১. চীনা ডেপুটি ই জাতি
২. স্বাস্থ্যখাতে বিশ্বজুড়ে জেন্ডার বৈষম্য
৩. ব্যতিক্রমী পেশায় নারী: টোল আদায়ে বাড়ছে অংশগ্রহণ
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
গ্রাম উন্নয়নে কাজ করছেন ই জাতির নারী ডেপুটি
চীনের সদ্যসমাপ্ত দুই অধিবেশনে গণপ্রতিনিধিরা এসেছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এমনি একজন গণপ্রতিনিধি ছিয়াওচিন শুয়াংমেই। তিনি ই জাতির ঐত্যিবাহী এমব্রয়ডারির একজন ধারক।
চীনে এখন চলছে গ্রাম পুনর্জীবনের ধারা। ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ব্যবহার করে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে জেগে উঠছে গ্রাম তেমনি জাতিগত সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। চীনের ১৪তম জাতীয় গণ কংগ্রেসের একজন ডেপুটি ছিয়াওচিন শুয়াংমেই। তিনি সদ্য সমাপ্ত দুই অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। তিনি ই জাতির নারী। ই জাতির ঐতিহ্যবাহী নকশীকাজকে তুলে ধরছেন।
ছিয়াওচিন শুয়াংমেই বলেন, ‘আমি চাই আরও বেশি মানুষ ই এমব্রয়ডারি বিষয়ে জানুক, বুঝতে পারুক এবং এটার কদর করুক। এভাবে জাতিগত সংস্কৃতিকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই।’
সিছুয়ান প্রদেশের মাবিয়ান ই স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির বাসিন্দা ছিয়াওচিন নিজেও এমব্রয়ডারি বা নকশিকাজে দারুণ দক্ষ। তিনি এই অবৈষয়িক সংস্কৃতির একজন ইনহেরিটর। এনপিসির অধিবেশনে যোগ দিতে বেইজিং আসেন তিনি। সঙ্গে সুটকেস ভর্তি করে আনেন নকশি কাজের নমুনা।
লেশান সিটির মেয়ে ছিয়াওচিন লাইভস্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে তার এমব্রয়ডারি কাজ বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘এই বিশেষ শিল্পগুলোর উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনও বৈচিত্র্যর অভাব আছে। আমাদের কাজ এখন আত্মনির্ভরশীলতা ও উন্নয়নের মাত্রা বৃদ্ধি করা। ’
ই জাতির এমব্রয়ডারি চীনের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় আছে। একে রক্ষা এবং প্রসারের জন্য ২০১৫ সালে ছিয়াওচিন মাবিয়ান কাউন্টিতে চারজন নারীকে নিয়ে একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সমিতির মাধ্যমে তিনি স্থানীয় নারীদের পোশাক ও এমব্রয়ডারি শিল্পে প্রশিক্ষণ দেন। ৮০০ জনের বেশি স্থানীয় নারীকে তিনি তাদের হোমটাউনে থেকেই জীবিকা অর্জনে দক্ষ করে তোলেন। এই নারীরা বছরে ১০ হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করছেন নকশি কাজ থেকে।
তবে নিজের অর্জনে এখনও সন্তুষ্ট নন ছিয়াওচিন। তিনি বলেন,‘ আমরা শেখার জন্য বেইজিং, ইয়ুননান এবং কুইচো গিয়েছি। অতীতে ই এমব্রয়ডারির প্রতি খুব কম মানুষই আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু এখন এগুলো এত জনপ্রিয় যে আমরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করে কুলাতে পারছি না। আমাদের অনেক পণ্য সুভেনির এবং উপহার হিসেবে ব্যবহার হয়। এ ধরনের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোতে আধুনিক উপাদান খুব কম ছিল। তবে এখন ঐতিহ্যকে ধরে রেখেও এর মধ্যে সৃজনশীলভাবে আধুনিক উপাদান যোগ করা হচ্ছে।’
ই জাতির ঐতিহ্যবাহী অলংকার, লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং লোকজ কারুশিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমার পরামর্শ হলো ই এলাকায় অনন্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও কারুশিল্পকে উন্নয়ন করা। যেমন ই জাতির রং করা পণ্য, রুপার অলংকার এবং লোকজ সংস্কৃতিকে উন্নত করে তালিয়াং এবং সিয়াওলিয়াং পার্বত্য এলাকার মানুষের আয় রোজগার বাড়ানো যায়।’
ঐতিহ্যবাহী লোকজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে এভাবেই গ্রামকে জাগিয়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখছেন ছিয়াওচিন। এই সংস্কৃতিকে তিনি পৌছে দিচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের কাছেও।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
স্বাস্থ্যখাতে বিশ্বজুড়ে জেন্ডার বৈষম্য
কীভাবে স্বাস্থ্য ও যত্নের কাজে লিঙ্গ বৈষম্য করা হয় এবং কীভাবে নারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যের ফলাফলগুলোকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে তা ব্যাখ্যা করে ‘স্বাস্থ্য ও যত্নের জন্য ন্যায্য ভাগ: লিঙ্গ এবং স্বাস্থ্য ও যত্নের কাজের অবমূল্যায়ন’ শীর্ষক নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় স্বল্প বিনিয়োগের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে।এতে উঠে এসেছে অবৈতনিক স্বাস্থ্য ও যত্নের কাজের একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে ও মজুরিভিত্তিক শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং লিঙ্গ সমতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
বিশ্বব্যাপী বেতনভোগী বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা কর্মীদের ৬৭ শতাংশই নারী। এই অর্থ প্রদানের কাজ ছাড়াও, এটিতে অনুমান করা হয়েছে যে নারীরা সমস্ত অবৈতনিক সেবা কার্যক্রমের আনুমানিক ৭৬ শতাংশ সম্পাদন করেন।
সম্প্রতি জেনেভা থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে নারীদের দ্বারা পরিচালিত কাজগুলোর বেতন কম এবং কাজের পরিবেশ খারাপ থাকে। কম বেতন এবং চাহিদাযুক্ত কাজের পরিবেশ সাধারণত স্বাস্থ্য ও যত্ন খাতে পাওয়া যায়।
প্রাথমিকভাবে নারীদের দ্বারা সম্পাদিত পরিচর্যার কাজের অবমূল্যায়ন, মজুরি, কাজের পরিবেশ, উৎপাদনশীলতা এবং খাতের অর্থনৈতিক পদচিহ্নকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে যে স্বাস্থ্য ও যত্নের কাজে কয়েক দশকের দীর্ঘস্থায়ী স্বল্প বিনিয়োগ যত্নের ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী সংকটকে বাড়িয়ে তুলেছে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার (ইউএইচসি) দিকে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাড়ে ৪ বিলিয়ন মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার পূর্ণ কভারেজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, নারীরা আরও বেশি অবৈতনিক যত্নের কাজ গ্রহণ করছে। দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষতিকর প্রভাবের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অবৈতনিক স্বাস্থ্য ও যত্নের কাজ যত্নশীলদের স্বাস্থ্য এবং পরিষেবার মানকে আরও চাপে ফেলছে।
ডব্লিউএইচও'র হেলথ ওয়ার্কফোর্সের পরিচালক জিম ক্যাম্পবেল বলেন, 'ফেয়ার শেয়ার' প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে স্বাস্থ্য ও যত্নের কাজে লিঙ্গ-সমতাভিত্তিক বিনিয়োগ স্বাস্থ্য ও যত্নের মূল্যকে পুনরায় সেট করবে এবং ন্যায্য ও আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতিকে চালিত করবে। আমরা নেতা, নীতি-নির্ধারক এবং নিয়োগকর্তাদের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি ।’
প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য ও যত্নের কাজকে আরও ভালভাবে মূল্য দেওয়ার জন্য নীতি ও সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও যত্ন ব্যবস্থায় বিনিয়োগ কেবল ইউএইচসি-র অগ্রগতিকেই ত্বরান্বিত করে না, তারা অবৈতনিক স্বাস্থ্য ও যত্নের কাজকে পুনর্বণ্টন করে। যখন নারীরা বেতনভুক্ত স্বাস্থ্য ও যত্ন কর্মসংস্থানে অংশ নেয়, তখন তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত হয় এবং স্বাস্থ্যের ফলাফল আরও ভাল হয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সব ধরনের স্বাস্থ্য ও সেবার কাজে স্বীকৃতি, মূল্য এবং বিনিয়োগ করতে হবে।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
ব্যতিক্রমী পেশায় নারী: টোল আদায়ে বাড়ছে অংশগ্রহণ
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান ক্রমশ বৃদ্ধি করছে। টোল আদায় ব্যবস্থাও এর ব্যতিক্রম নয়। এক সময় পুরুষদের একচেটিয়া ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত টোল আদায়ে বর্তমানে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে
টোল আদায়ে চীনা নারীদের অংশগ্রহণ দীর্ঘদিনের। প্রাচীনকালে চীনে হান রাজবংশের সময়ে নারীদের টোল গেটে কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত করা হতো। থাং রাজবংশের সময়ও ছিল একই চিত্র। যদিও বিংশ শতাব্দীতে এসে টোল আদায়ের আধুনিকীকরণের পর থেকে কমতে থাকে নারীদের অংশগ্রহণ। তবে বর্তমানে এ পেশায় আবারও যুক্ত হচ্ছেন নারীরা।
চীনের আনহুই প্রদেশের আনছিং এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়কারী হিসেবে কাজ করছেন ইউ চিং। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কাজটি করছেন ২৭ বছর বয়সী এ নারী। এর জন্য তিনি গর্ববোধ করেন।
ইউ চিং মনে করেন, টোল আদায়ের সময় সুন্দর হাসির ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে চীন। সেই সঙ্গে দেশটিতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু। আর এসব অবকাঠামোর টোল আদায়ে ইউ চিংয়ের মতো অসংখ্য নারী কাজ করছেন।
বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, চীনে টোল আদায়কারীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ নারী।
এদিকে বাংলাদেশে টোল আদায়ে নারীরা কাজ করছেন। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা একেবারেই কম।
বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো পদ্মাসেতুর টোল বুথে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে কোথায় নারীদের টোল প্লাজায় দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলীরা।
২০২৩ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে টোল আদায়কারীদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ নারী।
সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং নারীদের ক্ষমতায়নের ফলে, টোল আদায়ে নারীদের অংশগ্রহণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। টোল আদায়ে নারীদের অংশগ্রহণ সমাজের জন্য এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। নারীদের ক্ষমতায়ন ও সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে এর ভূমিকা অপরিসীম, যা কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ ও সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল