এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। চীনা সংস্কৃতিতে মুগ্ধ বাংলাদেশি
২। ঘুরে আসুন কুনমিংয়ের চিডিয়াখানা থেকে
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫৯তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। সাক্ষাৎকার পর্ব- চীনা সংস্কৃতিতে মুগ্ধ বাংলাদেশি
বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলার সন্তান জাহিদ হাসান তুহিন। পড়ালেখা করেছেন চিয়াংসু প্রদেশের এগ্রি-এনিম্যাল হাজবেন্ডারী ভোকেশনাল কলেজে চায়না ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড মেকানিক্যাল ইন্ট্রিগ্রেশন টেকনোলজিতে।
বর্তমানে তিনি এনার্জি চায়না অর্থাৎ চায়না এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান টিইপিসির একজন কর্মী হিসাবে বাংলাদেশের পটুয়াখালীতে নির্মাণাধীন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ পর্বে কথা হয়েছে সঙ্গে । তিনি জানিয়েছেন তার ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার গল্প।
· ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি? –
তুহিন- ভালো আছি।
· আপনি তো বেশ কয়েক বছর চীনে ছিলেন। পড়ালেখা করছেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে।পড়ালেখার পাশাপাশি , নিশ্চয়ই অনেক জায়গায় ঘুরার সুযোগ হয়েছে। আমরা জানতে চাই আপনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন?
তুহিন- আমি জিয়াংসু প্রদেশে থাইচৌ শহরে ছিলাম। তাই এই শহরের পাশাপাশি আমি আরও বেশ কয়েকটি শহরে ঘুরেছি। এই মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইয়াংচৌ, লিয়ানয়ুনকান ও চেনচিয়াং শহরে ঘুরেছি।
· এই জায়গাগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
তুহিন- এই জানয়াগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ ছিল। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই সেখানে গিয়েছিলাম। একটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের পর আমরা আশে পাশের এলাকায় ঘুরে বেড়াই। এছাড়া এই শহরের অবস্থিত ইয়ুনথাই পাহাড়ে আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম। অনেক উঁচুতে আমাদের উঠতে হয়েছিল। সেসময় আমাদের সঙ্গে থাকা পানিও শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেখানে অনেক উঁচুতে উঠে এক দম্পতির সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সেই পাহাড়ের ইতিহাস সম্পর্কে জেনেছি। তারাও আমাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক আগ্রহ দেখিয়েছিল। তারা আমাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছিল।
শুধু তারাই নন, পাহাড় আরোহণ করতে আমাদের যাদের সঙ্গেই দেখা হচ্ছিল,তারাই আমাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছিল। যেহেতু আমাদের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো আমরা বিদেশী তাই তারা খুব কৌতুহলী ছিল।
এই শহরের মতো একইরকম ভালো অভিজ্ঞতা ছিল ইয়াংচৌ এবং চেনচিয়াংয়েও। চীনারা খুবই অতিথিপরায়ন। বিদেশীদেরকে নানাভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করেন তারা। নতুন পরিবেশে আমরা কতটা মানিয়ে নিতে পারছি সেটাও তারা অনুধাবন করার চেষ্টা করেন।
এই শহরগুলোতে ঘুরে শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করেছি।
· চীন একটি ভিন্ন সংস্কৃতি, তাদের খাবার ভিন্ন, ভাষাও ভিন্ন কিভাবে এই দীর্ঘ সময় সেখানে কিভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন?
তুহিন- শুরুর দিকে দুশ্চিন্তা কাজ করছিল। যেহেতু আমরা বাঙালি, আমাদের খাবার ভিন্ন, ভাষা অন্যরকম, সংস্কৃতিও অন্যরকম। তাই খাপখাওয়ানো নিয়ে বেশি ভয় কাজ করছিল। আমাদের আগেও যারা গিয়েছেন, বাংলাদেশি তারা আমাদের খুব সাহায্য করেছেন। তারা শিখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে সহজে আমরা খাপখাওয়াই নিতে পারি। ধীরে ধীরে আমরা চীনাদের সঙ্গে মিশতে শুরু করি। পরবর্তীতে আমরা ভাষাটাও রপ্ত করে ফেলি। বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ভাষা চীনা ভাষা। এই কঠিন ভাষাটা বেশিরভাগ বাংলাদেশি আয়ত্ব করে নিয়েছে।
খাবারটার সঙ্গেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি। কিছু চীনা খাবার একবার খেলে সেটা প্রিয় খাবারের তালিকায় চলে আসে।
চীনা সংস্কৃতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। আমিও তাই হয়েছি।
· বাংলাদেশের অনেকেই আছে যারা চীনে ঘুরতে যেতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন?
তুহিন- ঘুরার জন্য যেতে চাইলে চীন অন্যতম একটি দেশ হবে। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি, বিশেষ করে দেশটির আধুনিকতার ছোঁয়া যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
· আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
তুহিন- আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ , আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ – আফরিন মিম
২। ঘুরে আসুন কুনমিংয়ের চিডিয়াখানা থেকে
কুনমিং শহরের প্রাণকেন্দ্রে ইয়ুয়ানথোং পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত কুনমিং চিড়িয়াখানা। ইয়ুয়ানথোং মাউন্টেন জু নামেও এই চিড়িয়াখানা পরিচিতি। কুনমিং শহরের ফানলোং জেলায় এর অবস্থান।
বছরের সব সময়েই এই চিড়িয়াখানা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। কারণ এখানে সারা বছর নানা রকম মৌসুমি ফুল ফোটে। কুনমিং শহরকে বলা হয় ফুলের শহর এবং চির বসন্তের শহর। চিড়িয়াখানার ভিতরে বিশাল বাগান রয়েছে। সেই বাগানে সারা বছর কোন না কোন ফুলের শোভা দেখা যায়।বিশেষ করে বসন্ত কালে এখানে চেরিব্লজমের যে শোভা তা সত্যিই অনন্য সুন্দর।
১৯৫০ সালে সীমিত পরিসরে এই চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয় এবং ১৯৫৩ সালে কুনমিং চিড়িয়াখানা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। চীনের দশটি সেরা চিড়িয়াখানার অন্যতম হলো কুনমিং জু। এখানে ১৪০ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারও রয়েছে। বাংলার বাঘকে বলা হয় মংচিয়ালা হু। এখানে বাঘগুলোকে খাঁচায় না রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখা হয়। দর্শকরা নিরাপদ দূরত্ব থেকে তাদের দেখতে পারেন।
চিড়িয়াখানাটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। রয়েছে কালো ভালুকের পাহাড়, বিরল প্রজাতির প্রাণীর এলাকা, জুরাসিক পার্ক, ময়ুর বাগান, হরিণ পার্ক, পানডা হল এবং লায়ন টাইগার মাউন্টেন ভিলা। এই চিড়িয়াখানায় আরও রয়েছে ইয়ুননানের স্থানীয় হাতি, বাইসন, হর্নবিল পাখি এবং রেড পান্ডা। চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলের এবং বিশ্বের অনেক দেশের জীবজন্তু এখানে রয়েছে । সাইবেরিয়ান টাইগার, ক্যাংগারু, টার্কি, গন্ডার, জিরাফ, ভালুক, সিংহ, লামা রয়েছে। এখানে ইয়ুননানের স্নাব নোজড মাংকি রয়েছে। এরা অত্যন্ত বিরল প্রজাতির বানর।
চিড়িয়াখানার ভিতরে রয়েছে একটি ময়ুর বাগান। এই বাগানের ভিতর অনেক ময়ুর ছাড়া অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়। ময়ুরের সঙ্গে বসে ছবি তোলারও ব্যবস্থা আছে। এখানে ইয়ুননানের প্রতীক সাদা ময়ূরও আছে যা অত্যন্ত সুন্দর।
চিড়িয়াখানায় পাখির এলাকাটি আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। এখানে পাখিরা স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়াতে পারে। চিড়িয়াখানার ভিতরে অ্যাকুরিয়াম রয়েছে যেখানে জলজ জীব দেখা যায়। এর মধ্যে সিলমাছও রয়েছে।
চিড়িয়াখানার ভিতরে বিনোদনের অন্যান্য ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি রোলার কোস্টার, ফেইরি হুইল ও অন্যান্য মজার রাইড। প্রায়ই চিড়িয়াখানার ভিতরে মেলা বসে। জুরাসিক পার্ক এরাকায় ডায়নোসরের বিশাল বিশাল প্রতিকৃতি রাখা হয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে রেস্টুরেন্ট ও সুভেনির শপও।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী