৩২তম পূর্ব চীন মেলা প্রসঙ্গ
2024-03-06 18:57:46

পূর্ব চীন রপ্তানি ও আমদানি মেলা, সংক্ষেপে পূর্ব চীন মেলা। এটি চীনে পোশাক, টেক্সটাইল ও হালকা শিল্প পণ্য বিষয়ক বৃহত্তম একটি বাণিজ্য মেলা। শাংহাই শহর, চিয়াং সু প্রদেশ, চেচিয়াং প্রদেশ, আনহুই প্রদেশ, ফুচিয়ান প্রদেশ, চিয়াং সি প্রদেশ, শাংনতুং প্রদেশ, নান চিং শহর ও নিং পো শহরসহ ৯টি প্রদেশ ও শহরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটি বার্ষিক মেলা পূর্ব চীন মেলা। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩২ বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে মেলাটি। গেল ৩ দশকের উন্নয়নের মাধ্যমে এ মেলার পেশাদারিত্ব, বাজার ব্যবস্থাপনা ও বিশ্বপরিচিতি দিন দিন বাড়ছে। চীনে ক্যান্টন মেলার পর দ্বিতীয় বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী ও আকর্ষণীয় একটি বৈদেশিক বাণিজ্যের মেলা পূর্ব চীন মেলা।

 

৩২তম পূর্ব চীন মেলা ১-৪ এপ্রিল শাংহাই নতুন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলার আয়তন ১ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। চীনসহ বিশ্বের ১৪টি দেশ ও অঞ্চলের মোট ৩ হাজার ৪২২টি কোম্পানি এ মেলায় অংশ নেয়। এর মধ্যে বিদেশের প্রদর্শক ৩২৬টি। গত পূর্ব চীন মেলার তুলনায় এবার মেলার আয়তন ৩১.৩ হাজার বর্গমিটার বেশি। প্রদর্শনী কেন্দ্রের ১১টি প্যাভিলিয়নে পোশাক  ও কাপড়, টেক্সটাইল, গৃহস্থালী পণ্য, সাজ-সজ্জা ও উপহার বিষয়ক চারটি শাখা প্রদর্শনী এবং বিদেশ ও আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যসহ দুটি পেশাদার প্রদর্শনী ছিলে এতে।

পূর্ব চীন মেলা এমন একটি জানালা যেখানে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের  অগ্রসরমানতা, নবায়ন, উন্নয়ন এবং ব্র্যান্ডের উন্নতি প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি এ মেলা যে বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নের নতুন চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে তাও বোঝা যায়।

 

অনেক বিখ্যাত কোম্পানি ও নতুন পণ্য এবার মেলায় এসেছে। এর একটি চিয়াং সু প্রদেশের একটি কোম্পানি এবার মেলায় পুনর্ব্যবহৃত ফাইবার ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি মহিলাদের জ্যাকেট নিয়ে এসেছে। এটি বৃষ্টিরোধী, বায়ু চলাচলযোগ্য, উষ্ণ এবং হালকা। তা পরিবেশবান্ধব নতুন প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া উচ্চমানের ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়তা পাবে বলে ধারনা করা যায়।

অন্যদিকে সাজ-সজ্জাসংক্রান্ত ও উপহার প্রদর্শনীতে নিং পো শহরের একটি কোম্পানি  নতুন পণ্য নিয়ে এসেছে– তা হলো আলাদা করা যায় এমন ডাবল সোফা। এ সোফা হালকা তবে নরম।  সহজে ভাঁজ করা যায় বলে বাইরে নিয়ে যেতে সুবিধাজনক। কোনো পরিবার যখন ক্যাম্পিং করে তখন এমন সোফা নিয়ে যেতে পারে। পূর্ব চীন মেলায় চীনের ৯টি স্বাগতিক প্রদেশ ও শহর প্রতিনিধি দল নিজ নিজ অঞ্চল ও শহরের সর্বশেষ প্রযুক্তির পণ্য নিয়ে আসে।

 

আরও বেশি বিদেশি বাণিজ্য বিষয়ক কোম্পানিকে উদ্ভাবনে উৎসাহ দিতে ২২তম পূর্ব চীন মেলা থেকে উদ্ভাবন পুরস্কার বিতরণ শুরু হয়। এবার মেলায় ৪৭টি কোম্পানি এ পুরস্কার পেয়েছে এবং  মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের জন্য পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ কোম্পানিগুলো মূলত প্রযুক্তি, বিদেশে বাজার প্রসারণ, নবায়ন ও সেবাসহ নানা দিক থেকে সামনের সারিতে রয়েছে বা লক্ষ্যণীয় সাফলতা অর্জন করেছে, যা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। এ সব কোম্পানি বৈদেশিক বাণিজ্যে ধারাবাহিক প্রযুক্তি, সেবা, মান ও নবায়ন ক্ষেত্রে উন্নত কোম্পানির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং নতুন পরিস্থিতিতে চীনা বৈদেশিক বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা, প্রাণশক্তি ও প্রতিযোগিতার দক্ষতা প্রদর্শন করে।

আন্তর্জাতিক একটি বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মেলা হিসেবে পূর্ব চীন মেলা একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে, যেখানে প্রদর্শক ও ক্রেতারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা করতে পারে।

মেলার আগে নানা অঞ্চলে বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রচারণা অনুষ্ঠান আয়োজন করে পূর্ব চীন মেলার সংগঠকরা। কোম্পানি নিয়ে দেশে এবং দক্ষীণ কোরিয়া, জাপান, ব্রাজিল ও যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশের প্রচারণা অনুষ্ঠানে হাজির হয়। পাশাপাশি ওয়াবসাইট, উইচ্যাট ও টিকটকসহ দেশবিদেশের সামাজিক যোগাযোগ তথ্যমাধ্যমে প্রচারণা করে পূর্ব চীন মেলা এবং নিজের ওয়াবসাইটে ভালো প্রদর্শক ও পণ্যের জন্য বিনামূল্যে প্রচারণা চালায়।

তাছাড়া, মেলাচলাকালে ক্রয়-বিক্রয়ের বিশেষ একটি এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে ৬টি মুখোমুখি আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় অন্য দিকে মেলার কর্মী ক্রেতাদের নিয়ে প্রদর্শকের স্টলে চলে আসে এবং তাদের মধ্যে সহযোগিতা বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে।

এবার পূর্ব চীন মেলায় প্রদর্শক আকর্ষণ করে আরও বেশি দেশ ও সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে ধারাবাহিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একদিকে, প্রস্তুতি পর্যায়ে  যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল ও জাপানসহ নানা দেশে বৈশ্বিক প্রচারণা অনুষ্ঠান আয়োজন করে এবং তারপর চীনে খ্য ছিয়াও ও ইউ দুটি জায়গায় প্রচারণা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। দুটি অনুষ্ঠানে যথাক্রমে ১৩৩ ও ১৮৯ জন  ক্রেতার যোগদান নিশ্চিত হয়। নানা পদ্ধতিতে দেশ-বিদেশের সহযোগিতা প্রসারিত  করতে পূর্ব চীন মেলা পরিষদ হংকং বাণিজ্য উন্নয়ন ব্যুরো, যুক্তরাজ্য-চীন বাণিজ্য কমিটি, জাপান বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা ও দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্য কমিটি, সিঙ্গাপুর সাধারণ চীনা বণিক সমিতিসহ চীনে নিযুক্ত বিদেশি বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পাশাপাশি শাংহাই রপ্তানি ও আমদানি বণিক সমিতি, শাংহাই শিল্প সহযোগিতা কমিটি, শাংহাই বাণিজ্য ইউনিয়নসহ নানা সংস্থার সঙ্গেও মেলার ব্যাপার নিয়ে কাজ করে।

আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য এবার মেলার একটি হাইলাইট। মেলায় চীনের এবং আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য উন্নয়নের নতুন পরিস্থিতি, সাফলতা প্রদর্শন করে। এবার মেলায় আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্রদর্শনে রয়েছে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশন, সেবাকারী, শিল্পপার্ক ও শিল্পচেনসহ নানা বিষয়। পাশাপাশি আন্তঃসিমান্ত ই-বাণিজ্য সেমিনার ও আলোচনা সভাও মেলাচালাকালে অনুষ্ঠিত হয়। ভালমানের চীনা পণ্য বিদেশে রপ্তানি ও বিদেশের ভাল পণ্য চীনে আনতে ইন্টারনেট চ্যানেল খুলে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য।

 বিশ্ব শিল্প চেন সমন্বয় ও চীনা বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণে পূর্ব চীন মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ লিয়ান পিং। চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি জানালা ও প্লাটফর্ম পূর্ব চীন মেলা। বিশেষ করে চীন বিশ্বের রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তম দেশ হওয়ায় এ ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখে। চীনা প্রধান অর্থনীতিবিদ ফোরামের পরিচালক ও শাংহাই অর্থনৈতিক সমিতির উপপ্রধান লিয়ান পিং মনে করেন, পূর্ব চীন মেলার সাফলতার মূল কারণ দুটি। এক দিকে এ মেলা বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক চীনের প্রথম কয়েকটি মেলার অন্যতম। অন্য দিকে এ মেলা ইয়াংসি নদীর বদ্বীপের শক্তিশালি অর্থনৈতিক দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ যেমন চীনে অর্থনীতির সবচেয়ে সক্রিয় একটি জায়গা এবং চীনের আর্থিক ও নৌ পরিবহনের কেন্দ্রও এখানে আছে, তা পূর্ব চীন মেলার জন্য ভাল একটি পরিবেশ ও সমর্থন দেয়।

১ মার্চ অনুষ্ঠিত ৩২তম পূর্ব চীন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, লিয়ান পিং একটি ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি উন্নয়ন ও সরবরাহ চেনের সমন্বয়ও চলছে। বর্তমান বিশ্ব সরবরাহ চেনের ক্ষেত্রে বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ আরও বেশি দেখা দিয়েছে। বিশ্ববাণিজ্যের আঞ্চলিকায়নের পাশাপাশি রয়েছে বেশি কয়েকটি বাণিজ্য কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় কোম্পানির বৈশ্বিক সরবরাহ চেনের নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা দিন দিন বাড়ছে। বৈশ্বিক সরবরাহ চেনের সহযোগিতা নিয়ম আরও বহুপক্ষীয়, ডিজিটাল ও সবুজ দিকে যায়। এ সব প্রবণতা চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং ভবিষ্যতেও ফেলবে।

 

বৈশ্বিক সরবরাহ চেনের পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে লিয়ান পিং মনে করেন চীনকে ধারাবাহিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখা যায়।

প্রথমে, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির নিজস্ব উন্নয়নের চালিকাশক্তি জোরদার করা যায়। নির্মাণ শিল্পের মৌলিক দক্ষতা ও আধুনিকায়নের মান  উন্নয়ন করা। কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট ও স্থানীয় সরকারের বন্ডসহ সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণ জোরদার করা যায়। পাশাপাশি শিল্পের স্থিতিশীলতা জোরদার করা। তার বাস্তবায়ন বিভিন্ন শিল্পের মৌলিক দক্ষতা ও শিল্প চেনের মানের ওপর নির্ভর করে। চীনা কোম্পানি বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দক্ষতা জোরদার করে শিল্প চেনের সুষ্ঠু চলাচল নিশ্চিত করা।

দ্বিতীয়ত, শিল্পের স্থানান্তরের জন্য উপযোগী অঞ্চল তৈরি করা যায়।  কিছু শিল্পের প্রক্রিয়াকরণ বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানান্তরের মাধ্যমে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা দক্ষতা পুনর্নির্মাণ করা যায়। বিদেশে চীনা কোম্পানির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেয়া হবে। পাশাপাশি বিশ্ব সরবরাহ চেনের বিন্যাস জোরদার করে শিল্প ব্যবস্থায় চীনের অবস্থান উন্নীত করা যায়। বেল্ট অ্যান্ড রোড সংশ্লিষ্ট দেশ কেন্দ্র করে বিশ্বের সম্পদ নিয়ে চীনের সমন্বয় দক্ষতা জোরদার করা যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ানের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্য সম্পর্ক গভীরতর করে এবং নিয়মিত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে– প্রযুক্তি গবেষণা, প্রকল্পের বিনিয়োগ ও শিল্প চেনের সমন্বয় সহযোগিতার জন্য নতুন  আবকাশ তৈরি করা যায়। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের বাজার দ্রুত প্রসারিত করে এবং তাদের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। অংশিদারি দেশের মধ্যে বণিজ্যের বাধা কমিয়ে আনাও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

লিয়ান পিংয়ের মতে বিশ্বের নতুন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নতুন প্রবণতা ও চাহিদা মেটাতে পূর্ব চীন মেলাকেও নবায়ন ও  প্রাগ্রসর হতে হবে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল টুল যেমন ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম, বিগ ডেটা বিশ্লেষণ ও ক্লাউড কম্পিউটারসহ  নানা প্রযুক্তির সাহায্য বাণিজ্যের কার্যকারিতা ও মান উন্নয়ন করবে। প্রদর্শক ও ক্রেতার মধ্যে বাণিজ্যে কার্যক্রমের সুবিধাও প্রযুক্তির সাহায্যে বৃদ্ধি হবে। তাতে পূর্ব চীন মেলা আরও বেশি দেশ বিদেশের ক্রেতা ও বিক্রেতা আকর্ষণ করবে এবং মেলার প্রভাবও জোরদার হবে। তাছাড়া, পূর্ব চীনা মেলা পণ্যের বাণিজ্য ছাড়া অন্য বিষয়ে সেবা প্রদান করতে পারে। যেমন বাজার বিশ্লেষণ, ব্র্যান্ড প্রচারণা, বিনিয়োগ পরামর্শ ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দক্ষতা ও বাজার জানতে কোম্পানিকে সাহায্য দিতে পারবে পূর্ব চীন মেলা।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড তৈরিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে পূর্ব চীন মেলা নিজের আন্তর্জাতিক অবস্থান উন্নীত করতে পারে। এবার মেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয় আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য এবং লিয়ান পি মনে করেন, বর্তমান আর্থ-বাণিজ্যিক পরিস্থিতিতে আন্তঃযোগাযোগ ই-বাণিজ্যের সুবিধা আছে। উন্নত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে লজিস্টিক, লেনদেনসহ নানা প্রক্রিয়া সহজ করে, দ্রুত ও কার্যকর লজিস্টিক ও  নিরাপদ লেনদেন বাণিজ্যের গোটা প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনীতি বৃদ্ধিতে পূর্ব চীন মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবার পূর্ব চীন মেলায় প্রদর্শক নিজের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করার সাথে সাথে নতুন সহযোগিতা অংশিদার ও ব্যবসার সুযোগ খুঁজে পেয়েছেন।

লিয়ান পিং মনে করেন, বতর্মান পরিস্থিতিতে সহযোগিতা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।  আগে চীনা পণ্য রপ্তানির চাহিদা বেশি এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা দক্ষতাও বেশি ছিল বলে বৈদেশিক বাণিজ্যের চাপও কম ছিল, তবে এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ ও বিশ্বায়ন পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এর পেছনের কারণ অনেক। যেমন উন্নত দেশ চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন আটকাতে অপচেষ্টা চালায় এবং বিশ্ব শিল্প চেইন, সরবরাহ চেইন ও রপ্তানি ও আমদানির চাপ মুখে চীন। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হয় এবং পরিস্থিতি কঠোর হয়ে উঠে। এমন প্রেক্ষাপটে চীনের জন্য সহযোগিতা দরকার। বহিরাগত অযৌক্তিক চাপ প্রশামন করতে চীন আরও অংশিদার চায়।

লিয়ান পিং মনে করেন, অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর বাজারের বৈচিত্র্য বিবেচনা করা উচিত। যদিও দীর্ঘমেয়াদি অংশিদারদের সঙ্গে স্থিতিশীল সহযোগিতা করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নতুন বন্ধুও খুঁজে নেওয়াও উচিত। পূর্ব চীন মেলার মধ্যমে কোম্পানিগুলো নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হয় এবং সহযোগিতার সম্ভাবনা খুঁজে পায়। উন্নয়নশীল দেশের ওপরও আরও বেশি দৃষ্টি রাখা দরকার।

চীনের প্রযুক্তি ও পণ্যের মান উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভাল, তবে উন্নত দেশের মধ্যে ব্যবধান থাকতে পারে এবং তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর। পূর্ব চীন মেলার মাধ্যমে নতুন বন্ধু হওয়া উন্নত দেশের বাজারের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নশীল দেশে বাজার সম্প্রসারণের জন্য সহায়ক। লিয়ান পিং আরও বলেন, যদিও বতর্মানে কোন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা না থাকলেও, যোগাযোগের মাধ্যমে ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি হতে পারে এবং তা সুযোগ সৃষ্টি করবে।

 

একটি কথা, বিশ্ব সরবরাহ চেইনের পরিবর্তন চীনের অর্থনীতির জন্য যেমন সুযোগ তেমনি চ্যালেঞ্জ। তার মোকাবিলায় চীন ইতিবাচক মন দিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করবে, নিজের শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দক্ষতা জোরদার করবে এবং টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবে। পূর্ব চীন মেলা চীনা বাণিজ্য উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভবিষ্যতেও ভূমিকা পালন করবে এবং চীনা বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়নে নিজের অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস করা যায়।

(শিশির/হাশিম/লিলি)