আকাশ ছুঁতে চাই ৫৮
2024-02-29 19:23:21

১. অদম্য উইগুর নারী গুজালনুর

২. দীর্ঘ ভ্রমণেও ভাবনা নেই মায়েদের

৩. প্রবীণদের পরিষেবা দিচ্ছেন তরুণী উ ইং

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

অদম্য উইগুর নারী গুজালনুর

 

জীবনে চলার পথ মসৃণ নয়। তাইতো জীবনে সফলতা পেতে হলে শত বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। কষ্ট ও সাধনা ছাড়া কখনো সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো যায় না। আর নারীদের জন্য এ যাত্রা আরও কষ্টসাধ্য। নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, অদম্য ইচ্ছা থাকলে তবেই সফল হতে পারেন একজন নারী। তেমনি এক অদম্য চীনা নারী গুজালনুর আবলিমিত। বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে..

 

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে উইগুর জাতির জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে চীন সরকার বছরের পর বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রচেষ্টার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেন গুজালনুর আবলিমিত।

                                               

জীবনের কঠিন সময়গুলো পেরিয়ে অবশেষে একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। ৪২ বছর বয়সী গুজালনুর আবলিমিত কাশগর প্রিফেকচারের ইয়ারকান্ট কাউন্টিতে রুটি তৈরির ব্যবসা করে সফল হয়েছেন। বর্তমানে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চীনজুড়ে। পাশাপাশি তার এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কয়েক ডজন নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি ১৪তম সিনচিয়াং পিপলস কংগ্রেসে সফল নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন গুলজানুর। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি ২০১৮ সাল থেকে আঞ্চলিক বিধানসভার ডেপুটি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

১৪তম সিনচিয়াং পিপলস কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালে ‘ইয়ারকান্ট হ্যাপি গার্ডেন ফুড কোম্পানি’র এ প্রতিষ্ঠাতা জানান, তার স্বপ্ন ছিল একজন উদ্যোক্তা হওয়ার।

গুজালনুর আবলিমিতকে আজকের এ পর্যায়ে আসতে পারি দিতে হয়েছে কঠিন পথ। ২০০৫ সালে সিনচিয়াং নর্মাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটি মিডল স্কুলে ভূগোলের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এরপর তিনি একটি বৃত্তিমূলক স্কুলে গার্মেন্ট ডিজাইন এবং উৎপাদন কারখানায় প্রশিক্ষকের কাজ করেন। এর মধ্যেই ২০১৫ সালের জুলাই মাসে অসুস্থতার কারণে সে চাকরিটিও ছাড়তে হয়।

সুস্থ হয়ে তিনি মাত্র ৫০ হাজার ইউয়ান (৭ হাজার ডলার) নিয়ে পোশাক এবং হস্তশিল্প ব্যবসার মতো একটি দুঃসাহসিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু সে ব্যবসায়ও তিনি খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে এরপর খাবারের ব্যবসা শুরু করেন। রুটি তৈরির ব্যবসা শুরুর পূর্বে তিনি পেশাদারদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

রুটির ব্যবসা শুরুর জন্য তিনি তার বাড়ি বিক্রি করেন এবং ইয়ারকান্ট কাউন্টি গ্রামীণ ক্রেডিট সমবায় থেকে ঋণও নেন।

২০১৮ সালে রুটির কারখানা শুরু করেন গুজালনুর। কারখানাটি শুরুর পর পরই লাখ লাখ ইউয়ানের রুটি বিক্রি হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

বর্তমানে তার ব্যবসার পরিধি আরও বেড়েছে। স্কুল, হাসপাতাল এবং দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে এসব রুটি। বর্তমানে তার মাসিক বিক্রি ৫ থেকে ৬ লাখ ইউয়ানে পৌঁছেছে। কোম্পানিটি প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি রুটি উৎপাদন করে এবং বার্ষিক বিক্রয় ১০ মিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে।

 পাশাপাশি এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে প্রায় ২০ জন নারী কাজ করছেন। তাদের সম্মানজনক বেতনও দেওয়া হচ্ছে।

তার এ কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নারীরা। তাদের আয়ের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি পারিবারিক মর্যাদাও বেড়েছে এই নারীদের। এ সাফল্যের জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং সরকারের সহযোগিতাকে কৃতিত্ব দিয়ে ইয়ারকান্ট হ্যাপি গার্ডেন ফুড কোম্পানি’র এ প্রতিষ্ঠাতা গুজালনুর আবলিমিট বলেন, “কারখানা খোলার জন্য যখন আমার টাকা প্রয়োজন হয় তখন সরকারী কর্মীরা আমাকে সুদহীন ঋণ পেতে সহায়তা করে। আমার যখন কোনো বিক্রয় চ্যানেল ছিল না, তারা আমাকে বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তারা প্রশিক্ষণ ক্লাসের ব্যবস্থা করে এবং অনেক ভর্তুকি দিয়েছে।”

এদিকে গত আগস্ট মাসে ইয়ারকান্ট কাউন্টি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রামে একটি কৃষি খামার চালুর পরিকল্পনা করেছেন তিনি। এই খামারে হাঁস-মুরগি, ছাগল পালন এবং ডিম ও দুধ বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে তার।

গুজালনুরের জীবনের গল্প অন্যান্য উইগুরদের উদ্যোক্তা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করছে।

গুজালনুরের ইচ্ছা সামনের দিনগুলোতে তিনি তার সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান এবং আরও বেশি উইগুর নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সুযোগ তৈরি করে দিতে চান।

প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

দীর্ঘ ভ্রমণেও ভাবনা নেই মায়েদের

চীনে সদ্য সমাপ্ত বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে অনেক দীর্ঘপথ ভ্রমণ করেছেন অনেক মানুষ। শিশুদের নিয়ে দীর্ঘপথ ভ্রমণ করতে অনেকেরই সমস্যা হয়। কিন্তু যানবাহন যদি হয় শিশুবান্ধব তাহলে আর ভাবনা থাকে না মায়েদের। চলুন শোনা যাক এমন শিশু বান্ধব পরিবহনের গল্প।

বেইজিং থেকে নাননিং। ২৫০০ কিলোমিটার যাত্রাপথ। প্রায় ২৩ ঘন্টা কাটাতে হবে ট্রেনের ভিতর। চঞ্চল ছোট শিশুদের নিয়ে যাত্রা করা মায়েদের ভাবনার  শেষ ছিল না। কিন্তু দেখা গেল শিশুরা দিব্যি আনন্দে সময় কাটাচ্ছে। মা বাবা রয়েছেন নিশ্চিন্তে। এটা সম্ভব হয়েছে ট্রেনের ভিতরে শিশু কর্নার খোলার কারণে।

বসন্ত উৎসবের যে ট্রাভেল রাশ সেসময় বিশেষভাবে বেইজিং থেকে নাননিং যাওয়ার পথে ট্রেনে শিশু কর্নার খোলা হয়। ট্রেনের কনডাকটার তোং লিছিয়ং একজন উদ্যমী নারী। তিনি জানান শিশু কর্নারে বই পড়া, ছবি রং করা, পেপার কাটিং , ব্লক দিয়ে বাড়ি বানানো ও নানা রকম গেমের ব্যবস্থা করেন তিনি। তিনি জানান, দীর্ঘযাত্রাপথে একটু বড় শিশুরা সারাক্ষণ মোবাইলে গেম খেলার ফলে তাদের শারিরীক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই শিশুদের জন্য ছবির বই, রং করার জন্য কালারিং বুক ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। আর ছোট শিশুদেরও নানা রকম খেলার ব্যবস্থায় ব্যস্ত রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়।

এই ট্রেনে একজন মা তার মেয়েকে নিয়ে ভ্রমণ করছিলেন। দাই নামের ওই মা জানান তার চার বছরের শিশুকন্যা ট্রেনের ভিতরে খুব আনন্দে সময় কাটিয়েছে। মেয়েটি মনের আনন্দে ছবির বইতে রং পেন্সিল দিয়ে ছবি রং করেছে।

 

আরেকজন মা জানান তার  আট বছরের শিশুকন্যা ট্রেনের ভিতরে পুতুল খেলা খুব উপভোগ করেছে।

এই ট্রেনের অ্যাসিসটেন্ট কনডাকটরও ছিলেন একজন নারী। লু হুয়াতোং নামে ২৭ বছরের  ওই তরুণী কর্মী শিশুদেরকে মায়ের যত্ন দিয়ে সময় কাটাতে সাহায্য করেছেন।

শিশু বান্ধব এই ট্রেন সার্ভিস অন্য রুটের ট্রেনগুলোর জন্যও উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

প্রবীণদের পরিষেবা দিচ্ছেন তরুণী উ ইং

প্রবীণ নাগরিকদের পরিষেবা দিচ্ছেন একজন তরুণী উ ইং। কাজটি মোটেও সহজ নয়। চলুন শোনা যাক সেই গল্প।

চীনে প্রবীণ নাগরিকদের যত্ন নেয়ার বিষয় দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে। প্রবীণদের যত্ন নেয়ার কাজে এগিয়ে আসছেন নতুন প্রজন্মের অনেকে। এমনি একজন তরুণী উ ইং। ৩৫ বছর বয়সী উ ইং বাস করেন লিয়াওনিং প্রদেশের শ্যনইয়াং সিটিতে । তিনি বাথ এইড সার্ভিস বা স্নান সহায়ক পরিষেবার একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন।


বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য স্নান করার বিষয়টিও অনেক জটিল হতে পারে। অসুস্থ ও চলাচলে অক্ষম প্রবীণদের এই স্নান সেবা দেয়ার বিষয়টিকে বেশ চ্যালেঞ্জিং বলেই মনে করেন উ ইং।

চীনের মোট জনগোষ্ঠীর ২১.১ শতাংশ হলেন প্রবীণ। তাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এদের জন্য সহায়ক নীতিমালা রয়েছে চীনে। প্রবীণদের পরিষেবাদানের পেশায় দিনে দিনে আরও বেশি সংখ্যক নারী যোগ দিচ্ছেন।

তারা শুধু পরিচর্যা নয়, প্রবীণ নাগরিকদের সাহচর্য দিচ্ছেন, তাদের সঙ্গে গান গেয়ে, গল্প করে সময় কাটাতে সাহায্য করছেন।

 

তাদের কাছে এই প্রবীণ ব্যক্তিরা নিজের দাদা-দাদী বা নানা নানীর মতোই আপনজন। এদের যত্ন নিয়ে,  এদের সঙ্গে গল্প করে, গান গেয়ে তাদের জীবনে ভালোবাসার সুবাতাস বয়ে আনছেন তারা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

কণ্ঠ: আফরিন মিম

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল