‘বিজনেস টাইম’ পর্ব- ৫
2024-03-22 18:47:00

 

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’।

 

এই পর্বে থাকছে:

১. বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক পরাশক্তি হতে চলেছে চীন

২. উন্মুক্ততার পথ প্রশস্ত করতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে মুখিয়ে আছে চীন

৩. চীন বিদেশি বিনিয়োগে বাড়াতে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করছে

 

 

 

 

বিশ্লেষণ পর্ব:

বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক পরাশক্তি হতে চলেছে চীন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলম। চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যমের নেতিবাচক মন্তব্যের বিষয়ে তাঁর মতামত দিয়ে চায়না আন্তর্জাতিক বেতারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।

 

 

ভিন দেশে চীন

এ বছরের মধ্যেই চীন-আসিয়ান ঘিরে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের তৃতীয় সংস্করণের যাবতীয় আলোচনা শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চীনের বাণিজ্য বিষয়ক উপমন্ত্রী ওয়াং শৌয়েন।

চীনের মুক্ত বাণিজ্য সংক্রান্ত নেটওয়ার্কের মান বাড়ানোর জন্য পরিষেবামূলক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক তালিকা সংস্কারেও ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

 

গত বছর চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলভিত্তিক কিছু চুক্তি সম্পন্ন করে। চীনের বাণিজ্য বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার ওয়াং শৌয়েন সম্প্রতি জানান, ইতোমধ্যে ২৯টি দেশের সঙ্গে চীনের ২২টি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ অঞ্চলগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ চীনের মোট বৈদেশিক লেনদেনের এক তৃতীয়াংশের সমান বলেও জানান ওয়াং। 

 

তিনি আরও বলেন, চীন সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে ২০২৪ সালেও এ ধরনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। ওয়াং সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এ বছর মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল নিয়ে আলোচনার একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা রয়েছে চীনের।

 

মুক্ত বাণিজ্য নেটওয়ার্কের বিস্তার

চীন-আসিয়ানের মধ্যবর্তী অবাধ বাণিজ্যিক বিষয়ক তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনা এ সপ্তাহে চীনের হাংচৌতে অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির বাণিজ্য বিষয়ক উপমন্ত্রী ওয়াং শৌয়েন এ বছরের মধ্যে আলোচনাটি শেষ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

চীন ও আসিয়ানের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলটি তৈরি হয়েছিল ২০১০ সালে। রাজস্ব বিভাগের তথ্যানুসারে এ বাণিজ্যে ২০১৩ সাল থেকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে আসিয়ান টানা চর্তুথবারের মতো চীনের সর্বোচ্চ বাণিজ্য অংশীদার হয়েছিল। চীনও টানা বেশ কয়েকবছর আসিয়ানের সেরা বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে।

 

দুই পক্ষ তাদের এ উন্নয়নের ধারা বজার রাখতে ২০২২ নভেম্বর মাসে মুক্ত বাণিজ্যের চুক্তিগুলোর তৃতীয় সংস্করণের জন্য প্রথম আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ সভায় বাণিজ্যিক বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন পণ্য, বিনিয়োগ , ডিজিটাল ও পরিবেশবান্ধব অর্থনীতির বিষয়ে নানা আলোচনা হয়।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে চীন-আসিয়ানের অবাধ বাণিজ্য দুই পক্ষের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে মজবুত করার পাশাপাশি ব্যাপক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটাবে।

 

চীনের সঙ্গে অন্যান্য দেশের আন্তজার্তিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের ধারাকে আরও ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে চীনা-আসিয়ানের অবাধ বাণিজ্যিক ধারার তৃতীয় সংস্করণকে উদাহরণ হিসেবে অনুসরণ করার কথা বলেন চীনের রেনমিন ইউনিভার্সিটির খ্যাতনামা শিক্ষক ওয়াং ইওয়েই।   

 

আসিয়ান ছাড়াও পেরু ও হন্দুরাসের সঙ্গে চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া গাল্ফ করপোরেশন কাউন্সিল, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইজারল্যান্ডের সাথেও বাণিজ্যিক উন্নয়নে কাজ করবে চীন। ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ও ডিজিটাল ইকোনমি পার্টনারশিপের সাথেও একই ধরনের চুক্তি করার বিষয়ে প্রচেষ্টা থাকবে চীন সরকারের। এ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে চীন।

 

উন্নয়নের নতুন অধ্যায়

গত বছর চীনা নিকারাগুয়ার সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও চুক্তি সই করার পদক্ষেপ নেয়। এর মাধ্যমে চীন সম্পূর্ণ নতুন কিছু বিনিয়োগ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো। যা  চীনের অর্থনীতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

সিঙ্গাপুরের সঙ্গে সম্পন্ন হওয়া চুক্তিকে দুই দেশের মধ্যে উন্নয়নের সেতুবন্ধন হিসেবে ব্যক্ত করেন চীনের খ্যাতনামা বাণিজ্য বিষয়ক গবেষক ইউয়ান বো।

গত বছর আরসিইপি তথা রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপভুক্ত দেশগুলোর সাথে চীনের বাণিজ্য ছিল ১২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। বিশ্লেষক বো এর মতে তাই চীন আরসিইপি থেকে যেমন সুবিধা পাচ্ছে, তেমনি এর বড় প্রদায়ক হিসেবেও কাজ করছে।

 

বাণিজ্য বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার ওয়াং শৌয়েন বলেছেন, এ বছরও চীন তার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। এর জন্য  মুক্ত বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনা বাস্তবায়নের জন্য চীন নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। যে তালিকায় আছে শুল্কছাড়যুক্ত পণ্যের বিক্রি বাড়ানো, পরিষেবামূলক বাণিজ্যের প্রসার এবং ডিজিটাল ও সবুজ অর্থনীতি বিষয়ক কার্যক্রম।

 

।। প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

।। সম্পাদনা: শাহানশাহ রাসেল

 

চীন বিদেশি বিনিয়োগে বাড়াতে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করছে:

সম্প্রতি চীন তাদের অর্থনীতিতে জোর দিচ্ছে উচ্চমানের উন্মুক্তকরণে। আর এর জন্য আগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। যে কাজে চীন ইতোমধ্যেই বেশ সফল। এবার সেই বিনিয়োগ যেন আরও উচ্চমানের হয়, আরও উন্মুক্ত হয়, সেটা নিশ্চিত করতে চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলের জেনারেল অফিস একটি কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।

কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ চীনকে আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। যা চীনের অর্থনীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতি সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের গতিকে উন্নীত করবে।

কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, চীনের বিকাশের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। তাদের জোরালোভাবে আকৃষ্ট করতে এবং তাদের ভেতর একটি নতুন উন্নয়ন ধারণা দিতে দরকার একটি বাজার-ভিত্তিক, নীতিবান্ধব এবং আন্তর্জাতিকমানের ব্যবসায়িক পরিবেশ কার্যকর করা।

 

এই কর্মপরিকল্পনার ৫ ক্ষেত্রে ২৪টি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাজার বাড়ানো, বিদেশি বিনিয়োগ আরও আকৃষ্ট করতে নীতির দিকগুলোও শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে এতে।

সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি, দেশি ও বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে উদ্ভাবনের সহযোগিতাকে সহজ এবং বিশ্বমানের করতে নীতিমালার সংষ্কার করার গুরুত্বের কথাও বলা হয়েছে।

চীন সরকার আশা করছে এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

 

।। প্রতিবেদন: শাহানশাহ রাসেল

।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শাহানশাহ রাসেল

 

 

অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান

 

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী