সংবাদ পর্যালোচনা: বিশ্বকে একটি সুস্পষ্ট সংকেত পাঠিয়েছে ওয়াং ইর সংবাদ সম্মেলন
2024-03-08 15:30:11

মার্চ ৮: চীন বিশ্বকে কীভাবে দেখে? কীভাবে বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করে? মার্চ মাসে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দুই অধিবেশনের সংবাদ সম্মেলনে চীনা ও বিদেশি সাংবাদিকদের ২১টি প্রশ্নের উত্তর দেন, যেখানে বড় দেশগুলোর সম্পর্ক, আঞ্চলিক ইস্যু এবং বৈশ্বিক শাসনের মতো অনেক বিষয় ছিল। এর উদ্দেশ্য বাইরের বিশ্ব যেন চীনের অবস্থান এবং চীনের দায়িত্বগুলো আরও ভালভাবে বুঝতে পারে। এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বহির্বিশ্ব একটি স্পষ্ট সংকেত পেয়েছে: চীন তার নিজস্ব স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বিশ্বকে আরও নিশ্চিয়তা প্রদান করছে।

"চীন দৃঢ়ভাবে বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হবে।" অনেক বিদেশি সংবাদমাধ্যম পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বিবৃতিকে চীনের কূটনীতির ঘোষণা হিসাবে উল্লেখ করেছে।

শান্তিই প্রথম অগ্রাধিকার। বর্তমানে, ইউক্রেন সংকট চলমান রয়েছে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়লের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়েছে। চীনের সংস্কৃতিতে শান্তি একটি মূল বিষয়। একটি শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে চীন কেবল তার নিজস্ব নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার আশা করে না, বরং বিশ্ব শান্তির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে। ২০২৩ সালে, সৌদি আরব ও ইরানকে মিলিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে, ইউক্রেন সঙ্কটে মধ্যস্থতা, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ২৭১২ প্রস্তাব গৃহীত হওয়া পর্যন্ত, অনেকে চিন্তা করছে শান্তি বজায় রাখতে কীভাবে চীন সক্ষম হতে পারে?

এই সংবাদ সম্মেলনে, সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে চীনের ৪টি নীতির কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। সেগুলো হলো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, রাজনৈতিক মীমাংসার উপর জোর দেওয়া, বস্তুনিষ্ঠতা ও ন্যায্যতার উপর জোর দেওয়া এবং সমস্যা ও সমস্যার মূল উভয়ের সমাধানের উপর জোর দেওয়া। এই চারটি নীতি হলো চীনের অনুশীলন থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং এতে ঐতিহ্যগত চীনা জ্ঞানও রয়েছে। ব্রিটেনের ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকা বলেছে, ইউক্রেন-সম্পর্কিত সংকট সমাধানে চীনের প্রচেষ্টা ‘যুদ্ধ শেষ করার উপায় সম্পর্কে সৃজনশীল চিন্তাভাবনাকে উদ্দীপিত করেছে’।

স্থিতিশীলতা উন্নয়নের ভিত্তি। বর্তমানে, কয়েকটি প্রধান পশ্চিমা দেশ একতরফাবাদ এবং সংরক্ষণবাদ অনুসরণ করছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং বিশ্বে অশান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক কৌশলগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধান দেশগুলো প্রধান দায়িত্ব বহন করে। সংবাদ সম্মেলনে চীন-যুক্তরাষ্ট্র, চীন-ইউরোপসহ অন্যান্য বড় দেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলা হয়। চীনকে দমন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিজ্ঞাসা করা চারটি প্রশ্ন হোক বা চীনের প্রতি ইউরোপের বিরোধী অবস্থানের রূপক হিসাবে ‘একই সময়ে লাল, হলুদ ও সবুজ বাতি জ্বলছে’ হোক, চীনের বিবৃতিগুলো অকপট। যেমন ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং উভয়ের জন্য লাভজনক সহযোগিতা হওয়া উচিত’, ‘যতদিন পর্যন্ত চীন ও ইইউ পারস্পরের জন্য কল্যাণকর সহযোগিতা করবে, ততদিন দুটি বিবদমান শিবির গঠিত হবে না’। সংশ্লিষ্ট মন্তব্য প্রাসঙ্গিক দেশগুলোর বিবেচনার যোগ্য।

মানুষের কী ধরনের আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা প্রয়োজন? চীনের উত্তর হলো: একটি সমতাভিত্তিক ও সুশৃঙ্খল বহুমুখী বিশ্ব এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ব্যাপক উপকারী অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন। এটি একটি বৈশ্বিক শাসন পরিকল্পনা, যা চীন দ্বারা সমর্থিত, যা সময়ের উন্নয়নের ধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সাধারণ আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। এই পরিকল্পনায় উপর ভিত্তি করে, কিছু দেশ খাবারের টেবিলে বসে, কিছু দেশ শুধুমাত্র মেন্যুতে থাকতে পারে তা হবে না। তাছাড়া শিবির দ্বন্দ্ব, একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদ চলবে না। বরং জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করতে হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিসর বড় করতে হবে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে ভাগাভাগি করতে হবে, যাতে সাধারণ উন্নয়ন ও অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়।

চীন তাই বলেছে এবং ইতিমধ্যেই তাই করেছে। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’  যৌথ নির্মাণের দশ বছর হয়েছে। এই জনকল্যাণ বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত ও বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। চীন-প্রস্তাবিত ‘তিনটি প্রধান উদ্যোগ’ সাধারণত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃত পেয়েছে। ২০২৩ সালে ব্রিক্স-এর সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার নতুন ফোরামের আয়োজন পর্যন্ত, চীনের প্রচেষ্টায় ‘গ্লোবাল সাউথ’ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার রূপান্তরের মূল শক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্ব শাসনে একটি নতুন পরিবেশ এনেছে।

উন্নয়নই সকল সমস্যা সমাধানের সোনালী চাবিকাঠি। চীন দৃঢ়ভাবে বলেছে, একটি উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। এই সংবাদ সম্মেলনে চীন ঘোষণা করেছে, ১৪ মার্চ থেকে শুরু করে, চীন ছয়টি দেশ - সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গের জন্য ভিসা-মুক্ত নীতি কার্যকর করবে। এর মধ্য দিয়ে সক্রিয়ভাবে উন্মুক্তকরণের একটি সংকেত ও সংকল্প প্রকাশিত হয়েছে।

২০২৩ সালে, চীন ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে এক-তৃতীয়াংশ অবদান রেখেছে। ‘চীন ইঞ্জিন’ এখনও শক্তিশালী। বর্তমানে, চীনের সামগ্রিক শুল্ক স্তর উন্নত দেশগুলোর স্তরে দাঁড়িয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ প্রবেশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক তালিকায় আইটেম সংখ্যা একত্রিশে নেমে এসেছে, উত্পাদন শিল্পে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে, পরিষেবা শিল্পের উন্মুক্তকরণ দ্রুততর হয়েছে, এবং বিদেশি বিনিয়োগে লাভের হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। চীনা শৈলীর আধুনিকায়ন বিশ্বকে উপকৃত করছে।

বিশ্বকে একটি আরও ভালো জায়গা হিসাবে গড়ে তোলা চীনের আকাঙ্খা ও দায়িত্ব। বিশ্ব যখন অস্থিরতা ও পরিবর্তনের একটি নতুন সময়ে প্রবেশ করছে, বিভিন্ন দেশ মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার গুরুত্ব সম্পর্কে ক্রমবর্ধমানভাবে সচেতন হচ্ছে, তখন ‘স্থিরকারী’র হিসাবে চীনের ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠছে। ২০২৪ সালের বসন্তে, চীনের দুই অধিবেশনের বার্তা বিশ্বে বসন্ত নিয়ে আসবে এবং বিশ্বকে স্থিতিশীল হতে এবং আরও ভাল হতে সাহায্য করবে।

(ইয়াং/রহমান/ছাই)