দেহঘড়ি পর্ব-৬১
2024-03-10 19:10:43

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং ভেষজের গুণ নিয়ে আলোচনা ‘হারবাল হিলিং’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা আছে টিসিএমে

অস্টিওপোরোসিস হলো ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত একটি রোগ। বয়স্ক মানুষ, বিশেষ করে বয়স্ক নারীদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। যেসব বয়স্ক পুরুষ বহুদিন যাবৎ স্টেরয়েড ওষুধ গ্রহণ করছেন তাদের এবং রজঃনিবৃত্তি হয়েছে এমন নারীদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া যারা অলস জীবন যাপন করেন, পরিশ্রম কম করেন এবং যারা অনেক দিন ধরে আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন তাদেরও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অস্টিওপোরোসিস হলে হাড় এতোটাই দুর্বল হয়ে যেতে পারে যে, সামান্য চাপ দিলে বা এমনিই সেটা ভেঙ্গে যায়।

অস্টিওপোরোসিসের প্রচলিত চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি বা টিসিএম অস্টিওপরোসিসের ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধে একটি অভিনব দৃষ্টিভঙ্গি এনেছে।

টিসিএমে অন্যান্য রোগের মতো অস্টিওপরোসিসকেও শরীরের অত্যাবশ্যক শক্তি বা ‘ছি’র মধ্যে ভারসাম্যহীনতার একটি প্রকাশ হিসাবে দেখা হয়। টিসিএম অনুশীলনকারীরা প্রতিটি রোগীর উপসর্গ ও শারীরিক গঠন মূল্যায়নের মাধ্যমে ভারসাম্যহীনতার ধরন সনাক্ত করেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেন। জানিয়ে দিচ্ছি অস্টিওপরোসিসের বিভিন্ন ধরনের টিসিএম চিকিৎসা সম্পর্কে:

আকুপাংচার: টিসিএম চিকিৎসার অন্যতম পদ্ধতি আকুপাংচার। অস্টিওপরোসিসের ক্ষেত্রে কিডনি, লিভার ও প্লীহার সাথে সংশ্লিষ্ট মেরিডিয়ান বিন্দুগুলোতে আকুপাংচার দেওয়া হয়। এর লক্ষ্য থাকে রক্তসঞ্চালনকে উদ্দীপিত করা, ব্যথা উপশম করা এবং হাড়ের টিস্যু তৈরি করা আর তার মধ্য দিয়ে ‘ছি’ প্রবাহে ভারসাম্য আনা। এসব বিন্দুতে আকুপাংচার হাড় শক্তিশালী করে এবং ক্ষয় রোধ করে।

ভেষজ ওষুধ: অস্টিওপরোসিস চিকিৎসায় টিসিএম ভেষজ ফর্মুলেশনরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আকুপাংচারের পরিপূরক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অস্টিওপরোসিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ভেষজগুলোর মধ্যে সাধারণত থাকে ইউকোমিয়ার ছাল (তু চোং) এবং ড্রাইনারিয়া রাইজোম (কু সুই বু)। এ ভেষজগুলো হাড়-মজবুত করার বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এগুলো কিডনিকে পুষ্ট করে, লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্ত সঞ্চালনকে শক্তিশালী করে আর এর মধ্য দিয়ে অস্টিওপোরোসিস সারতে অবদান রাখে।

ডায়েট: অস্টিওপরোসিসের টিসিএম চিকিৎসায় পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার হাড়ের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। উপরন্তু, টিসিএমের ডায়েট-নীতি শরীরের ভিত্তি মজবুত করে। বোন ব্রথ বা হাড়ের ঝোল, সবুজ শাক এবং সামুদ্রিক খাবারও অস্টিওপরোসিস সারাতে ভালো কাজ করে।

জীবনধারা: হাড় সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে টিসিএমে জীবনধারার ওপর বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অস্টিওপরোসিসের টিসিএম চিকিৎসায় থাই চি এবং ছিকংয়ের মতো ব্যায়াম সুপারিশ করা হয়। কারণ এগুলো রক্ত সঞ্চালন উন্নীত করে, নমনীয়তা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। পাশাপাশি অত্যধিক কঠোর ব্যায়াম বা অতিরিক্ত পরিশ্রমকে নিরুৎসাহিত করা হয়। কারণ এটি ‘ছি’ কমিয়ে দিতে এবং ভারসাম্যহীনতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

মন-দেহের ভারসাম্য: সুস্থতার জন্য টিসিএমে মন ও শরীরের আন্তঃসংযোগকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। মানসিক চাপ ও অশান্তি অস্টিওপরোসিস বাড়িয়ে তুলতে পারে। ধ্যান, মননশীলতা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল টিসিএম চিকিৎসা পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য উপাদান, যা চাপের মধ্যেও মানসিক শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

পূর্ব চীনের অন্যতম সেরা চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়-অধিভুক্ত হাসপাতাল

চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অব মেডিসিনের প্রথম অধিভুক্ত হাসপাতাল চীনের পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। অত্যাধুনিক চিকিৎসা, যুগান্তকারী গবেষণা এবং রোগীদের যত্নের প্রতিশ্রুতির জন্য বিখ্যাত এই হাসপাতালটি অবস্থিত চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরে। প্রায় ৮ দশক আগে ১৯৪৭ সালে স্থাপিত এ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানটি কেবল চীনের মধ্যে বিখ্যাত নয়, এর খ্যাতি রয়েছে বর্হিবিশ্বেও।

চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়-অধিভুক্ত হাসপাতালে অসাধারণ সমন্বয় ঘটেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন চিকিৎসা বিভাগে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাজীবীদের। কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্তরিকতা, সততা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এ হাসপাতালের লক্ষ্য হলো উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা, গবেষণার মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা জ্ঞান অর্জন করা এবং পরবর্তী প্রজন্মের চিকিৎসা পেশাদাজীবীদের প্রশিক্ষিত করা।

সত্তরটিরও বেশি ক্লিনিকাল বিভাগ ও বিশেষায়িত কেন্দ্র এবং প্রখ্যাত চিকিৎসক, সার্জন ও গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত এর বিশেষজ্ঞ কর্মীদল রয়েছে এখানে। সব মিলিয়ে এখানে কর্মরত ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী। তাঁদের মধ্যে আছেন জ্যেষ্ঠ পেশাজীবী টাইটেলধারী ৪৪৩ জন এবং সহযোগী জ্যেষ্ঠ টাইটেলধারী ৬৭৫ জনের বিশেষজ্ঞ। পাশাপাশি আছেন চীনের প্রকৌশল একাডেমির ২ জন শিক্ষাবিদ, ৩ জন জাতীয় বিশিষ্ট ‘তরুণ পণ্ডিত’, ৪ জন বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং ৬ জন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ।

হাসপাতালটি কার্ডিওলজি, অনকোলজি, নিউরোলজি, অর্থোপেডিক্সসহ এবং বিভিন্ন শাখায় বিস্তৃত চিকিৎসাসেবা দেয়৷ সাতটি ক্যাম্পাসের সমন্বয়য়ে গঠিত ৫ হাজার শয্যার এই হাসপাতাল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সদরদপ্তর ক্যাম্পাস, ছিনছুন ক্যাম্পাস, চিচিয়াং ক্যাম্পাস এবং ছিয়ানথাং ক্যাম্পাস।

এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করে, স্বাস্থ্যসেবার জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেকারণে হাসপাতালটি বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যসেবা, গবেষণা ও স্বাস্থ্যশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা ও বিনিময়ের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা, একাডেমিক আদান-প্রদান ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটি জ্ঞান ভাগাভাগি করছে, নিজেদের দক্ষতাকে সমৃদ্ধ করছে এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য উদ্যোগে অবদান রাখছে।

 

#হারবাল_হিলিং

চাইনিজ ইয়ামে আছে নানা গুণ

চাইনিজ ইয়াম বা চীনা কচু তরকারি হিসাবে খাওয়া হয় সাধারণত। তবে নানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতার জন্য ভেষজ হিসাবেও এর বেশ কদর রয়েছে। জানিয়ে দিচ্ছি চাইনিজ ইয়ামের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে:

হজমে সাহায্য করে: চাইনিজ ইয়ামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, যা হজমে সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম এবং সামগ্রিক হজম স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চীনা ইয়ামে হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এ কারণে এটিকে ডায়াবেটিক-বান্ধব খাবার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: চাইনিজ ইয়াম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। তাই নিয়মিত এ খাবার খেলে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয় এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

প্রদাহ উপশম করে: চাইনিজ ইয়ামে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সেকারণে এটি আর্থ্রাইটিস, প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ এবং অন্যান্য প্রদাহজনক রোগ সারতে সাহায্য করে।

হার্ট সুস্থ রাখে: চাইনিজ ইয়ামে চর্বি ও কোলেস্টেরল কম থাকে, যার কারণে এটিকে হৃদযন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে মনে করা হয়। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

মেনোপজের উপসর্গ উপশম করে: চাইনিজ ইয়াম দেহের মূল শক্তি বা ‘ছি’র ঠাণ্ডাশক্তি ইয়িনকে পুষ্ট করে এবং হরমোনে ভারসাম্য আনে। আর এর মধ্য দিয়ে এ ভেষজ মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত উপসর্গ যেমন হট ফ্লাশ বা পেটে হঠাৎ অনুভূত তাপ, রাত্রিকালীন ঘাম ও ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ পরিবর্তনের উপশম করে।

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।