‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৬১
2024-03-12 15:04:07


 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। পর্যটনের ‘গেস্টহাউজ’ ধারণা বদলে দিয়েছে চীনের গ্রামীণ অর্থনীতি

২। বেইজিংয়ের পুরনো পথে

৩। অসাধারণ স্থপত্যে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে চীনের চায়ের দোকান

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।     

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৬১তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।      

 

১। পর্যটনের ‘গেস্টহাউজ’ ধারণা বদলে দিয়েছে চীনের গ্রামীণ অর্থনীতি

‘গেস্টহাউজ’ শুনলেই মনে হতে পারে, বেশ খরুচে একটা পরিপাটি থাকার ঘর। আশপাশের পর্যটন পটভূমির সঙ্গে যার নেই সরাসরি কোনো সম্পর্ক। তবে এ ধারণা বদলে যাচ্ছে চীনের গ্রামীণ অর্থনীতির কারণে।

চীনের হেবেই প্রদেশের নানইউ গ্রামে গেলে দেখা যাবে গ্রামীণ পরিবেশে সেখানকার ঘরবাড়িতেই পর্যটকদের জন্য আয়োজন করা হয় থাকা-খাওয়ার। আর তখন অবসর কাটানোর বাড়িটাও হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে। গত ৯ বছর ধরেই পর্যটকরা এখানে আসছেন স্থানীয় ঘরগুলোতে থাকার অভিজ্ঞতা পেতে।

২০১৬ সালে লাইশোয়ে স্থানীয় সরকারের সহযোগিতা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বদলে যেতে থাকে গ্রামের চেহারা। প্রাকৃতিক পরিবেশে অবসর যাপনের সঙ্গে আছে গ্রামীণ খাবারের সমারোহ।

তবে এর জন্য বাড়িঘরে আনতে হয় কিছু পরিবর্তন। বদলে ফেলা হয় ভেতরের ডিজাইন। কিছু আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়ায় নান্দনিক হয়ে ওঠে পুরনো বাড়িগুলো। উন্নত মান ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত তৈরি করা হয় ১৫টি গুচ্ছ অতিথিশালা।

আর এভাবেই ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে নানইউ গ্রামটি। এখন এখানে এক রাত থাকার জন্য অতিথিদের দিতে হয় আড়াই হাজার ইউয়ান। তাতেও ভিড় কমেনি বরং বেড়েছে। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, ছুটির দিনে এখানে একটি কক্ষ পাওয়াই দুঃসাধ্য।

এ গ্রামের বাসিন্দা সাই চিংলান। ৪ নম্বর অতিথিশালার ব্যবস্থাপক তিনি। এ গ্রামে তিনি এখন পরিচিতি পেয়েছেন ‘সিস্টার সাই’ নামে। তার মতো এমন ব্যবস্থাপক আছেন আরো ৩০ জন। এদের সবাই গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। হাতেকলমে প্রশিক্ষণ শেষে নিয়োগ পান তারা। অতিথিশালার ব্যবস্থাপকের এমন চাকরিতে ভাগ্যের বদল হয়েছে সাইয়ের মতো বহু নারীর।

সাই চিংলান জানান, কঠিন একটি সময়ে আশার আলো হয়ে আসে এই বোনাভিলা প্রকল্প। এ গ্রামে মোট বাড়িঘরের সংখ্যা ২২২টি। এর মধ্যে ১৭৬টিই ছিল দরিদ্র কবলিত। সদস্যদের বাৎসরিক আয় ছিল ১৬০০ ইউয়ানেরও কম।

এ গ্রামে বেড়ে ওঠা দুয়ান চুনটিং ১৯৯৯ সালে গ্রাম প্রধানের দায়িত্ব পান। এর পরই তিনি গ্রামের দারিদ্র বিমোচনে কাজ শুরু করেন। তিনি জানান, প্রায় ১ দশকের চেষ্টায় চায়না ফাউন্ডেশন পরিচালিত বোনাভিলা প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটান তিনি।

এ প্রকল্পের লক্ষ্যই ছিল গ্রামের লোকদের গ্রামে রেখে দারিদ্র্য দূর করা। আর এ কাজে দুয়ান চুনটিং বেছে নেন গ্রামীন পর্যটনে নতুন ধারণা। তা থেকেই আসে বোনাভিলা প্রকল্প।

করোনাসহ বৈশ্বিক নানা সংকট ভয় দেখিয়েছে ক্ষুধা-দারিদ্র্যের। ক্ষুধামুক্ত হওয়ার নিরন্তর সংগ্রামে আশা জাগিয়েছে নানা দেশের নানা উদ্যোগ। এমনই এক আশা সঞ্চারি প্রকল্প চীনের ‘বোনা ভিলা’। এমন প্রকল্প হতে পারে যে কোন দেশের জন্য দারিদ্র্য বিমোচনের প্রেরণা।

 

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

 

২। বেইজিংয়ের পুরনো পথে

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের রয়েছে অনেক হুথোং। এগুলো হলো পুরনো শহরের গলিপথ। ছোট ছোট রাস্তা ও লেন। এসব স্থানে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য প্রাচীন চীনের পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়।

বেইজিংয়ের এমনি একটি গলিপথ হলো ছিনলিয়াং হুথোং। এটি তোংছেং জেলায় অবস্থিত। পূর্বদিকে তোংসি নর্থ স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম দিকে ইস্ট ডাফো টেম্পল স্ট্রিট পর্যন্ত বিস্তৃত এই হুথোং। এই হুথোংয়ের কাছেই লংফু হসপিটাল। এই হুথোংয়ের পূর্বদিকে তোংছেং জেলা প্রশাসনের অফিস অবস্থিত।

ইয়ুয়ান রাজবংশের সময় এই হুথোং গড়ে ওঠে। ১২৭১ থেকে ১৩৬৮ সাল পর্যন্ত বেইজিংয়ে ইয়ুয়ান রাজবংশের শাসন ছিল। তখন এখানে কয়েকজন অভিজাত মানুষের বসবাস ছিল। পরবর্তিকালে মিং রাজবংশের সময় এখানে বেশ কয়েকজন অভিজাত মানুষের বসবাস গড়ে ওঠে। এখানে একটি তোরণও গড়ে তোলা হয়। তখন এর নাম ছিল ছিয়ানথাং হুথোং। মিং রাজবংশের শাসন চলে ১৩৬৮ থেকে ১৬৪৪ সাল পর্যন্ত।

এরপর ছিং রাজবংশের সময় এখানে বাওছুয়ান ব্যুরো সাউথ ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হয়। ছিনলিয়াং শব্দের মানে হলো টাকা ও খাবার সরবরাহ। এখানে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও রেশন দেয়া হতো। এই সরকারি ভবনটি এখন একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে ছিনলিয়াং হুথোংয়ে রয়েছে পুরানো আমলের বেশকিছু বড় বাড়ি। ভবনগুলোর সামনে রয়েছে চীনা ঐতিহ্যবাহী রীতিতে  তৈরি আঙিনা বা কোর্টইয়ার্ড। এখানে চেরিফুলের শোভা দেখতে পাবেন।

এখানে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে বেইজিংয়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়। রয়েছে হটপট খাওয়ার রেস্টুরেন্ট। জাপানিজ খাবারের একটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে এখানে। একটি বারবিকিউ রেস্টুরেন্টও খুব বিখ্যাত।

বেইজিংয়ের হুথোং দেখার জন্য বসন্তকাল হলো সবচেয়ে সুন্দর সময়। বর্তমানে এখানে দেখতে পাবেন চেরিফুরের শোভা। পুরনো দিনের বেইজিংয়ের নাগরিক জীবনের আমেজ অনুভব করতে হলে চলে যেতে পারেন এই হুথোংয়ে।

 

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম 

 

৩। অসাধারণ স্থপত্যে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে চীনের চায়ের দোকান

নানা রঙ-বেরঙের আলোয় জ্বলজ্বল করছে বাঁশের ঘর। দুই বছর পর আবার যেন নতুন করে সেজেছে শাংহাইয়ের হেলৌ সুয়ান নামের ঘরটি।

 

শাংহাইয়ের সোংচিয়াং জেলার শহরতলির ফাংথা পার্কটি ডিজাইন করেছেন চীনের আধুনিক স্থাপত্য, নগর পরিকল্পনা এবং ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফং চিচং। 

২০২৩ সালে শাংহাইয়ে স্থাপত্য ঐতিহ্যের সুরক্ষায় অসামান্য উদাহরণ প্রকল্প হিসাবে এর নামকরণ করা হয় হেলৌ সুয়ান । আর এর নামকরণ করেন স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ।

বাঁশের তৈরি এই ঘরটি প্রথম নির্মাণ করা হয় ১৯৮৬ সালে। ৫১০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই ঘরটির দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ৮ মিটার এবং প্রস্থ ১৪ দশমিক ৫ মিটার। আধুনিক স্থাপত্যের এই ঘরের ছাদটি তৈরি করা হয়েছে ইয়াংজি নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ বাড়ির ছাদের আদলে।

১৯৯৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে, সাংহাইয়ের অসামান্য স্থাপত্য নকশার জন্য এই ঘরটিকে ব্রোঞ্জ পুরস্কার এবং আধুনিক চীনা স্থাপত্য নকশার একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক হিসাবে স্বীকৃতি দেয় পৌর সরকার।

বর্তমানে এই চায়ের দোকান চাপ্রেমী ও পর্যটকদের আকর্ষনীয় পর্যটন গন্তব্য। দিনের বেশিভাগ সময়ই পর্যটনমুখর হয়ে থাকে দোকানটি।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী