এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। বিশ্বের যত বৈচিত্র্যপূর্ণ চায়না টাউন
২। রমজান বিশেষ- এক নজড়ে চীনের নানছ্যং মসজিদ
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৬২তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। বিশ্বের যত বৈচিত্র্যপূর্ণ চায়না টাউন
পর্যটকরা যেখানেই যান না কেন, তাদের কাছে বড় আকর্ষণ হয়ে থাকে সেখানকার চায়না টাউন। সেখানে শুধু রং আর বৈচিত্র্যের ছড়াছড়ি। এখানে ভ্রমণকারীরা জেনে নিন বিশ্বের সবচেয়ে রংচংয়ে কয়েকটি চায়না টাউনের খবর।
সিঙ্গাপুর
আধুনিক শহরে প্রাচীনের বসতি মিলিয়ে অসাধারণ এক স্থান সিঙ্গাপুরের চায়না টাউন।
দেশটির চায়না টাউনে চীনারা প্রথম বসতি স্থাপন করে। এখানে রয়েছে চাইনিজদের সেই প্রথম দিককার কিছু প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্যে পূর্ণ স্থাপনা, ফুড স্ট্রিট, রাতের বাজার আর সংস্কৃতির বৈচিত্র্য। এখানকার কিছু অংশ সিঙ্গাপুরের জাতীয় ঐতিহ্য হিসাবে স্থান করে নিয়েছে।
সিঙ্গাপুরের চায়না টাউন
মেলবোর্ন
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের চায়না টাউনটি কিন্তু বিশ্বের প্রাচীনতম চায়না টাউন। ভিক্টোরিয়ার গোল্ড রাশের সময়কার শহর এটি। সেই ১৮৫৪ সালের দিকে গড়ে ওঠে।
এখানেই দেখতে পাবেন বিশ্বের দীর্ঘতম ড্রাগন মিলেনিয়াম দাই লুং ড্রাগন। এটি ১০০ মিটার লম্বা। চাইনিজ নিউ ইয়ার প্যারেডে ড্রাগনটিকে জীবন্ত করে তোলেন ২০০ জন মানুষ।
মেলবোর্নের চায়না টাউন
কুয়ালা লামপুর
মালয়েশিয়ার রাজধানীতে রয়েছে আরেকটি নজরকাড়া চায়না টাউন। এখানে মূল্যবান খনিজ সম্পদের খোঁজে যে চাইনিজরা এসেছিলেন তারা ১৮৫০ সালের দিকে এই টাউন গড়ে তোলেন।তারাই বনের বসতি থেকে স্থানটিকে টিনের খনিজ শিল্পাঞ্চলে পরিণত করে। ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মূল অংশ তারাই। মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে তাদের অবদান অসামান্য। স্থানীয়ভাবে চায়না টাউনটি পেতালিং স্ট্রিট বা জালান পেতালিং নামে পরিচিত। রাতের বাজার, খাবার আর রংচংয়ে দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত এক স্থান।
কুয়ালা লামপুরের চায়না টাউন
টরেন্টো
কানাডার টরেন্টোতে রয়েছে এই চায়না টাউন। চাইনিজদের জন্য রয়েছে এখানে ৭টি চায়না টাউন। ১৯৬০ এর দিকে মূল চায়না টাউন গড়ে তোলা হয় এখানে। পরে এই শহরটি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায়। ১৯৮০ এর দিকে গ্রেটার টরেন্টো অঞ্চলের চাইনিজরা স্কারবোরো, মিসিসাউগা, রিচমন্ড হিল, মারখাম আর নর্থ ইয়র্কে ছড়িয়ে পড়েন। প্রতিটি টাউন তার আপন বৈশিষ্ট্যে অনন্য।
টরেন্টোর চায়না টাউন
নিউ ইয়র্ক
আমেরিকার এই চায়না টাউনটি গড়ে তোলেন ম্যানহাটান লোয়ার ইস্ট সাইড থেকে আসা চাইনিজরা। ১৯ শো শতকের শেষের দিকে তারা আসতে শুরু করেন। ১৯৮০ সালের দিকে এটি হয়ে ওঠে এশিয়ার বাইরের বৃহত্তম চায়না টাউন। এলমহার্স্ট আর কুইন্সেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে চাইনিজদের শহর। এভিনিউ ইউ এবং ব্রুকলিনের এইটথ এভিনিউ হয়ে ক্রমবর্ধমান চায়না টাউন কিন্তু ম্যানহাটানের প্রায় সমান হয়ে গেছে।
নিউ ইয়র্কের চায়না টাউন
কলকাতা
কলকাতার টেরেটি বাজার বললে কেউ হয়ত চিনতে নাও পারে, কিন্তু চায়না টাউন বললে যে কেউ চিনতে বাধ্য৷ বলা যায় বিশুদ্ধ চীনা খাবারের খনি কলকাতার চায়না টাউন। চীনা রীতি রেওয়াজ মেনে এমন কি চীনে যে ধরণের মশলা দিয়ে বিভিন্ন খাবার রান্না করা হয় সেই ধরণের মশলা ব্যবহার করে এই রেস্তোরাঁগুলোতে খাবার পরিবেশন করেন চীনা রাঁধুনিরা।
কলকাতার চায়না টাউন
এই এলাকার রেস্তোরাঁগুলোতে চাউমিন চিলি চিকেন সঙ্গে পাওয়া যায় পিকিং রোস্টেড ডাক, গ্যাং ব্যাং চিকেন, স্প্রিং রোল, ডামপ্লিংস-এর মতো চিনা খাবার। এই খাবারগুলি খেতে কলকাতা সহ কলকাতার আশেপাশের অঞ্চল থেকে চায়না টাউনে প্রতিদিন ভিড় জমান বহু মানুষ।
বর্তমানে চায়না টাউনে প্রায় ২০০০ চীনা মানুষ বাস করেন। আগে এই সংখ্যাটা ছিল অনেক বেশি। জনসংখ্যা কমে গেলেও চাউমিন, চিলি চিকেন, সেজোয়ান চিকেন, মাঞ্চুরিয়ান, হুননান চিকেন কিংবা রাইস নুডুলসের আসল স্বাদ চেখে দেখার কথা উঠলেই প্রথমেই আসে চায়না টাউনের কথা। খাবারে স্বাদ শুধু দারুণ নয় দামের দিক থেকেও এই অঞ্চলের রেস্তোরাঁগুলো যথেষ্টই পকেট বান্ধব।
ক্যালিফোর্নিয়া
ক্যালিফোর্নিয়ার চায়না টাউন
উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া্সার সান ফ্রান্সিসকো শহরে রয়েছে আমেরিকার প্রাচীনতম চায়নাটাউন। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সমৃদ্ধ চীনের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে এই এলাকাটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীনা অভিবাসী জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশের আবাসস্থল ক্যালিফোর্নিয়ায়।পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের আদি বাড়ি চীনে।
থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের চায়না টাউন
থাইল্যান্ডের ব্যাংকক চায়নাটাউন বিশ্বের বৃহত্তম চায়নাটাউন। যদিও বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে চায়না টাউন। তবে ব্যাংককের এই চায়নাটাউন মন কাড়বে যেকারোর। সেরা এই চায়নাটাউনে ঘুরতে আসে দেশ বিদেশের পর্্যটকরা । চীনের ঐতিহ্যবাহী নানা খাবার, পোশাক, ও সংস্কৃতির সাথে কিছুটা জানার সুযোগ হয় এখানে আসলে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
২। রমজান বিশেষ- এক নজড়ে চীনের নানছ্যং মসজিদ
চীনের ইয়ুননান প্রদেশের কুনমিং শহরে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ বসবাস করেন। এরা মূলত হুই জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। কুনমিং শহরে অনেক মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো নানছ্যং মসজিদ। এটি চীনের অন্যতম প্রাচীন মসজিদও বটে। নানছ্যং মসজিদ প্রথম নির্মিত হয় থাং রাজবংশের সময়। ৬১৮ থেকে ৯০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চীনে থাং রাজবংশের শাসন ছিল।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে মসজিদ ভবনের অনেকবার সংস্কার হয়েছে। মিং ও ছিং রাজবংশের শাসনকালে মসজিদ ভবনের আঙ্গিকে অনেকবার অনেকরকম পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই মসজিদ ভবনের বড় বৈশিষ্ট্য হলো এখানে চীনা মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী ও মধ্যএশিয়ার স্টাইলের গম্বুজের সমন্বয় ঘটেছে। বৌদ্ধ স্থাপত্য শৈলীর তোরণ ও বাগান রয়েছে। চীনের সকল মসজিদের মতো এটিও পশ্চিমের কিবলামুখী।
১৯৯৬ সালে মসজিদের বর্তমান কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়। ২৫৫৭ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে মসজিদ ভবন। প্রধান স্থাপনাগুলো হলো ছাওচেন হল, সুয়ানলি টাওয়ার বা মিনার এবং মুসলিম ভবন। ছাওচেন হল ভবনটি তিনতলা। ১২০০ বর্গমিটার এলাকা। হলের সামনে চাইনিজ স্টাইলে প্রাঙ্গণ বা কোর্টইয়ার্ড রয়েছে। প্রাঙ্গণের উত্তর ও দক্ষিণ উভয়দিকেই কক্ষ আছে। প্রাঙ্গণের পূর্বদিকে মুসলিম ভবন। নয়তলা মুসলিম ভবনের আয়তন ৫৮০০ বর্গমিটার। সুয়ানলি মিনারের উচ্চতা ৯ মিটার। সবুজ রঙের গম্বুজটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর।
এই মসজিদে ইসলাম বিষয়ক বইয়ের সমৃদ্ধ সংগ্রহ আছে। মসজিদটির আশপাশেই রয়েছে হালাল খাবারের বাজার। কাছাকাছি হুই মুসলিম জাতির অনেক মানুষ বাস করেন। এখানে রোজার সময় ইফতারির বাজারও জমে ওঠে। কুনমিং শহরের প্রাণকেন্দ্রে উহুয়া জেলায় ১৮ নম্বর চেংই রোডে মসজিদের অবস্থান।
এখানে কাছেই রয়েছে শপিং কমপ্লেক্স। নানছ্যং মসজিদ দেখতে গেলে রোজার দিনে বেড়ানো, কেনাকাটা, ইফতার এবং নামাজ আদায় সবই সম্ভব। অমুসলিমরাও মসজিদটি দেখতে আসেন তার স্থাপত্য শৈলীর সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী