আমাদের গ্রামের অবস্থা সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিংকে জানাতে পারাটা খুবই সম্মানের বিষয়। এ কথাটি বলেছেন জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রতিনিধি, চিয়াং সু প্রদেশের চাং চিয়া কাং শহরের ইউং লিয়ান গ্রামের সিপিসি সম্পাদক উ হুই ফাং।
৫ মার্চ, চতুর্দশ জাতীয় গণকংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন চলাকালে চিয়াং সু প্রদেশের প্রতিনিধি দলের পর্যালোচনায় অংশ নেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং ওই সময় সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিংয়ের কাছে নিজের গ্রামের অবস্থা তুলে ধরেন উ হুই ফাং।
উ হুই ফাংয়ের কথা শুনে সি চিন পিং হেসে বলেন, অভিন্ন সমৃদ্ধির গ্রাম পুরুজ্জীবন পথে আপনারা অগ্রদূত। আপনারা পথে চলার অভিজ্ঞতা সবার আগে অর্জন করেছেন। অভিন্ন সমৃদ্ধি এগিয়ে নিয়ে সবাইকে চীনা বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের পথে যেতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট সি ইউং লিয়ান গ্রামের উচ্চ প্রশংসা করেন।
ইউং লিয়ান গ্রামকে কিংবদন্তি গ্রাম বলা হয়। তার উন্নয়নের গল্প ৫০ বছরের ধারাবাহিকতার গল্প।
ইয়াংসি নদীর তীরে অবস্থিত ইউং লিয়ান গ্রাম। এটিও চাং চিয়াং কাং শহরে সবচেয়ে ছোট, কম লোকসংখ্যার দরিদ্র একটি গ্রাম। ১৯৭৮ সালে ইউং লিয়ান গ্রামের মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ছিল ৬৮ ইউয়ান এবং গ্রামের ঋণ ৬০ হাজার ইউয়ান। এ অবস্থা কীভাবে পরিবর্তন করা যায়?
১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ইউং লিয়ান গ্রামের প্রথম সিপিসি সম্পাদক উ তুং চাইর নেতৃত্বে স্থানীয়রা মত্স ও ছোট প্রক্রিয়াকরণ কারখানাসহ নানা ব্যবস্থা করে প্রথম বারের মতো আয়-উপার্জন করে। তার সব ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি ২ লাখ ইউয়ান উপার্জন করে। গত শতাব্দীর ৮০’র দশকে চীনের গ্রামাঞ্চলে কারখানার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ইউং লিয়ান গ্রামও আরও এগিয়ে যেতে গ্রামে ঢালাই - কারখানা খোলে। ৪ মাসের চেষ্টায় ৩ লাখ ইউয়ান বিনিয়োগের এ কারখানা চালু হয়। ওই সময় ইস্পাত বারের মতো কাঁচামালের সরবরাহ কম ছিল বলে ইউং লিয়ান গ্রাম দ্রুত ধনী গ্রামে পরিণত হয়।
কিন্তু ১৯৯৭ সালে এশিয়ায় আর্থিক সংকটের কারণে ঢালাই - কারখানা কঠিন অবস্থায় পড়ে। স্টিলের বিলেট, ইস্পাতের চেয়ে বেশি দামী বলে যত বেশি উত্পাদন হয় তত বেশি ক্ষতি হয়। উ তুং চাই ইস্পাত তৈরির প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। ৩৪১ দিনের মধ্যে ইউং লিয়ান গ্রাম ইস্পাত তৈরি করতে সফল হয়। ওই বছর কোম্পানির সম্পদ ১৬০ কোটি ইউয়ান থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪০০ কোটি ইউয়ানে।
২০০২ সালে ইউং লিয়ান ইস্পাত কোম্পানি তৃতীয় বারের মতো শেয়ারহোল্ডিং সংস্কার করা হয় এবং এবার উ তুং চাই আবার বিশেষ একটি সিদ্ধান্ত নেন। তিনি গ্রামকে ২৫ শতাংশ শেয়ার দেন।
পরে ঠিক এ শেয়ারের কারণে ইউং লিয়ান গ্রাম বিশেষ একটি উন্নয়ন পথে চলে, তা হল গ্রাম ও কোম্পানির সমন্বিত উন্নয়ন।
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, অবসরপ্রাপ্ত একজন সৈনিক উ হুই ফাং বড় শহরের ভাল জীবন ছেড়ে ইউং লিয়ান গ্রামে ফিরে আসেন এবং তিনিও গ্রামের নতুন নেতা হন।
তদন্ত ও গবেষণার করার পর উ হুই ফাং ইউং লিয়ান গ্রামের জন্য আধুনিকায়ণের নতুন রূপরেখা তৈরি করেন। তার উদ্যোগে ৭ বছরে, ৪০০ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগের আধুনিক গ্রাম নির্মাণ প্রকল্প চালু হয়।
সিপিসির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে ইউং লিয়ান গ্রাম দ্রুত উন্নয়নের পথে চলছে। ২০২৩ সালে গ্রামে শিল্প ও কৃষি আয় হয়েছে ১৬১ বিলিয়ান ১০০ মিলিয়ন ইউয়ান। গ্রামের ব্যবসার আয় ৩৩.৫ কোটি ইউয়ান এবং গ্রাম বাসিন্দার মাথাপিছু নিট আয় ৭৩ হাজার ইউয়ান।
মানুষের ওপর নির্ভর করে ইউং লিয়ান গ্রাম শিল্পের নেতৃত্বে শহরায়ন এগিয়ে নেওয়া এবং গ্রামের আধুনিকায়ন বাস্তবায়নের নতুন পথ খুঁজে পায়। তা গ্রাম পুরুজ্জীবনের ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
এখন ৪০০ হেক্টর নতুন শিল্প জোন, ইউং কাং কোম্পানি, ৬৬.৭ হেক্টর আবাসিক এলাকা ইউং লিয়ান ডাউন, ৫৩৩ হেক্টর আধুনিক কৃষি জোন নিয়ে গঠিত হয়েছে ইউং লিয়ান গ্রাম। চীনে আধুনিক গ্রামের সুন্দর দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে গ্রামটি।
(শিশির/হাশিম/লিলি)