‘মাখারুফেং’ বা মাখারু পর্বতশিখর
2024-03-01 19:21:58


এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও সিচাং-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর সিচাং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিচাং নিয়ে কথা বলব।

 

‘মাখারুফেং’ বা মাখারু পর্বতশিখরের উচ্চতা ৮৪৬৩ মিটার। এটি হিমালয়ের মাঝখানে অবস্থিত। বিশ্বে পঞ্চম সর্বোচ্চ শিখর এটি। উত্তর-পশ্চিম থেকে দেখলে, এটি এভারেস্ট পর্বত থেকে একটি সরলরেখায় মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিম পর্বত এবং দক্ষিণ-পূর্ব পর্বত বরাবর, মাকালু উত্তরে চীন ও দক্ষিণে নেপালের সীমান্তবর্তী।

 

এই লম্বা তুষারশিখর সারাবছর তুষারে আচ্ছাদিত থাকে। এর উপত্যকায় অনেক বিশাল হিমবাহ রয়েছে। কিছু বড় ও ছোট বরফ ফাটল তুষার অতল গহ্বরের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিছু জেগড বরফ ফাটল ক্লিফের সাথে জড়িত, যা নেকড়ের দাঁতের মতো ভয়ঙ্কর। এই তুষারশিখরের পাঁচটি শাখা শিখর রয়েছে: উত্তর-পশ্চিম রিজ, দক্ষিণ-পশ্চিম রিজ, উত্তর-পূর্ব রিজ, দক্ষিণ-পূর্ব রিজ, এবং উত্তর রিজ। দক্ষিণ-পূর্ব রিজ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০১০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত, উত্তর রিজ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭৮১৬ মিটার উঁচুতে অবস্থিত, এবং উত্তর-পশ্চিম রিজ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭৬৪০ মিটার উঁচু।

 

‘মাখারুফেং’ শিখরের জলবায়ু জটিল ও আনপ্রেডিক্টিবল। প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, এখানে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। তুষারপাতের ঘটনাও এন্তার। পরের বছরের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাপমাত্রা অনেক হ্রাস পায়। তখন শিখরে তাপমাত্রা মাইনাস ষাট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে এবং বাতাসের গতি হতে পারে সেকেন্ডে ৯০ মিটার। কেবল এপ্রিল ও মে এবং সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে, বেশ কয়েকটি দিন ভালো আবহাওয়া থাকে। অনেক পর্বতারোহী সেই সময়ে ‘মাখারুফেং’ বা মাখারু পর্বতশিখরে পা রাখতে আরোহণের কাজ শুরু করেন।

 

১৯৫৪ সালে, ফরাসি পর্বতারোহী দলের একজন সদস্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৬৪০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত ‘মাখারুফেং’ ২-এ আরোহণ করেন। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে, জাপানি পর্বতারোহী দলের দুই সদস্য দক্ষিণ-পূর্ব ‘ওয়েইফেং’-এ আরোহণ করেন, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮০১০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। ১৯৫৫ সালের মে মাসে, ৯ জন ফরাসি পর্বতারোহী প্রথমবারের মতো নেপালের বাকাং হিমবাহ বরাবর উত্তর-পশ্চিম পর্বতের স্যাডল পেরিয়ে চীনের উত্তর-পশ্চিম চূড়ায় পৌঁছান।

 

‘লাপুচিখাং ফেং’ বা লাপুচিখাং পর্বতশিখর

হিমালয়ের মাঝখানে, ‘সিসিয়াপাংমা ফেং’ এবং ‘চুওআওইয়ৌ ফেং’-এর মধ্যে অবস্থিত ‘লাপুচিখাং ফেং’ বা লাপুচিখাং পর্বতশিখর। এটি তিব্বতের নিয়ালাম এবং টিংরি কাউন্টির মধ্যে সীমানা পর্বত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৩৬৭ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। বাম ও ডান দিকে দুটি শিখর রয়েছে। পূর্ব শিখরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০৯৪ মিটার উঁচুতে এবং পশ্চিম শিখরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০৭২ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এই তিনটি শিখর অনেক দূরে প্রসারিত; প্রাকৃতিকভাবে পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তরে চারটি তীক্ষ্ণ শিখর নিয়ে গঠিত। এই বরফের শিখরগুলো কাঁটার মতো, বরফের ঢাল আয়নার মতো, হিমবাহগুলো রৌপ্য ক্যাসকেডের মতো। এসব মিলিয়ে ‘লাপুচিখাং ফেং’ দর্শনীয়। হিমালয়ের অন্যান্য তুষারশিখরগুলোর মতো, ‘লাপুচিখাং ফেং’ বা লাপুচিখাং পর্বতশিখরের চারপাশের জলবায়ু তীব্র এবং বিপজ্জনক। সেরা আরোহণের মরসুম এপ্রিল ও মে মাসের মধ্যে, তারপরে অক্টোবর ও নভেম্বর, যখন তুলনামূলকভাবে স্বল্প সময়ের জন্য ভালো আবহাওয়া থাকে। এই পর্বতটি তিব্বতের বিখ্যাত পবিত্র পর্বতগুলোর মধ্যে একটি।

 

 

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn  আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ঊর্মি/আলিম)