‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৬৩
2024-03-26 15:32:14


 

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১।  সাক্ষাৎকার পর্ব- সিনচিয়াংয়ের ধর্মীয় সহাবস্থান মুগ্ধকর

২। রমজান বিশেষ- এক নজড়ে চীনের সি’আনের বড় মসজিদ

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।     

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৬৩তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।      

  

১। সাক্ষাৎকার পর্ব- সিনচিয়াংয়ের ধর্মীয় সহাবস্থান মুগ্ধকর

কবি ও সাংবাদিক আলমগীর রেজা চৌধুরী। তিনি সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং থেকে। চীন ঘুরে বেড়ানো এই বাংলাদেশির অভিজ্ঞতার গল্প থাকছে এ পর্বে-

 

আলমগীর রেজা চৌধুরী

# আমাদের অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি?

আলমগীর- আমি ভালো আছি ।

 

# আপনিতো সম্প্রতি চীন ঘুরে আসলেন। কেমন লেগেছে সিনচিয়াং? কী কী দেখলেন?

আলমগীর-চীন এতো বড় দেশ। এই নয়দিনের সফরে চীনকে আবিষ্কার করা কঠিন। প্রথমমত ভালোলেগেছে চীনের প্রকৃতি, প্রগতি ও প্রযুক্তি। মানুষ ভালোলেগেছে, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সহাবস্থান সেটা ভালোলেগেছ। আমি তো উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে গিয়েছিলাম সেখানে দেখেছি মুসলিমদের পাশাপাশি আরও অনেককে জনগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করে। সবকিছু মিলিয়ে এই ভ্রমণ আমার জন্য উপভোগ্য ছিল। আমার সঙ্গে চৈনিক সভ্যতার প্রেম  বহুদিনের। আমার সাথে এই প্রেম গড়ে দিয়েছিল মাও সে তুং আর লু স্যুন।

#সিনচিয়াংয়ের কোন বিষয়গুলো মুগ্ধ করেছে আপনাকে?

আলমগীর- এখানকার ধর্মীয় সহাবস্থান মুগ্ধকর। আমি ছয়টা মসজিদে নামাজ পড়েছি। অন্তত চার-পাঁচটা মসজিদে নফল নামাজ পরেছি। চীনারা ধর্মীয় বিভাজন বিশ্বাস কোঁরে না। তারা খাদ্য নিরাপত্তাটাকেই প্রথম প্রাধান্য দেয়। চীন এখন পৃথিবীর বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তি।

 

আলমগীর রেজা চৌধুরী

# সেখানকার খাবার সম্পর্কে বলুন। কেমন লেগেছে?

 আলমগীর- আমরা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানকার হোটেলে মোগলাই ডিশ খেয়েছি, সাথে চীনের সবজি। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে ফল। সেখানকার তরমুজ এতো মজা, খুব মিষ্টি। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশে নিয়ে আসি। এছাড়া দেখেছি বিশাল ফলের ক্ষেত। আনার দেখেছি গাছে গাছে ঝুলছে। এগুলো দেশের চাহিদা মেটানোর পর বিদেশে রপ্তানি করা হয়।  চীনাদের জীবনযাপনে কোন নাগরিকের দুঃখ থাকার কথা নয়। রাষ্ট্র যেখানে নিরাপত্তা দেয় সেখানে নাগরিকের দুঃখ কম থাকে।

# আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আলমগীর- আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।  

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম

 

২। রমজান বিশেষ- এক নজড়ে চীনের সি’আনের বড় মসজিদ

চীনের প্রাচীন শহর সি’আনের সবচেয়ে বড় মসজিদ হলো গ্রেট মস্ক অব সি’আন। শায়ানসি প্রদেশের রাজধানী সি’আনের এই মসজিদ নির্মিত হয় ৭৪২ খ্রিস্টাব্দে। তবে এই মসজিদের বেশিরভাগ স্থাপনা গড়ে ওঠে মিং  রাজবংশের শাসনকালের সূচনালগ্নে। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে বিশটির বেশি ভবন রয়েছে, পাঁচটি প্রাঙ্গণ রয়েছে। এটি ৩০ নম্বর হুয়াচুয়ে লেনে অবস্থিত।

 

১২ হাজার বর্গমিটার জায়গা নিয়ে মসজিদ কমপ্লেক্স গঠিত হয়েছে। থাং রাজবংশের শাসনের সময় মসজিদটি প্রথম নির্মিত হলেও এর বিকাশ হয় মিং রাজবংশের সম্রাট হোংউর শাসনকালে। এই মসজিদে এক হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদটি এখনও ব্যবহৃত হয়। তবে এটি শুধু নামাজের স্থানই নয়, এটি সি’আনের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানও বটে।

 

মসজিদ এলাকায় অনেকগুলো প্রাঙ্গন রয়েছে। প্রতিটি প্রাঙ্গণে একটি করে কেন্দ্রীয় ভবন রয়েছে। প্রবেশ তোরণের সঙ্গে রয়েছে বাগান। দেয়ালে ফুল ও লতাপাতার কারুকার্য রয়েছে। আরও রয়েছে ক্যালিগ্রাফি। চীনা ও আরবি দুই ভাষাতেই ক্যালিগ্রাফি রয়েছে। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ক্যালিগ্রাফিতে লেখা রয়েছে।  দ্বিতীয় প্রাঙ্গণে ইস্পাতের উপর খোদাই করা ক্যালিগ্রাফি রয়েছে। এর একটি সং রাজবংশের সময়কার বিখ্যাত হস্তলিপি শিল্পী মি ফু করেছেন, অন্যটি মিং রাজবংশের সময়কার বিখ্যাত শিল্পী  ডং ছিচাং করেছেন।

 

মসজিদের নির্মাণে মধ্যএশিয়ার ইসলামি স্থাপত্য রীতি এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্য রীতির সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় অধিকাংশ প্রাচীন চীনা ভবন উত্তর-দক্ষিণ প্রসারী হয়। কিন্তু এই ভবনটি পশ্চিমমুখী, মক্কায় কিবলা হওয়ার কারণে।  এর ক্যালিগ্রাফিও একটু ভিন্ন। আরবি লিপি যখন চীনা স্টাইলে লেখা হয় তখন সিনি নামে একটি স্টাইল অনুসরণ করা হয়। এখানে সেই স্টাইলটি অনুসরণ করা হয়েছে। এখানের সবচেয়ে উঁচু মিনারটিও মিশ্র স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। মসজিদের ভিতরের কারুকার্য খুব সুন্দর। বিশেষ করে কিবলা দেয়ালে রয়েছে কাঠের প্যানেল কারুকার্য।   

 

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী