বিজ্ঞানবিশ্ব ৬০তম পর্ব
2024-03-04 14:32:53

৬০তম পর্বে যা থাকছে:

 

* যৌথভাবে নতুন সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করলেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা

* সামরিক কাজ করবে রোবট কুকুর

* অর্নিথোপ্টার তৈরি করলেন একদল শিক্ষার্থী

 

যৌথভাবে নতুন সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করলেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা

বর্তমান সেমিকন্ডাক্টর শিল্প সিলিকন-নির্ভর। সিলিকন থেকেই তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক সব চিপ। তবে দ্রুতগতির কম্পিউটিং আর ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে সিলিকন পড়ছে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে। এ সমস্যার সমাধানে এসেছে গ্রাফিন। গ্রাফিন হলো কার্বনের একটি অণুর সমান পুরু একটি স্তর, যার ভেতর থাকে একটি বিশেষ কাঠামো। আর ওই গ্রাফিন থেকেই এবার বিশ্বের প্রথম কার্যকর সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

সিলিকনের কার্যকর বিকল্প বলা যায় গ্রাফিনকে। এই ধরনের সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে তৈরিকৃত ইলেকট্রনিকস পণ্য হবে আকারে ছোট, গতিশীল এবং অনেক বেশি কার্যক্ষমতা সম্পন্ন।

চীনের থিয়েনচিন বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (জর্জিয়া টেক) গবেষকেরা যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন। গবেষণাটি নেচার জার্নালের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গ্রাফিন দিয়ে তৈরি প্রায় সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস সিলিকনের চেয়ে ১০ গুণ বেশি কার্যকর হবে।

সিলিকন সেমিকন্ডাক্টর এখনকার কম্পিউটার বা ডিজিটাল যন্ত্রপাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ছাড়া ইলেকট্রনিক পণ্য বলা যায় অচল। এটি কম্পিউটারকে চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের প্রবাহকেও নিয়ন্ত্রণ করে। গাড়ি স্টার্ট করা, বাস বা ট্রেনের দরজা খোলা এবং স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের মতো ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করতেও

সিলিকন ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে একটি কার্যকর উপাদান হলেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে বিজ্ঞানীরা এর বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন এবং গ্রাফিন হতে পারে এর একমাত্র সমাধান।

অনেকের ধারণা ছিল, গ্রাফিন ইলেকট্রনিকস শিল্পে কখনোই ব্যবহার করা যাবে না। ব্যান্ড গ্যাপ নামের বৈদ্যুতিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হয় সেমিকন্ডাক্টরে। গ্রাফিনে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যান্ড গ্যাপ ছিল না।

থিয়েনচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোপার্টিকেলস অ্যান্ড ন্যানোসিস্টেমসের নির্বাহী পরিচালক মা লেই জানান, গ্রাফিন সেমিকন্ডাক্টরের এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করতে প্রায় আট বছর লেগেছে। জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ওয়াল্টার ডি হিয়ার গবেষক দলটিকে সহযোগিতায় করেছেন।

বিজ্ঞানী ওয়াল্টার ডি হিয়ার জানান, এতে ন্যানোইলেকট্রনিকসে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অন্য সব দ্বিমাত্রিক সেমিকন্ডাক্টরের চেয়ে গ্রাফিন সেমিকন্ডাক্টর অনেক বেশি উন্নত।

গ্রাফিন সেমিকন্ডাক্টরগুলো তাদের সিলিকন প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তাই এতে মিলবে কিছু বাড়তি সুবিধা। যেমন গ্রাফিনের সেমিকন্ডাক্টরে তৈরি স্মার্টফোনের ব্যাটারি লাইফ হবে এখনকার চেয়ে অনেক বেশি।

মা লেই বলছেন, গ্রাফিনের সেমিকন্ডাক্টর বাজারে আসতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার চালু হতে অন্তত আরও ১০ থেকে ১৫ বছর লাগবে বলে জানান তিনি।

এই গবেষণার ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়েও নতুন সুযোগ বাড়বে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

সামরিক কাজ করবে রোবট কুকুর

সামরিক ও বেসামরিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিছুয়ানের রোবটিক্স শিল্পে এসেছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। আঞ্চলিক অর্থনীতিকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই রোবট। আর এখানে তৈরি হচ্ছে সামরিক কাজে দক্ষ রোবটও।

চীনের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শহর হিসেবে পরিচিত মিয়ানইয়াংয়ে এ চলচে রোবটের অ্যাসেম্বলির কাজ। সিছুয়ান প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ শহরটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষা শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। আর তাই এখানে সম্প্রতি সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়েছে একটি রোবট কুকুর।

চীনের সাউথ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপ কর্পোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে রোবট কুকুরটি তৈরি করেছে চীনের সাউথওয়েস্ট অটোমেশন রিসার্চ ইন্সটিটিউট। ‍দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এটি।

রোবট কুকুরটি নিজে থেকে গতি নিয়ন্ত্রণ এবং ছবি সনাক্ত করার কাজ করতে পারে। চার পাওয়ালা রোবট কুকুরটি চলতে পারে অসমতল ভূমিতে, অতিক্রম করতে পারে নানা ধরনের বাধা।

বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে পারে। আবার বহন করতে পারে ২০ কেজি পর্যন্ত ভার। উদ্ধার অভিযান থেকে টহলের কাজেও রোবট কুকুরটির ব্যবহার আছে বলে জানিয়েছেন এর নির্মাতারা।

সাউথওয়েস্ট অটোমেশন রিসার্চ ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন বিভাগের উপ পরিচালক লি ছুয়ানচুন বলেন, “মিয়ানইয়াং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শহরের সঙ্গে যৌথভাবে একটি রোবট কোম্পানি গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা প্রযুক্তি সরবরাহ করি। তাদের যে শিল্প চেইন আছে তা বেশ নিখুঁত। সেটার কারণে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ২০২৫ সালের মধ্যে চীনে রোবট শিল্পের বাজার ১০০ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে।”

১৯৬৪ সালে চীনের ১৩টি প্রদেশ এবং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে তৃতীয় ফ্রন্ট আন্দোলনের পর গবেষক ও বিজ্ঞানীরা এই দক্ষিণ-পশ্চিম এ শহরে বসবাস গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। শহরটিতে সামরিক ও বেসামরিক শিল্পের সমন্বয় আরও গভীর হচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলো একত্রিত হয়ে দৈনন্দিন সমস্যার কার্যকর সমাধান করা হচ্ছে।

মিয়ানইয়াং ইতোমধ্যেই চীনের একটি প্রধান রোবোটিক্স কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শহরটিতে ১০০টিরও বেশি রোবোটিক্স কোম্পানি রয়েছে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

অর্নিথোপ্টার তৈরি করলেন একদল শিক্ষার্থী

উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের শিয়ান শহরের নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী একটি অর্নিথোপ্টার রোবট পাখি তৈরি করেছেন। বাজপাখির মতো দেখতে বলে তারা এর নাম দিয়েছেন ‘ফ্যালকনেট’। চীনা নাম ‘সিয়াওসুন’।

এই অর্নিথোপ্টার মূলত বিদ্যুৎচালিত উড়ন্ত যান বা রোবট পাখি। এটি পাখির মতো ডানা ঝাপটে উড়তে পারে। অর্নিথোপ্টার বিভিন্ন আকারের হতে পারে।

জটিল ডানার নকশা এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে অর্নিথোপ্টার তৈরি করা খুবই জটিল একটি কাজ।

শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত নতুন উড়ন্ত এ রোবট ডানা ভাঁজ করেও রাখতে পারে। এমনকি এ পাখিটি শুধু এক দিকের ডানা ভাঁজ করে মোড় ঘুরতে পারে।

এখন পর্যন্ত তৈরিকৃত রোবট পাখিগুলোর মধ্যে ‘ফ্যালকনেট সবচেয়ে দক্ষ এবং পাখির মতো উড়ার সকল কৌশল অবলম্বন করে উড়তে পারে। যখন এটি আকাশে উড়ে তখন কারও পক্ষে বোঝার সাধ্য নেই এটি রোবট নাকি পাখি।

এদিকে চীনের বেইজিং ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা একটি মাইক্রো-অর্নিথোপ্টারের তৈরি করেছেন। মাত্র ১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের মাইক্রো-অর্নিথোপ্টারের ওজন ২ দশমিক ৫ গ্রাম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট এবং হালকা অর্নিথোপ্টারগুলো একটি।

মাইক্রো-অর্নিথোপ্টারটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এটি এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ডানাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং টানা ১০ মিনিট উড়তে পারে।

অর্নিথোপ্টারগুলো পরিবেশগত পর্যবেক্ষণ, দুর্যোগ ত্রাণ এবং সামরিক অভিযানের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি ছোট প্যাকেট ও ওষুধ সরবরাহও করা সম্ভব। এ ছাড়া বিনোদন এবং খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে এ অর্নিথোপ্টারগুলো।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী