সম্প্রতি চীনা যুবক-যুবতীদের মধ্যে ‘নাইট স্কুল’ খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রথমে কিছু পরিসংখ্যানের ওপর দৃষ্টি দেবো। চীনের চিয়াংসু প্রদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় ৫০০টিরও বেশি নাইটস্কুলে ৪ হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণী ভর্তি হয় এবং ৯টি কোর্সের সবকটি আসন পূর্ণ যায়। উ হান শহরের প্রথম অলাভজনক যুব নাইটস্কুল চালু হওয়ার পর থেকে তরুণদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং ৩৮২টি কোর্সের ওপর নজর রাখছেন ৬ লাখ ৫০ হাজার নেটিজেন। ‘দিনে কাজ করুন, রাতে ক্লাসে যান’- এ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে চীনা বৈশিষ্ট্যময় নাইটলাইফের একটি নেমকার্ড হয়ে উঠেছে।
রাতের ক্লাস বা নাইট স্কুল নতুন নয়। শিল্প বিপ্লবের সময়ে এর উদ্ভব। কাজ এবং শেখার মধ্যে সমন্বয় করে শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নত করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় সান্ধ্য বিদ্যালয়। বিংশ শতাব্দীর ২০-এর দশকের গোড়ার দিকে শ্রমিকদের সাংস্কৃতিক স্তরের উন্নতি এবং তারপরে তাদের শ্রেণির চেতনাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রাথমিক পার্টি সংগঠনগুলো শ্রমিকদের নাইট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে সাক্ষরতা, পাটিগণিত ও উত্পাদন প্রযুক্তি থেকে শুরু করে, ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে হেয়ারড্রেসিং, টেইলারিং ও পেশাদার শিক্ষা পর্যন্ত, তারপর ২১ শতাব্দীর শুরুতে মাইক্রোকম্পিউটার ও একাধিক বিদেশী ভাষা ... নৈশ বিদ্যালয় বা নাইট স্কুল সমস্ত প্রজন্মের তরুণদের নতুন জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করেছে।
একশ বছর পর আজকের নাইট স্কুলগুলো আর ঐতিহ্যবাহী চাকরির সাথে আবদ্ধ নয়। ৮ ঘন্টাব্যাপী কাজের বাইরে তরুণদের জীবন আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সোস্যাল যোগাযোগ প্লাটফর্মে ‘নাইট স্কুল’ খুঁজলে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে নানা বৈচিত্র্যময় কোর্স চালু করা হয়েছে। সংগীত, ক্যালিগ্রাফি, তৈলচিত্র, কেক বেকিং, সূচিকর্ম এমনকি বক্সিং পর্যন্ত রয়েছে কোর্সের তালিকায়।
আধুনিক সমাজে নাইটস্কুলে পেশাগত স্থান এবং সরঞ্জাম যোগানো হয় এবং শহরবাসীদের মধ্যে যাদের একই ধরনের আগ্রহ বা সখ আছে, তাদেরকে যোগাযোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
কোনো কোনো তরুণ নাইটস্কুল প্রতিষ্ঠাকে স্ব-কর্মসংস্থানের চ্যানেল হিসেবে নির্ধারণ করেন, কোনো কোনো তরুণ নাইটস্কুলকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ খুঁজে পাওয়ার আশা পোষণ করেন।
তা ছাড়া, কোনো কোনো প্রশিক্ষণ সংস্থা রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘নাইস্কুল প্রকল্প তরুণদের দক্ষতা বিকাশ এবং বিভিন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।’
নানা কারণে তরুণতরুণীরা নাইট স্কুলে ভর্তি হন। তাদের বৈচিত্র্যময় চাহিদার কারণে নাইটস্কুলের বড় বাজার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
তা ছাড়া, নাইট স্কুল অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বাঁচিয়ে রাখার জন্যও নতুন চিন্তাধারা যুগিয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী চীনা চা তৈরির কৌশল এবং এ সম্পর্কিত রীতিনীতি বিশ্বমানের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে, কিন্তু প্রতিদিনের চা পান করার এখনও সাংস্কৃতিক স্বাদ নেই। অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বিষয়ক বেইজিংয়ের একটি নাইটস্কুলের জনৈক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কোর্স সবেমাত্র অনলাইনে প্রকাশের পর সব আসন বিক্রি হয়ে গেছে। এটি খুব জনপ্রিয় হয়েছে।’
অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট পর্যটন বা পরিদর্শনের তুলনায় নাইটস্কুলের কোর্সের মাধ্যমে আরো বেশি লোকের জানাশোনা গভীরতর হবে এবং বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।