‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৬০
2024-03-05 10:00:07

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। মাটির নিচে ২০০ বছরের প্রাচীন গ্রামে এখনও বসবাস মানুষের

২। চীনের গ্রামে অভিনব কফিশপ

৩। চেচিয়াং প্রদেশের প্রাচীন মন্দির থিয়েফসি

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।   

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৬০তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।        


১। মাটির নিচে ২০০ বছরের প্রাচীন গ্রামে এখনও বসবাস মানুষের

উপর থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, মাটি থেকে প্রায় ২৩ ফুট গভীরে বসবাস    একটা পুরো গ্রাম! আসলে পুরো গ্রামটাই গড়ে উঠেছে মাটির নিচে। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির স্থাপত্য পরিকল্পনা এক কথায় অসাধারণ।

ঘরগুলোতে তাপমাত্রা শীতকালে ১০ ডিগ্রির কম হয় না আর গ্রীষ্মে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে না। চীনের হেনান প্রদেশের সানমেনসিয়ায় অবস্থিত এই অদ্ভূত গ্রামের নাম মিয়াওশান। প্রায় ২০০ বছর ধরে এখানে মাটির নিচেই বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন কয়েক হাজার মানুষ।

সানমেনসিয়া এলাকায় এমন অন্তত ১০ হাজার ঘরের সন্ধান মিলেছে। এগুলোর বেশির ভাগই বর্তমানে পরিত্যাক্ত। মাটির নিচে তৈরি এই ঘরগুলোকে চীনা ভাষায় বলা হয় ‘ইয়ায়োতং’, যার অর্থ হলো গুহা ঘর। একটা সময় এখানে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। কিন্তু আধুনিক সুযোগ সুবিধার অভাবে এবং প্রতিকূল জীবনযাত্রার চাপে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে যান। তবে এখনও সানমেনসিয়া এলাকার এই গুহা ঘরগুলোতে প্রায় তিন হাজার মানুষ বসবাস করেন।

মাটি থেকে প্রায় ২৩ ফুট গভীরে তৈরি এই ঘরগুলো লম্বায় ৩৩ থেকে ৩৯ ফুট পর্যন্ত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, হেনান প্রদেশের সানমেনসিয়ায় ‘ইয়ায়োতং’-য়ে বসবাসের ইতিহাস ২শ বছরের বেশি প্রাচীন নয়। তবে চীনের পার্বত্য এলাকায় আজ থেকে প্রায় চার বছর বছর আগে, ব্রোঞ্জ যুগে এ ধরনের গুহা ঘর তৈরি করে বসবাস করতেন একদল মানুষ।

২০১১ সাল থেকে এই গ্রামটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে স্থানীয় প্রশাসন। বর্তমানে এসব ‘ইয়ায়োতং’ বা গুহা ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগসহ সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, গুহা ঘরগুলো ভূমিকম্পেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

আশ্চর্য এই ঘরগুলোর আকর্ষণে এই এলাকায় বর্তমানে পর্যটকদের আনাগোনা অনেকটাই বেড়ে গেছে। পর্যটক টানার জন্য এখন ‘ইয়ায়োতং’ ভাড়া দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

২। চীনের গ্রামে অভিনব কফিশপ

উত্তর চীনের হবেই প্রদেশের তংশুইছুয়ান গ্রাম। এখানে দেখা যাবে অভিনব কিছু কফির দোকান। বাইরে থেকে সাজানো গোছানো খামারবাড়ি মনে হলেও ভেতরে সবাই চুমুক দিয়ে নিচ্ছেন অন্যরকম সব কফির স্বাদ। এসব রেস্তোরাঁর সাজসজ্জায় আছে গ্রামীণ ছোঁয়া। কফিশপে এমন নতুনত্বের কারণে দোকানগুলো এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পথচারীদেরও টানছে বেশ।

তবে শুধু অন্দরসজ্জা নয়, এখানকার কফিতেও আছে অভিনবত্ব। এই অঞ্চলে আঙুরসহ প্রচুর ফল উৎপাদন হয়। তাই এ কফিশপগুলোয় নানা ধরনের ফলের স্বাদেও পাওয়া যাচ্ছে কফি। এমনকি কয়েকটি রেস্তোরাঁর মেনুও তৈরি করা হচ্ছে ফলগাছের লতা-পাতা দিয়ে।

এখানে কফি খেতে এসেছিলেন ওয়াং নামের একজন পর্যটক। তিনি বললেন,  ‘এই ক্যাফের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এখানে ঢুকে পড়ি। এক কাপ কফি খেতেই মনে হলো এখানকার পরিবেশটা একেবারেই আলাদা।’

উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশের ইয়ানচি সিটির সঙ্গে কফির আছে সুগভীর সম্পর্ক। আর এ সম্পর্কটা কফির মতোই কড়া। কারণ, এখানে মাত্র ৬ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাস করলেও কফিশপ আছে প্রায় এক হাজারেরও বেশি।

চিলিনে কফির জনপ্রিয়তার এমন উত্থানের পেছনে আছে বরফ ও তুষারের ভূমিকা। তুষারকে ঘিরে এখানে তৈরি হয়েছে পর্যটন স্পট। আর সেই স্পটগুলোর পাশে থাকা কফি শপে অন্তত ৫০ ধরনের কফি পাওয়া যায়। যেখানে দিনে বিক্রি হয় হাজার কাপেরও বেশি।

চিলিনের এমন এক কফি শপে আসা আরেক পর্যটক জানালেন, ‘আমি ইন্টারনেটে জানতে পেরেছি, এখানে আপেল-নাশপাতির কফি পাওয়া যায়। এটি অভিনব একটা ধারণা। স্বাদও বেশ ভালো।’

 

চীনজুড়ে এখন কফি খাওয়ার প্রবণতা বেশ বেড়েছে। আর এ সুযোগ হাতছাড়া করছে না কফির চেইন ব্র্যান্ডগুলো। শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে তাই ছড়িয়ে পড়েছে তাদের শাখা-প্রশাখা।

প্রতিবেদন- ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা- আফরিন মিম


৩। চেচিয়াং প্রদেশের প্রাচীন মন্দির থিয়েফসি

চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হুচৌ শহর। এখানে রয়েছে নানা রকম ঐতিহাসিক নিদর্শন। হুচৌ শহরের একটি বিখ্যাত সাংস্কৃতিক স্থাপনা হলো থিয়েফো মন্দির। এখন বসন্তকালে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মন্দির প্রাঙ্গণে ফুটছে রেড প্লাম ব্লজম ফুল। এই গাছগুলোও অনেক প্রাচীন। বসন্তকালে এই ফুলের শোভা দেখতে আসেন অনেক পর্যটক।

থিয়েফো সি মন্দিরের আরেক নাম খাইইয়ুয়ান মন্দির। অনেক বার এই মন্দির কমপ্লেক্সের সংস্কার হয়েছে। ইয়ুয়ান রাজবংশের সময়কার বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার চাও মংফুর হস্তলিপির নমুনা রয়েছে এখানে। মন্দিরের পিছনের দেয়ালে স্মৃতিস্তম্ভে এই হস্তলিপি উৎকীর্ণ রয়েছে। এখানে রয়েছে একটি সামনের বড় কক্ষ এবং পিছনের ছোট কক্ষ।

 

এখানকার বড় হলঘরে থিয়েকুয়ানইন দেবীর একটি লৌহ ভাস্কর্য রয়েছে। এই ভাস্কর্যটি এত সুন্দর যে একে প্রাচ্যর ভিনাস বলা হয়। ১১৫২ সালে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিল।

এখানে রয়েছে একটি বিশাল ব্রোঞ্জের ঘন্টা। এটা জাপানি ঘন্টা নামে পরিচিত। এই ব্রোঞ্জের ঘন্টাটি ১৭০৬ সালের। এর ওজন  প্রায় ১.৫ টন। মন্দির কমপ্লেক্সের ভিতরে ৫০০ বছরের পুরনো একটি হাসপাতালও আছে। শ্বেত পাথরের তৈরি একটি দেয়ালও দেখার মতো।

১৯৬৩ সালে থিয়েফো সি মন্দিরকে সাংস্কৃতিক ঐহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এই মন্দিরে প্রবেশ করতে ৪ ইউয়ান দিয়ে টিকেট কাটতে হয়। হুচৌ শহরের প্রাণকেন্দ্রে লাওডোং রোডে এই মন্দির অবস্থিত।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী