেই থাই ছি শুরু করার একটি উপায় বের করতে পারি। হয়ত এটিকে হাইস্কুলে একটি ঐচ্ছিক ক্লাস হিসেবে চালু করতে পারি। আবার এমনও হতে পারে যে বছর একটি থাই  ছি ক্লাস করানো যেতে পারে।‘

 

 

চীনে মার্কিন শিক্ষার্থীদের গ্রুপটি দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌ এবং শেনচেনের বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলো পরিদর্শন করবে।


প্রতিবেদক : ফয়সল আব্দুল্লাহ

সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

২. উহানে চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত

    

 

 

৮ হাজার শূন্যপদ পূরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য উহানে চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গেল সপ্তাহে মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এই চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়।  

 

অপটোইলেক্ট্রনিক তথ্য প্রযুক্তি, নতুন শক্তি এবং বুদ্ধিমান সংযুক্ত যানবাহন , জীবন বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য সহ বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলোতে  চাকরির এই সুযোগগুলো দেয়া হচ্ছে।  

 

 

 

উহান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে অনুষ্ঠিত নিয়োগ ইভেন্টটি হুবেই প্রদেশের ৪ হাজারের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের চাকরি খোঁজার জন্য আকৃষ্ট করে।  

 

 

মেলায় নিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি চালু করা হয়, যাতে চাকরিপ্রার্থীদের সরাসরি কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের পোস্টগুলো পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। যারা ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগ মেলায় যোগ দিতে সক্ষম হয়নি তাদের জন্যও সুযোগ রাখা হয়। এছাড়াও জীবনবৃত্তান্ত তৈরি, কর্মজীবন নির্দেশিকা এবং নীতি পরামর্শ ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তিগত পরিষেবাও দেয়া হয় চাকরি মেলায়। 

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

৩. ঐতিহ্যবাহী হানফু পোশাক প্রাচীন শহরগুলোতে পর্যটন বিকাশের প্রতিনিধিত্ব করে। 

 

 

জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ হান চীনাদের পরিধান করা ঐতিহাসিক পোশাক হানফু। তরুণ চীনাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি। পুনরুজ্জীবিত করছে ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতিকে। এমনকি এই হানফুর হাত ধরে চাঙ্গা হচ্ছে দেশটির পর্যটনও। এমনকি প্রাচীন কিছু শহরে এই ঐতিহ্যের সুবাদে বাড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

 

তরুণদের মধ্যে নতুন ডিজাইনের হানফু পরিধান করা এখন একটি ফ্যাশন প্রবণতা হয়ে উঠেছে। ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের সময় চীনের তরুণরা এখন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতে চায়। আর তাই ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণে যেতে তারা বেছে নিচ্ছে হানফু। 

 

উত্তর চীনের হ্যপেই প্রদেশের ছাংতিং কাউন্টিতেও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করার অন্যতম উপায় হয়ে উঠছে ঐতিহ্যবাহী হানফু।

এ নিয়ে নতুন ব্যবসাও শুরু হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী হানফুর প্রবণতা ঘিরে, মেকআপ, চুলের স্টাইলিং, পোশাক ভাড়া এবং ফটোগ্রাফিসহ প্রসার বেড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবীদের।

 

এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী পোশাকটি পরে ছবি তুলতেও তরুণ পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে বলে জানান এই স্থানীয় ফটোগ্রাফার। 

 

"ওয়ারিং স্টেটস আমলের পোশাকের জনপ্রিয়তা ইয়ান এবং চাও অঞ্চলের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। পোশাকটি একটি ঐতিহাসিক উদ্দেশ্য বহন করে। এখন, অনেক পর্যটক অন্য জায়গা থেকে ছুটে আসেন। আমি আমাদের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আনন্দিত।’

 

প্রাচীন চীনের বসন্ত ও শরতের সময়কালে হ্যপেইকে  "ইয়ান এবং চাও’র দেশ" বলা হতো, কারণ এর উত্তরাঞ্চলে ইয়ান রাজ্যের আধিপত্য ছিল এবং এর দক্ষিণাঞ্চলে চাও রাজ্যের আধিপত্য ছিল। আজ, সেই একই এলাকায় হান, হুই, মানছু, মঙ্গোলিয়ান এবং কোরিয়ানের মতো ৫০ টিরও বেশি জাতিগোষ্ঠীর বাসস্থান। 

 

 ‘আমি মনে করি আমরা এখন যে পোশাকগুলো দেখি তা আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য বহন করে।’

 

 

ঐতিহ্যবাহী হানফু সমন্বিত বিভিন্ন প্রচারণামূলক ভিডিও প্রকাশ করার সুযোগটিও নিয়েছে স্থানীয় পর্যটন বিভাগ। 

ধীরে ধীরে শখ থেকে মূলধারার সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ হানফু। যা এখন চীনাদের উৎসব উদযাপনের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক: ফয়সল আব্দুল্লাহ

 

  

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।  

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী  

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী