আকাশ ছুঁতে চাই ৬০
2024-03-07 10:00:05


১. আন্তর্জাতিক নারী দিবস

২. অদম্য নারী: আরতী চক্রবর্তী

৩. চীনে নারীদের জন্য সম্মাননা

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে। নারী দিবসের রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস।

কর্মক্ষেত্রে মজুরি বৈষম্য, অমানবিক পরিবেশ , অনির্দিষ্ট কর্মঘন্টা ইত্যাদি সকল প্রকার নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৯০৯ সালে  প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানান।

এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে  নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ এবং সমাজে ও রাষ্ট্রে নারীর ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে ১৯১১ সাল থেকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে নারী দিবস পালন শুরু হয়।

১৯৪৯ সালে মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার ঘোষিত হয়। বলা হয়ে থাকে চীনের অর্ধেক আকাশ ধরে রেখেছে নারীরা। সে সময় থেকেই চীনে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৮ মার্চ পালিত হচ্ছে নারী দিবস হিসেবে। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

এরপর থেকে প্রতিবছরই নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য ও নির্যাতনের অবসান এবং সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

২০২৪ সালে নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।’ এই প্রতিপাদ্যে বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও গ্রহণ করা হয়েছে নানা কর্মসূচি।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

অদম্য নারী: আরতী চক্রবর্তী

নারী দিবসের বিশেষ এই পর্বে আজ আমরা শুনবো অদম্য এক নারীর গল্প যিনি একাধারে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈরিতা ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে এবং প্রতিবন্ধী নারী হিসেবে দ্বিগুণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে চলছেন। এই নারীর নাম আরতী চক্রবর্তী।

গান ভালোবেসেন  বাংলাদেশের মেয়ে আরতী । গানকে সঙ্গী করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই নারী এগিয়ে চলেছেন তার নিজ লক্ষ্যে। তবে তার দীর্ঘদিনের চলার পথে ছিল নানা প্রতিকূলতা। প্রতিকূলতা জয় করে এখন তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। পাশাপাশি সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন এই নারী।

 

মিষ্টি গলার আরতী চক্রবর্তীর জীবনে গানই সব। গান ভালোবেসে আরতী চক্রবর্তী জয় করেছেন তার জীবনযুদ্ধ। জীবনের পঞ্চাশতম বসন্তে পা রেখে গানে গানে ছড়িয়ে যাচ্ছেন মুগ্ধতা।

বাংলাদেশের মেয়ে আরতীর জন্ম উত্তরবঙ্গের রংপুর জেলায়। বাবা-মা, তিন বোন আর দুই ভাইয়েই সঙ্গে বেড়ে ওঠা তার।

মাত্র  এক বছর বয়সে টাইফয়েডের ভুল চিকিৎসায় আরতীকে হারাতে হয়েছিল দৃষ্টিশক্তি। জীবনে নেমে আসে একরাশ আঁধার। তবে একটু বড় হতেই সেই আঁধার জয়ের আলো এসে পড়ে আরতীর কণ্ঠে।

চোখে দেখতো না ছোট্ট আরতী। তাই কান পেতে থাকতো সারাক্ষণ। সেই কানে একদিন ধরা দিল সুরের পাখি। তাল, লয় আর রাগ-রাগিনিরা এসে বসল আরতীর কানে। 

মা ছিলেন আরতীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু। জীবনে চলার পথের অন্যতম সঙ্গী। তাইতো আরতীর গান শেখার স্বপ্নটাও পূরণ হয় মায়ের সমর্থনেই।

আরতী জানান, ‘যেখানেই গান হতো আমি সেখানেই যাওয়ার চেষ্টা করতাম। শুনে শুনে মনে হতো আমি গান শিখবো। গানের প্রতি আগ্রহ জাগল। তখন আমার মায়ের আবদানে আমি গান গাওয়া শুরু করি। আজকের এই জায়গায় এসেছি শুধু তার জন্য।’

দিন যত এগোতে থাকে, খুলতে থাকে আরতীর গানের গলাও। টেলিভিশন, বেতার থেকে শুরু করে গান গাওয়ার জন্য আরতীর ডাক পড়তে থাকে সামাজিক অনুষ্ঠানে।

জীবনের এই পর্যায়ে আসতে আরতীকে পার করতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা। তবে হোঁচট খাননি একবারও। লক্ষ্যে স্থির থেকে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে গেছেন সব সময়।

বাবা-মাকে হারানোর পর আরতী হয়ে যান পরিবারের কাছে বোঝা। বাড়ি ছাড়তে হয় তাকে। সঙ্গী বলতে আছে শুধু গান আর একাকীত্ব। মনের গভীরে তাই গাঁথা আছে একরাশ কষ্ট।

আরতি বলেন, ‘আমার অনেক কষ্ট হয়। একা থাকতে থাকতে আমার একঘেয়েমি লাগে। আমি কোথাও যেতে পারি না। আমাকে দেখার কেউ নেই। দিন যত যাচ্ছে একাকিত্ব আমাকে অসুস্থ করে দিয়েছে।’

গানে গানে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন আত্মপ্রত্যয়ী আরতি। দীর্ঘ ৪৯ বছর জীবনের চাকা থামতে দেননি। তবে অসুস্থতা ও একাকীত্ব যেন  ক্রমশ তাকে জানিয়ে দিচ্ছে কঠিন নিয়তির কথা।

তাই আরতীর আকুতি, গানের প্রতি তার অনুরাগ দেখেই হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠান তার পাশে এসে দাঁড়াবে।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল/শান্তা

 

 

চীনে নারীদের জন্য সম্মাননা

 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮ তম জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে নারী উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এমন কথা উঠে এসেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অল-চায়না উইমেনস ফেডারেশন আয়োজিত একটি নারী সম্মাননা অনুষ্ঠান থেকে।  

চীনের আধুনিকায়নে নারীদের সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ এবং উচ্চ-মানের উন্নয়নে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন স্টেট কাউন্সিলর এবং অল-চায়না উইমেনস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান শেন ইছিন।

 নারী দিবসকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বেইজিংয়ে অল-চায়না উইমেনস ফেডারেশন আয়োজিত গুণী নারীদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি আহ্বান জানান।

এসময় তিনি পারিবারিক শিক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করতে এবং ইতিবাচক পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে নারীদের উৎসাহিত করেন।

 অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তি ও সমষ্টিকে অভিনন্দন জানান শেন ই ছিন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে তিনি সব জাতি গোষ্ঠী এবং চীন জুড়ে সমাজের সর্ব স্তরের নারীদেরকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানান।

এর আগে দেশের নারী রোল মডেল, পেসসেটার বা সমাজে গতিশীলতা সৃষ্টিকারী অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী নারী  এবং অসামান্য কাজ করা নারী দলকে তাদের বিশেষ অবদান ও অনুকরণীয় কাজের জন্য সম্মাননা দেয়া হয়। 

এই আয়োজনে, ১০ জনকে ৮ মার্চ লাল-ব্যানার পেসসেটার উপাধিতে সম্মানিত করা হয়, ৩ শ’ জনকে ৮ মার্চ লাল ব্যানারধারী হিসেবে এবং ২ শ’ নারী গ্রুপকে লাল-ব্যানার সংগ্রাহক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। নারী দিবসের শুভকামনা জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন  

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল