বিজ্ঞানবিশ্ব-পর্ব ৬১
2024-03-11 16:30:43

৬১তম পর্বে যা থাকছে:

 

* কার্বন ডাইঅক্সাইডকে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা তৈরি

 

* পাণ্ডার বাদামী রঙের কারণ খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

 

* মাইনাস ৬০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম ব্যাটারি আবিষ্কার

 

 

কার্বন ডাইঅক্সাইডকে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা তৈরি

 

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার পাশাপাশি কার্বন ডাইঅক্সাইডকে প্রয়োজনীয় রাসায়নিকে রূপান্তর করতে সক্ষম এমন একটি ইলেক্ট্রোলাইসিস সিস্টেম তৈরি করেছে চীনা-নেতৃত্বাধীন একদল বিজ্ঞানী। এই সিস্টেমটির বিভিন্ন সরঞ্জামগুলোও স্থায়ী ও উচ্চতর রূপান্তর দক্ষতা সম্পন্ন।

 

 

সিস্টেমটি কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় সাহায্য করবে এমন নয়, বরং বিপজ্জনক লেড-অ্যাসিড ব্যাটারিগুলোর বর্জ্যগুলোকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলবে।

 

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল নেচার জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। হুয়াচোং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চায়না বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দীর্ঘ পাঁচ বছর চেষ্টার পর এ সিস্টেমটি আবিষ্কার করেছেন।

 

গবেষক দলটি জানিয়েছে, এ পদ্ধতিতে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে ফর্মিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করা হয়। পদ্ধতিটি ৯৩ শতাংশেরও বেশি রূপান্তর দক্ষতাসহ কমপক্ষে টানা ৫ হাজার ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে সক্ষম। এ প্রক্রিয়ার প্রধান এজেন্ট হলো ক্ষারীয় ফিডস্টক। এটিকে ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত বাই প্রোডাক্টগুলো রূপান্তর এবং ইলেক্ট্রোলাইসিস সরঞ্জামগুলোর স্থায়িত্বে বিরূপভাবে প্রভাব ফেলে।

 

গবেষক দলের প্রধান শিয়া বাওয়্যু জানান, আগের প্রযুক্তিগুলোর তুলনায় আমাদের নতুন প্রক্রিয়াটির বড় সাফল্য হলো এটি সমস্যার সমাধান করেছে।

 

নতুন আবিষ্কৃত এ ব্যবস্থাটি বিশ্বকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে কার্বন নিরপেক্ষ হতে সাহায্য করবে তবে এ প্রক্রিয়ার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে, আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

 

চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে অবস্থিত হুয়াচোং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শিয়া আরও জানান, উচ্চ রূপান্তর দক্ষতা এবং সরঞ্জামের স্থিতিশীলতার এ ব্যবস্থাটি আগের তৈরি একই ধরনের ব্যবস্থাগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে থাকবে।

 

ফর্মিক এসিড রাসায়নিক, জ্বালানি এবং কৃষি খাতে ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে পশুখাদ্য সংরক্ষণ কিংবা চামড়া তৈরিতে কাজে লাগে এটি। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারিকেও আরও ভালোভাবে রিসাইকেল তথা নবায়ন করা যেতে পারে।

 

চায়না ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশন অব পাওয়ার সোর্সের মতে, চীনে সরকারিভাবে বিপজ্জনক বর্জ্য হিসেবে স্বীকৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি। দেশটিতে প্রতিবছর প্রায় ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন ব্যবহৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির বর্জ্য উৎপাদিত হয়।

 

বিশ্বের বৃহত্তম লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদনকারী দেশ চীন। এসব ব্যাটারি দেশটির বৈদ্যুতিক বাইক এবং গাড়ীতে স্পার্ক সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহার শেষে এসব পরিত্যক্ত ব্যাটারিগুলোর সীসা ও অ্যাসিড মাটি, পানি ও বাতাসে মিশে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাতে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে দেশটি। তবে নতুন এ ব্যবস্থার ফলে পরিবেশ রক্ষার ব্যয় সংকুচিত করার পাশাপাশি নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

পাণ্ডার বাদামী রঙের কারণ খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

জায়ান্ট পাণ্ডার শরীরের রঙের ব্যাপারটি জীববিদ্যার একটি বহু পুরোনো রহস্য। সম্ভবত এ রকম দেখতে স্তন্যপায়ী প্রাণী দ্বিতীয়টি নেই। সম্প্রতি চীনা প্রাণীবিজ্ঞানীদের একটি দল জায়ান্ট পাণ্ডার এরকম অস্বাভাবিক বাদামী এবং সাদা রঙের লোমের জন্য জিনগত কারণ খুঁজে পেয়েছেন। গবেষণাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালেও প্রকাশ করা হয়েছে।

 

বিশ্বে প্রথম বাদামী রঙের জায়ান্ট পাণ্ডার দেখা মেলে ১৯৮৫ সালে উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানশি প্রদেশের ছিনলিং পর্বতমালায়। ওই পর্বতমালায় দেখতে পাওয়া সকল পাণ্ডার ছবি তোলা হয়েছিল। যার সবগুলোই ছিল বাদামী রংয়ের। এরপর থেকে বিজ্ঞানীরা এই রঙের তারতম্য কীভাবে ঘটে সে সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে আসছেন।

চীনের বিজ্ঞান একাডেমির অধিভুক্ত প্রাণীবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা তিনটি বাদামী পাণ্ডার পরিবারের পাশাপাশি কালো এবং সাদা রঙের আরও ২৯টি পাণ্ডার জিনোম সিকোয়েন্স করেছেন। পাশাপাশি তারা পাণ্ডার লোম ও জন্মগত বৈশিষ্ট্যগুলোও বিশ্লেষণ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেস-২ নামক এক ধরনের জিনের কারণে পাণ্ডার লোমের রং বাদামী হওয়ার জন্য দায়ী। চীনের দক্ষিণ প্রান্তের বনে এই লাল পাণ্ডার বাস। খুব জোরে জোরে চীৎকার করে বলে এদেরকে সহজেই দেখা যায়। এরা সম্পূর্ণরূপে উদ্ভিদভোজী। লাল পাণ্ডা তাদের শরীরের ওজনের ৪৫ ভাগেরও বেশি ওজনের খাবার খেয়ে থাকে। দিনে প্রায় ২ লাখ বাঁশের পাতা এরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

মাইনাস ৬০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম ব্যাটারি আবিষ্কার

উচ্চ-শক্তি সম্পন্ন একটি নতুন ধরনের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তৈরি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। এই ব্যাটারিটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি মাইনাস ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও কাজ করতে পারে। এর ফলে যেসব অঞ্চলে তুষারপাত কিংবা প্রবল শীত পড়ে সেসব অঞ্চলে ইলেকট্রিক যানবাহন এবং অন্যান্য ডিভাইসের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সক্ষম হবে এই ব্যাটারি।

চীনের বিজ্ঞান একাডেমির তালিয়ান ইন্সটিটিউট অব কেমিক্যাল ফিজিক্সের গবেষক দল এই ব্যাটারিটি তৈরি করেছেন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়ও ২৬০ ওয়াট-আওয়ার প্রতি কিলোগ্রামের মতো উচ্চ মাত্রার শক্তি ধারণ করতে পারে এটি। অর্থাৎ ব্যাটারিটি তার ওজনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করতে পারে, যা কঠিন পরিবেশে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

তালিয়ান ইন্সটিটিউটের ক্যাটালাইসিস বিষয়ক স্টেট ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক চেন চোংওয়েই জানান, এই ব্যাটারিটি অসাধারণ কর্মক্ষমতা দেখিয়েছে। চরম শীতল পরিবেশেও এটি ৮০ শতাংশের বেশি কর্মক্ষমতা দেখিয়েছে। এ সময় তারা বিরূপ পরিবেশে ৫০০ শতাধিক চার্জ দিয়ে ব্যবহার করে পরীক্ষা করেছেন।

এটি তৈরি করতে গিয়ে গবেষকরা প্রথম দিকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। যদিও পরে তারা এসব সমস্যার সমাধান করে এই সাফল্য অর্জন করেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের একটি যৌগিক ইলেক্ট্রোলাইট তৈরি করেছেন গবেষকরা, যা কম তাপমাত্রায় ব্যাটারির মধ্যে আয়ন প্রবাহকে সচল রাখে। এছাড়াও তারা একটি নতুন সেমি-সলিড ইলেক্ট্রোলাইট এবং একটি মাল্টি-লেয়ার কম্পোজিট ইলেক্ট্রোড কাঠামো এ ব্যাটারিতে যুক্ত করেছেন।

অধ্যাপক চেন চোংওয়েই আরও জানান, উচ্চ শক্তি সম্পন্ন বিশেষ এ ব্যাটারিগুলো অত্যন্ত ঠাণ্ডায়ও ধারাবাহিকভাবে কাজ করার পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। আর এটি সম্ভব হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির কারণে

ব্যাটারিটি প্রথাগত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিগুলোর তুলনায় একেবারেই নিরাপদ। এটিতে কোনও ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। বিশেষ করে লিক হয়ে আগুন জ্বলে উঠার মতো ঝুঁকি একেবারে নেই বললেই চলে। প্রাথমিকভাবে এ ব্যাটারিতে তরল ইলেক্ট্রোলাইট ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে নতুন নকশায় একটি স্বতন্ত্র সেমি-সলিড ইলেক্ট্রোলাইট ব্যবহার করা হয়েছে, যা তরল উপাদান কমিয়ে অগ্নি প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

এমনকি উচ্চ তাপমাত্রায়ও আগুন বা বিস্ফোরণের ঝুঁকি নেই এ ব্যাটারিতে। চেন আরও জানান, ইলেকট্রিক গাড়ি এবং শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি এই ব্যাটারিগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম। এর মধ্যে রয়েছে বিমান চলাচল, মহাকাশ এবং মেরু অঞ্চল অনুসন্ধান।

গবেষণা দলটি বর্তমানে এ ব্যাটারির কর্মক্ষমতা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তারা পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাটারি তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছে, যা আরও বিস্তৃত তাপমাত্রার মধ্যে স্থিতিশীলভাবে কাজ করবে। এবার তাদের লক্ষ্য হলো মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে স্থিতিশীলভাবে কাজ করতে সক্ষম ব্যাটারি তৈরি করা।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী