চীনের বার্ষিক জাতীয় দুই অধিবেশন বিশ্বের কাছে চীনকে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জানালা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য, চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণ, পররাষ্ট্রনীতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্র ছাড়াও, এটি বহির্বিশ্বকে চীনের শাসন-প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ দেয়।
“শুধুমাত্র সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে এবং তৃণমূলের কণ্ঠস্বর শোনার মাধ্যমে আমাদের প্রস্তাব ও পরামর্শের গুরুত্ব থাকতে পারে।” চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য এবং ইনার মঙ্গোলিয়া এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের নির্বাহী উপ-মহাপরিচালক জাং লি ওয়েন, একটি নতুন শক্তি বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যবস্থা নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। গত বছরের জাতীয় দুই অধিবেশনে, জাং লিওয়েন একটি ফটোভোলটাইক শিল্পের সবুজ রূপান্তর অর্জনের জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবটি সিপিপিসিসি’র জাতীয় কমিটির একটি প্রধান প্রস্তাব হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। গত এক বছরে, "নতুন শক্তি শিল্পের পুনর্নবায়নযোগ্য সম্পদ পুনর্ব্যবহার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকে ত্বরান্বিত করার” প্রকল্প নিয়ে সিপিপিসিসি’র জনসংখ্যা সম্পদ ও পরিবেশ কমিটি ৫টি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে এবং একটি বিশেষ কর্মগ্রুপ গঠন করেছে। তারা ৭টি প্রদেশ ও শহরের ৩০টিরও বেশি উদ্যোগ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে জরিপ পরিচালনা করেছে এবং জাং লিওয়েন পুরো প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন। "শুধুমাত্র তৃণমূল স্তরে গিয়ে এবং গভীর তদন্ত ও গবেষণা পরিচালনা করার মাধ্যমে আমরা সত্যিকার অর্থে পরিস্থিতি বুঝতে পারি এবং একটি অর্থপূর্ণ প্রস্তাব করতে পারি।"
জাং লি ওয়েনের মত ২১০০ জনেরও বেশি সিপিপিসিসি’র সদস্য সারা দেশ থেকে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরামর্শ দিতে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে বেইজিংয়ে জড়ো হয়েছেন।
কোন দেশের প্রতিষ্ঠান এবং শাসন ব্যবস্থা এমনি এমনি হয় না, তাদের অবশ্যই ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক উত্স থাকে। চীনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রাচীন চীন জনগণের ভূমিকা এবং ক্ষমতা সম্পর্কে খুব আগে থেকেই সচেতন ছিল। জনগণকেন্দ্রিকতাকে শাসনের মূল বিষয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল এবং জনগণের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ ও সামগ্রিক স্বার্থকে শাসনের মৌলিক সূচনা বিন্দু হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল। এই মানুষ-কেন্দ্রিক চিন্তার প্রতিফলন প্রাচীন ক্লাসিক যেমন "শাংশু", "লুন ইয়ু” এবং "জুওজুয়ান"-এর মত গ্রন্থে প্রতিফলিত হয়। "উন্নয়ন জনগণের জন্য, উন্নয়ন জনগণের উপর নির্ভর করে, এবং উন্নয়নের ফল জনগণই ভাগ করে নেয়" বলে জোর দেওয়া হল প্রাচীন জন-কেন্দ্রিক প্রজ্ঞার উপর ভিত্তি করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক উদ্ভাবন, এবং এটি উত্তরাধিকার ও উন্নয়ন।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, চীনা শৈলীর সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের একটি অনন্য অংশ হল পরামর্শমূলক গণতন্ত্র। এটি গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ যেখানে জনগণ সকল বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে এবং প্রধান সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা। এটি ৭৫ বছর ধরে নতুন চীনে অনুশীলন করা হয়েছে। নির্বাচনী গণতন্ত্র এবং পরামর্শমূলক গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ হল চীনা শৈলীর সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যায়, চীনের সকল স্তরে গণকংগ্রেস প্রতিনিধি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ এবং জনগণের তত্ত্বাবধানে থাকে। উত্পাদন ও সেবার প্রথম সারির সিনিয়র টেকনিশিয়ান, নতুন শিল্পের কর্মী, গ্রামাঞ্চলে শিকড় গাড়া "নতুন কৃষক", গ্রামের কর্মকর্তা... চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রায় ৩০০০ প্রতিনিধি ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি চীনা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে প্রস্তাব, ভোট, নির্বাচন, ইত্যাদি অধিকার প্রয়োগ করে।
একই সময়ে, চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী, শ্রেণী ও সেক্টর থেকে আসেন, গণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জাতীয় শাসনে অংশগ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রীয় বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। "গণকংগ্রেস গণতন্ত্র" এবং "পরামর্শমূলক গণতন্ত্র" দুই অধিবেশনে একে অপরের পরিপূরক এবং এটি চীনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
জাতীয় দুই অধিবেশনের আগে, স্থানীয় সম্মেলনগুলো প্রথমে কাউন্টি-পর্যায়ে, শহর-পর্যায় এবং প্রাদেশিক-পর্যায়ের দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের মতামত, পরামর্শ এবং দাবি সংগ্রহ করে জাতীয় দুই অধিবেশনে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়। কাজেই দুটি অধিবেশনের প্রতিনিধিদের প্রস্তাবগুলো ব্যাপকভিত্তিক এবং জনগণের কাছে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয়গুলোই প্রতিফলিত করতে পারে।
চীন বিশাল জনসংখ্যা এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির একটি দেশ। এর মানে হল যে যদি মাত্র ১০% মানুষ একটি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে, তবুও ১৪০ মিলিয়ন মানুষ এটির বিরোধিতা করে। সত্যিকারের মানুষ-কেন্দ্রিক দেশ হতে, আমরা ১০ শতাংশের কণ্ঠকে উপেক্ষা করতে পারি না। তাই, চীন জনগণের অত্যাবশ্যক স্বার্থ জড়িত বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি সাধারণ ভোটদান পদ্ধতির বিজয়ী-সব-পাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে না। বরং, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এবং সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের সময়, চীন ব্যাপকভাবে জনমতকে আমলে নেয় এবং জনগণের জ্ঞানকে সমন্বিত করে। বিভিন্ন পরামর্শের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, এবং সামাজিক ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। যার মাধ্যমে নির্বাচনী গণতন্ত্রের ত্রুটিগুলি দূর করা যায় এবং দলগত যুক্তিবাদী রাজনৈতিক অংশগ্রহণ প্রসারিত করা যায়।
গণতন্ত্র কোন সাজসজ্জা নয়, এটি সাজানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় না, এটি জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহৃত হয়। গত বছরের উদাহরণ হিসেবে, চীনের জাতীয় পরিষদের বিভিন্ন বিভাগ জাতীয় দুই অধিবেশন থেকে পাওয়া ১২ হাজারটিরও বেশি পরামর্শ ও প্রস্তাবের প্রক্রিয়া করেছে। বিভিন্ন বিভাগ প্রতিনিধি সদস্যদের দেওয়া প্রায় ৪৭০০টি মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করেছে এবং ২ হাজারটিরও বেশি প্রাসঙ্গিক নীতি ও ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। যার মাধ্যমে কার্যকরভাবে চীনের অর্থনীতির উচ্চ-মানের উন্নয়ন এবং সামাজিক ও জনগণের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করেছে। উপরন্তু, জাতীয় দুই অধিবেশন প্রতিষ্ঠিত "মন্ত্রী চ্যানেল", "প্রতিনিধি চ্যানেল" এবং "সদস্য চ্যানেল"-এর মাধ্যমে জনগণের প্রশ্নের উত্তর দিতে, প্রধান জাতীয় নীতি সম্পর্কে সন্দেহ দূর করতে এবং জনসাধারণের সাথে যোগাযোগ ও সংলাপের চ্যানেলগুলি প্রসারিত করতে পেরেছে।
বিশ্ব বৈচিত্র্যময়, এবং গণতন্ত্রের বিকাশ কোনভাবেই পশ্চিমা মডেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক দেশ তাদের জাতীয় অবস্থার সাথে মানানসই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পথ অন্বেষণ করছে। চীনের দুটি অধিবেশনের মাধ্যমে, বিশ্ব চীনের গণতন্ত্রের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরিচালন প্রক্রিয়া বুঝতে পারে, চীনের গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং চীনের উন্নয়ন ও অগ্রগতির রহস্য বুঝতে পারে।
(স্বর্ণা/হাশিম/ছাই)