‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৫৯
2024-02-28 19:40:19

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।

 

১. একটি সাধারণ দোকান যেভাবে তরুণদের কাছে অসাধারণ হয়ে উঠলো

তিরিশ বছর বয়সী তরুণ লিউ সিনইয়ু একটি শপিং মলে একটি সাধারণ দোকান মালিক। কিন্তু তার এই সাধারণ দোকানটি হয়ে উঠেছে শপিং মলের প্রাণকেন্দ্র।  বেইজিং শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সে নতুন শপিং মল। মলের ওই দোকানটি এখন বহু তরুণের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

 

গ্রাহকদের জন্য একটি ভাল কেনাকাটার অভিজ্ঞতা দিতে একটি নতুন ব্যবহার প্যাটার্ন গ্রহণ করে ব্যবসা শুরু করেন লিউ। তিনি নিজে একজন সাইকেলচালক ছিলেন। আর নতুন উদ্ভাবনী পরিকল্পনা নিয়ে একটি সাইকেলের দোকান দিয়েই শুরু করেন ব্যবসা কার্যক্রম।

 

সামাজিক যোগাযোগ চাহিদা পূরণের একটি মাধ্যম হতে পারে তার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান - এমন একটি বিষয়ও মাথায় রেখে কাজ করছেন তিনি। এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে।

 ‘দ্য বক্স’ নামে পরিচিত এই শপিং মলটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে চালু হয়। আর অল্প সময়ের মধ্যেই রাজধানী শহরের তরুণদের জন্য একটি আইকনিক মিলনমেলার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে এটি।

 

এবার বসন্ত উৎসবের ছুটির সময়, মলটি বিপুল সংখ্যক দর্শক আকর্ষণ করেছে। তরুণদের আড্ডার মতো সামাজিক যোগাযোগ চাহিদা মেটাতে এবং সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি স্থান হয়ে উঠেছে এই মলটি।

 

 

তরুণদের রুচি, ইচ্ছে, পছন্দ ও আগ্রহের কথা বিবেচনায় রেখে বাইক কাস্টমাইজ করে দেওয়া লিউয়ের এই দোকানের বিশেষত্ব। মৌলিক উপাদান থেকে আলংকারিক উপাদান পর্যন্ত, সাইকেলচালকরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী বাইক তৈরি করে নিতে পারেন।


সাইকেল তৈরিকে একটি ফ্যাশন শিল্পের মতো বলে মনে করেন লিউ সিনইয়ু।

 

‘এখানে অনেক বাইক রাখা আছে। এখান থেকে গ্রাহকদের সম্পূর্ণ বাইক কিনতে হয় না। এমন কি স্ক্রুর মতো ছোট ছোট জিনিসগুলোও কাস্টমাইজ করা যেতে পারে। আমাদের দোকানটি ফ্যাশন শিল্পের নির্বাচিত দোকানগুলোর মতো।’

লিউয়ের সাইক্লিং ক্লাব এর ইমধ্যেই ৫ শ’ জন সদস্যকে আকৃষ্ট করেছে, যারা তার ব্যবসাকে সমর্থনকারী নিয়মিত গ্রাহক। 

লিউয়ের সাইকেলের দোকানের মতোই, শপিং মলে বিভিন্ন ধরনের দোকান রয়েছে এবং খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেওয়া এবং কিছু সময় নিজেদের মতো করে উপভোগ করা যায় - এমন সুযোগ থাকায় শপিং মলটি ধীরে ধীরে তারুণ্যবান্ধব হয়ে উঠছে।

 

 

ছয় মাসেরও কম সময়ে, শপিংমলটি একটি বিখ্যাত খুচরা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

 

শপিং মলটি তরুণদের মধ্যে ব্যবহারকে উদ্দীপিত করার জন্য একটি নতুন ব্যবসার প্যাটার্ন গ্রহণ করেছে বলে জানান জেনারেল মার্চেন্ডাইজ বিষয়ক চায়না কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ইয়াং ছিংসং।

 

"যেহেতু বৃহৎ বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সগুলো তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে, অভিজ্ঞতা ও ফ্যাশন ধারাকে কেন্দ্র করে ব্যবসার প্যাটার্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে৷ এই নতুন পদ্ধতি বিনোদন ও কিউরেশন করে এমন একটি স্থান তৈরি করে যেখানে তরুণরা নিজেদের মধ্যে একটি অনুভূতি খুঁজে পেতে পারে৷ একই রকম ধারণার আদান-প্রদান এই বয়সীদের মধ্যে ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দেয়।" 

এদিকে, মল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত ১৫ লাখেরও বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে সেখানে।

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক: ফয়সল আব্দুল্লাহ

 

২.চীনে ফের জমে উঠেছে চাকরির উৎসব।

 

এ বছরও চীনে ধারাবাহিকভাবে শুরু হয়েছে চাকরির মেলা। আয়োজনের নাম অপারেশন স্প্রিং ব্রিজ। চাকরিপ্রার্থীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়া এবং এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের যাবতীয় আয়োজন নিয়ে হাজির হয়েছে চীনের মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়।

যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীদের কাজ যোগাড় করে দেওয়াই মূলত এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। চাকরি যারা খুঁজছেন তাদের সঙ্গে নিয়োগকর্তাদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনলাইন ও অফলাইনে।

 

‘আমি অনেক বছর ধরে চিয়াংসু ও চেচিয়াং প্রদেশের পোশাক কারখানায় কাজ করছি। আমার নিজের শহর হুয়াইবিনে বসন্ত উৎসবের ছুটি কাটাতে গিয়ে জানতে পারলাম সেখানে অনেক পোশাক ও বস্ত্র কারখানা আছে। তাই এ আয়োজনটি অনুসরণ করছি যাতে ভবিষ্যতে আমি আমার নিজ এলাকাতেই একটা ক্যারিয়ার গড়তে পারি।‘

সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দিতে এখানে উদ্যোগী ভূমিকা রাখছে নগর প্রশাসন। বিশেষ করে চাকরি সন্ধানী ও নিয়োগদাতারা যাতে একে অপরকে জানতে পারেন তা নিয়েও সচেষ্ট তারা।

 

‘এখানে যারা ছুটি কাটাতে এসেছিলেন তাদের মধ্য থেকে ১৮০ জনকে একত্রিত করেছে চাওচি নগর কর্তৃপক্ষ। তারা এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তাদের মধ্য থেকে ৩৮ জন এই চাকরির মেলায় এসে ফর্মও পূরণ করেছেন।‘

 

পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের নানছাং শহর থেকে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে চলছে নিয়োগ কার্যক্রম। এতে সরাসরি মত বিনিময় করেছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

 

এদিকে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি একই আয়োজন শুরু হয় সিছুয়ানেও। আঞ্চলিক সেখানকার মানবসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে ছোংছিং, চিয়াংসু এবং চেচিয়াংসহ আটটি প্রদেশ ও শহরের একই বিভাগের সঙ্গে আঞ্চলিক কর্মসংস্থান সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে।

 

এ ধরনের চুক্তির ফলে প্রতিষ্ঠানের চাহিদার সঙ্গে যোগ্যতা ও দক্ষতার মিলকরণের পাশাপাশি কর্মীদের প্রশিক্ষণ নিয়েও কাজ করা সম্ভব হবে বলে জানান সিছুয়ানের চাকরিপ্রদান সেবা সংক্রান্ত এক কর্মকর্তা।

 

‘সিচুয়ানে ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি অভিবাসী শ্রমিক আছে। এই চুক্তিগুলোর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হলো একটি সুনির্দিষ্ট শ্রম সরবরাহের প্লাটফর্ম তৈরি করা। এটি শ্রমিক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি নিখুঁত বন্ধন নিশ্চিত করবে।‘

মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অপারেশন স্প্রিং ব্রিজ উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে চীনের নিয়োগকর্তারাও। এ উৎসবে অনলাইন ও অফলাইনে ৩২০টিরও বেশি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান একযোগে প্রকাশ করেছে ৩০ হাজার কাজের সুযোগ। আবার আয়োজক কর্তৃপক্ষ এ আয়োজনে রেখেছে নানা ধরনের বৃত্তিমূলক নির্দেশিকা ও পরামর্শ প্রদান কর্মসূচি।

 

এমনকি কর্মীদের নানা সুযোগ সুবিধাও দেখতে শুরু করেছে এ মন্ত্রণালয়। বসন্ত উৎসবের শেষে কর্মীরা যাতে ঠিকঠাক কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারে সে জন্য স্থানীয় মানবসম্পদ বিভাগগুলো চালু করেছে বিশেষ ট্রেন ও বাস।

 

২৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ চাকরি মেলা চলবে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট তথ্য সূত্র বলছে, এই মেলা থেকে মোট ৩ কোটি চীনা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে।

 

প্রতিবেদক : ফয়সল আব্দুল্লাহ

সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

 

৩. শিচিয়াচুয়াংয়ে কর্মসংস্থান প্রচারের ইভেন্ট চালু

 

এদিকে,মাল্টি-মিডিয়া পদ্ধতিতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে কর্মসংস্থানের জন্য একটি প্রচারমূলক একটি ইভেন্টের আয়োজন করেছে চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি। সম্প্রতি উত্তর চীনের হ্যপেই প্রদেশের শিচিয়াচুয়াংয়ে এই ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। এই ইভেন্ট চালু করতে পাঁচটি প্রদেশ ও  পৌরসভার সঙ্গে সহযোগিতা করে সিএমজি।  এটি সিএমজি’র সিসিটিভি-১৭ চ্যানেলে প্রচার করা হয়।

 

আর প্রচারের ক্ষেত্রে কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক, মানবসম্পদ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ে চীনের পাঁচটি প্রাদেশিক-স্তরের জেলা - দুটি পৌরসভা, বেইজিং, থিয়ানচীন এবং তিনটি প্রদেশ, হ্যপেই, শানতোং এবং চিয়াংসুকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়।  ইভেন্ট চলাকালীন, ১৪০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৫ হাজার ৯শ’ ২৮টি পদ চাকরিপ্রার্থীদের অফার করেছে।

একই সময়ে, শিচিয়াচুয়াং, ছেংতু, শিংথাই এবং হ্যপেই প্রদেশের হানতানসহ অন্যান্য স্থানে এবং বেইজিং, থিয়ানচিন, শানতোং এবং চিয়াংসুতে অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানোর অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়। 

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সিসিটিভি সেভেনটিনে হ্যপেই প্রাদেশিক মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে মিডিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের প্রচারের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। 

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।  

 

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী