সিচাংয়ের জন্মানুষ্ঠান (২)
2024-03-13 12:42:54



এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও সিচাং-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর সিচাং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিচাং নিয়ে কথা বলব।

 

শিশুর জন্মের তৃতীয় দিনে (মেয়েদের জন্য চতুর্থ দিন), তিব্বতি ভাষায় ‘ফাংস্য’ নামের একটি জন্মানুষ্ঠান (তিব্বতি ভাষায় ‘ফাংস্য’ মানে ‘নোংরা" এবং ‘স্য’ মানে ‘নির্মূল’) আয়োজিত হয়। তিব্বতিরা বিশ্বাস করে যে, যখন একটি শিশু মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন সে অনেক নোংরা ও দুর্ভাগ্য সাথে করে নিয়ে আসে। এই দুর্ভাগ্য যদি দূর করা না হয়, তবে শিশুর জন্য তা ক্ষতিকর হবে। ‘ফাংস্য’ অনুষ্ঠানটি শিশুর ময়লা অপসারণ এবং শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি কামনা করার জন্য আয়োজিত হয়।

 

‘ফাংস্য’ অনুষ্ঠানের দিন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা উপহার নিয়ে আসেন। ঘরে প্রবেশ করার সময়, তাদের প্রথমে মা ও শিশুকে হাদা দিতে হবে, মাকে টোস্ট করে চা ঢালতে হবে; তারপর নবজাতকের দিকে তাকাতে হবে। শিশুকে কিছু শুভ ও আশীর্বাদমূলক শব্দ বলতে হবে। শিশুরা সাধারণত এক মাস বয়সের আগে বাইরে যায় না।

 

শিশুর বয়স এক মাস হওয়ার পরে, ‘কুওতুন’ তথা শিশুর বাইরে যেতে শুরুর অনুষ্ঠানটি একটি শুভ দিনে আয়োজিত হয়। সেই দিন, মা ও শিশু তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে বাইরে বের হয় এবং প্রথমে বুদ্ধের পূজা করতে মন্দিরে যায়। বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বদের কাছে প্রার্থনা করে, যাতে শিশু অসুস্থতা ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায় এবং সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে। তারপর শিশুকে নিয়ে ধনী ও অধিক সন্তানসন্ততি আছে—এমন পরিবারে নিয়ে যাওয়া হয়। আশা করা হয় যে, শিশুটিও ধনী হবে ও সুখি ও বড় পরিবার গড়ে তুলতে পারবে।

 

একটি শিশু যখন প্রথমবার বাইরে যায়, তখন শিশুর নাকের ডগায় পাত্রের কালি লাগানোর রেওয়াজ রয়েছে। এটি শিশুকে ভূতের আছর থেকে রক্ষা করবে বলে বিশ্বাস করে তিব্বতিরা।

আজকাল, তিব্বতের শহর ও গ্রামীণ এলাকায় চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবাও দ্রুত বিকশিত হয়েছে। তিব্বতি নারীরা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের যত্ন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছেন। গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রসবোত্তর যত্ন সম্পর্কে অনেকেই সচেতন। শিশুমৃত্যুর হার তাই অনেক কমেছে। শহুরে মহিলারা সাধারণত গর্ভাবস্থায় নিয়মিত বা অনিয়মিত চেক-আপের জন্য হাসপাতালে যান। তাদের বেশিরভাগই হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন। কৃষি ও পশুপালন এলাকায় বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতাল বা চিকিত্সা সংস্থা  রয়েছে, যারা জনসাধারণকে বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা দিয়ে থাকে। কৃষিকাজ এবং পশুপালন এলাকার মহিলারা সন্তান প্রসবের জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে যান বা বাড়িতে সন্তান প্রসবের জন্য ডাক্তারকে আমন্ত্রণ জানান।

 

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ঊর্মি/আলিম)