এই মার্কিন সেনার আত্মহনন মার্কিন রাজনীতিবিদদের বিবেক জাগ্রত করবে?-সিএমজি সম্পাদকীয়
2024-03-01 17:14:31

মার্চ ১: "যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে একজন আমেরিকান সেনা নিজের শরীরে আগুন ধরানোর ব্যাপারটা মার্কিন সরকারের ইসরায়েলি নীতির প্রতি জনগণের অসন্তোষকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত করে।" ২৫ বছর বয়সী আমেরিকান সৈনিক অ্যারন বুশনেল আত্মহত্যা করে মারা যাওয়ার পর, মার্কিন "রাজনীতিবিদ" ওয়েবসাইটটি উল্লেখ করেছে যে, এটি মার্কিন সরকারের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধির বহিঃপ্রকাশ।

বিভিন্ন তথ্য মাধ্যমের খবর অনুসারে, বুশনেল মার্কিন বিমান বাহিনীর সদস্য এবং একটি গোয়েন্দা, নজরদারি শাখায় কাজ করতেন। মার্কিন সময় ২৫ তারিখে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে একা হেঁটে যান, নিজের শরীরে জ্বালানি ঢেলে নিজেকে আগুন ধরিয়ে দেন। এই সময় তিনি বহুবার "ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করুন!" বলে চিৎকার দিচ্ছিলেন। গুরুতর আঘাতের কারণে, বুশনেল দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা যান। "আমি আর গণহত্যায় অংশ নেব না"- আগে রেকর্ড করা ভিডিওতে এই তরুণ সেনা এই শেষ কথাটি বলেছেন।

বুশনেলের বন্ধুদের মতে, আত্মহননের ঘটনার আগের দিন, বুশনেল প্রচুর সামরিক অভ্যন্তরীণ তথ্য শেয়ার করেছিলেন, বলেছিলেন যে "মার্কিন সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার সাথে সরাসরি জড়িত ছিল।" কিছু মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে যে, গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করেছিল। বুশনেল মার্কিন সামরিক বাহিনীর "বল প্রয়োগ" নিয়ে খুবই বিরক্ত ছিলেন এবং তাড়াতাড়ি অবসর নেওয়ার কথা ভাবছিলেন।

সামাজিক প্ল্যাটফর্মে, অনেক আমেরিকান নেটিজেন বুশনেলের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন, তাকে "যুক্তরাষ্ট্রের বিবেক" বলে অভিহিত করেছেন এবং মার্কিন সরকারের ইসরায়েল নীতির কারণে লজ্জিত হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেছেন। কিছু লোক এমনও প্রশ্নও করেছে যে: পশ্চিমা মূলধারার মিডিয়া, যারা "প্রেসের স্বাধীনতা" দাবি করে, কেন এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এত সময় নেয়? যে আমেরিকান পুলিশ বুশনেলকে আগুন ধরাতে দেখেছিল, তারা কেন তার দিকে তাদের বন্দুক তাক করেছিল এবং কেন উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি? কেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ "দুঃখ" প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কোনো প্রতিফলন দেখাতে পারে না?

 

গত বছরের অক্টোবর থেকে নতুন দফায় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে প্রায় ৩০ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে, আরো প্রায় ২০ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। এই রক্তাক্ত সংঘাত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যার মৌলিকভাবে সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। এটি ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ার মার্কিন নীতি এবং "আমেরিকান মানবাধিকারের"  ভণ্ডামি ও দ্বৈত মানদণ্ডের প্রতিফলন।

 

মধ্যপ্রাচ্যে আরও সামরিক বাহিনী পাঠানো থেকে শুরু করে ইসরায়েলকে প্রচুর পরিমাণে সামরিক সহায়তা প্রদান, আবার গাজায় যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব পাসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বারবার বাধা দেওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড ইসরায়েলকে আগুনে জ্বালানি দেওয়ার মতো আচরণ করছে। এর ফলে গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, গাজার পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হচ্ছে।

 

আরও গভীরভাবে তাকালে দেখা যায়, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যা সমাধান না হওয়ার জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক পণ্ডিত উল্লেখ করেছেন যে, দেশীয় রাজনীতি এবং আধিপত্য বজায় রাখার বিবেচনায়, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়, তাদের অপরাধ অগ্রাহ্য করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে। বর্তমান মার্কিন সরকার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত সমাধানের জন্য "দুই-রাষ্ট্র সমাধান" সমর্থন করার দাবি করলেও তা কখনই বাস্তবায়ন করতে চায়নি, শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিন-ইসরায়েলি সংঘাত একটি নতুন সংকট তৈরি করেছে।

 

বুশনেল "আত্মহত্যার মাধ্যমে মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছিলেন"- এটি আমেরিকান পণ্ডিত ডেভিড কর্ট্রাইটের মূল্যায়ন। এই তরুণ সেনার জীবনব্যাপী প্রতিবাদ আমেরিকান রাজনীতিবিদদের জন্য শঙ্কা বাজিয়েছে। "মানবাধিকারের" আড়ালে মানবাধিকার পদদলিত করা বন্ধ করতে হবে এবং "দুই-রাষ্ট্র সমাধান" পদ্ধতিকে নাগালের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে হবে। আমেরিকান রাজনীতিবিদদের কিছুটা বিবেকবোধ থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছে সিএমজি সম্পাদকীয়।

(শুয়েই/তৌহিদ)