‘হৃদয় পাস’ ব্যবহার করে বাগদাদের ‘পরিবহন সীমাবদ্ধতা’ অতিক্রম করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান
2024-03-18 16:02:35

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের কেন্দ্রীয় এলাকা নিসুর স্কোয়ারের পাশে দুটো ক্রেন ৩০ মিটার লম্বা ও ৩১ টন ওজনের প্রিফেব্রিকেটেড বিম নতুন নির্মিত স্তম্ভের ওপরে রাখছে। মার্চ মাসে বাগদাদের ভোর কিছুটা ঠাণ্ডা। কিন্তু নির্মাণসাইটে প্রাণবন্ত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

একই সময় ট্রান্সটেক ইন্টারন্যাশনাল-নির্মিত নিসুর ত্রিমাত্রিক যাতায়াতের সংযোগস্থল প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক কুও শিয়াওওয়ে নিরাপত্তা হেলমেট পরে, হাতে নকশা ধরে গার্ডার তোলার প্রতিটি পদক্ষেপের অগ্রগতি দেখছেন।

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার পর বাগদাদের সড়ক অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়। দীর্ঘকাল ধরে যে যানজট পরিস্থিতি ছিল, তাতে স্পষ্ট কোনও উন্নতি হয়নি।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে নিসুর ত্রিমাত্রিক যাতায়াতের সংযোগস্থল প্রকল্প শুরু হয়। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পে রয়েছে সেতু, রাজপথ, রেলপথ, সুড়ঙ্গ ও আন্ডারপাস টানেলের ৪-স্তর কাঠোমো। এর মধ্যে ২৪ মিটার‌ পর্যন্ত গভীরে কাজ হবে । প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবার পর বাগদাদের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের যানজট ও শব্দদূষণ দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর জন্য আন্ডারপাস টানেলের ৪টি স্তর ‘২ এলিভেটেড+৫ সুড়ঙ্গ’ ত্রিমাত্রিক পরিবহন সমাধান পরিকল্পনা উত্থাপন করা হয়। কুও শিয়াওওয়ে জানান, তারা শল্যচিকিত্সকের মতো রাজধানীর পরিবহনের ‘হৃদয়ে’ ‘হৃদয় পাস’ করার মাধ্যমে বাগদাদের ‘পরিবহন সীমাবদ্ধতা’ অতিক্রম করছে।

এছাড়া নিসুর প্রকল্পের নিকটবর্তী পুরনো ভূগর্ভস্থ ইউটিলিটি ও তার পরিবর্তন ও সংস্কার করা হবে। কাজ সম্পন্ন হবার পর নিকটবর্তী অঞ্চলের পৌরসভার জনসেবা সক্ষমতা উন্নীত হবে এবং কার্যকরভাবে স্থানীয় জীবিকা উন্নত হবে।

ঠিকা পাওয়া, সমন্বয় ও যোগাযোগ এবং খসড়া চুক্তি প্রণয়ন করা......চীনে পড়াশোনা করা ইরাকি প্রকৌশলী ইব্রাহিম প্রকল্পের নির্মাণসাইটে ব্যস্ততার সাথে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এ রকম ব্যস্ত কিন্তু পরিপূর্ণ অনুভূতি পছন্দ করি। এখানে আমি চীনের আধুনিক সেতু নির্মাণ প্রযুক্তি দেখতে পাচ্ছি এবং চীনা মানুষদের বন্ধুত্ব, পরিশ্রম ও ক্ষমাসুন্দর নৈতিকতা উপলব্ধি করতে পারছি।”

আধুনিক নকশা, নির্মাণ প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের কারণে ইরাকের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিসুর প্রকল্প পরিদর্শন করেন। ট্রান্সটেক ইন্টারন্যাশনাল ৩শ’র বেশি স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। চীনারা বলে, ‘একজন মানুষকে মাছ দেওয়ার চেয়ে মাছ ধরতে শেখানো উত্তম’। আমরা আশা করি, নিসুর প্রকল্প কেবল ইরাকের পৌরসভার পরিবহন প্রকল্পের উদাহরণই তৈরি করবে না, বরং দেশটির জন্য আরও বেশি স্থানীয় দক্ষ কর্মী লালন করবে, চীনা প্রযুক্তি উর্বর জমিতে এনে আরও ভালোভাবে ইরাকের যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনে সহায়তা দেবে।”

বিকেল পাঁচটার দিকে বাগদাদের সন্ধ্যায় যানজট শুরু হয়। রাইড-হেলিং ড্রাইভার লতিফ নিসুর ছেদে অপেক্ষা করার সময় মোবাইল  ফোন দিয়ে নির্মাণসাইটের একটি ছবি তুলেছেন।

“এখানে বাগদাদের সবচেয়ে জানজটপূর্ণ রোড। আমি জানি, চীনা প্রতিষ্ঠান আমাদের জন্য একটি বিশাল ত্রিমাত্রিক পরিবহন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার দিনটির অপেক্ষায় আছি। চীনা নির্মাণের প্রতি আমাদের আস্থা পরিপূর্ণ।” কথা বলতে বলতে লতিফ ছবিটি সামাজিক তথ্যমাধ্যমে পোস্ট করছিলেন। তিনি বিশেষ করে ‘চীনা নির্মাণ” লিখেছেন এবং একটি ‘লাইক” চিহ্নও দিয়েছেন। (প্রেমা/রহমান)