ফেব্রুয়ারি ২৭: মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয় সম্প্রতি তথাকথিত ‘চীনের ডব্লিওটিওতে যোগদানের পর প্রতিশ্রুতি পালন সম্পর্কিত ২০২৩ সালের প্রতিবেদন’ প্রকাশ করেছে, যা প্রতিশ্রুতি পূরণে চীনের কর্মদক্ষতাকে অস্বীকার করে, চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং নীতিগুলোকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে তুলে ধরে এবং চীনকে প্রচুর নিন্দামন্দ করা হয়েছে। একটি প্রতিবেদন দিয়ে প্রকৃত অবস্থাকে আড়াল করে যুক্তরাষ্ট্র কেন বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়? তারা আসলে একটি ভুল চাল দিয়েছে, কারণ ঘটনাটি পরিষ্কার।
কীভাবে ডব্লিওটিওতে যোগদানের পর চীনের দায়িত্ব পালনকে মূল্যায়ন করা যায়? যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউটিওর নিয়মের উপর ভিত্তি করে বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করে না, বা চীনের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত ‘প্রোটোকল’ এবং "চীনের যোগদানের বিষয়ে কর্ম গ্রুপের প্রতিবেদন"কে তার মান হিসাবে ব্যবহার করে না। পরিবর্তে, তার নিজস্ব মান নির্ধারণ করে। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে এটি মার্কিন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় যে, মার্কিন রিপোর্টটি চীনের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগদান এবং চীনা বৈশিষ্ট্যসহ সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ উল্টো হিসাবে বাস্তবায়নের মূল মূল্যায়নের মানদণ্ড নির্ধারণ করে এবং চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে চায়। এই মার্কিন রিপোর্টের শুরু থেকেই অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।
প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুগুলোকে পর্যবেক্ষণ করলে, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে এবং চীন তার ডব্লিউটিওতে যোগদান এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে তাকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছে, এবং এ জন্য তার কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
মাত্র ২০২৩ সালে, চীন মৎস্য ভর্তুকি চুক্তির অনুমোদন সম্পন্ন করা প্রথম প্রধান উন্নয়নশীল দেশ হয়ে ওঠে, চীন বিনিয়োগ সুবিধা চুক্তির আলোচনার সমাপ্তির নেতৃত্ব দেয়, আংশিক বৈশ্বিক ডিজিটাল বাণিজ্যের বিষয়ে আলোচনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে ডব্লিউটিওকে উন্নীত করে, এবং সব পক্ষের কাছ থেকে উচ্চ স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ডব্লিউটিও-তে চীনের যোগদানের পর থেকে, চীনের সামগ্রিক শুল্ক স্তর ২০০১ সালে ১৫.৩ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ৭.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। কৃষি পণ্যের গড় শুল্ক স্তর অন্যান্য উন্নয়নশীল এবং উন্নত সদস্যদের তুলনায় অনেক কম, এবং ডব্লিউটিওকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমদানি পরিমাণের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে।
শুধু তাই নয়, চীন সক্রিয়ভাবে তার ডব্লিউটিও প্রতিশ্রুতির চেয়ে আরো বেশি করেছে, একটি আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত নেতিবাচক তালিকা ব্যবস্থাপনা চালু করেছে এবং বিদেশী বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত বিদেশী বিনিয়োগ পেতে বিশেষ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা (নেতিবাচক তালিকা) পরিষেবা শিল্পের মূল ক্ষেত্রগুলো আগের চেয়ে আরও উন্মুক্ত করেছে। অবকাঠামো ক্ষেত্রে, ৫ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার শহরের জল সরবরাহ এবং নিষ্কাশন পাইপের নির্মাণ ও পরিচালনা নেটওয়ার্কগুলোকে অবশ্যই চীনের দলগুলোর নিয়ন্ত্রণ করার নীতি বাতিল করা হয়েছে।
যা হোক, চীনের এই বাস্তব পদক্ষেপগুলো মার্কিন প্রতিবেদনে সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে। এটা কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্বেচ্ছা অন্ধত্ব’?
প্রতিবেদনে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বৈধ বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ‘অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ হিসাবে ভুলভাবে বর্ণনা করেছে এবং মার্কিন অবরোধ ও দমনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে চীনের পদক্ষেপগুলোকে ‘সক্রিয় ডিকাপলিং’ বলা হয়েছে। এটি মিথ্যা তথ্যের একটি নির্লজ্জ বিস্তার, যা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আচরণের প্রতিফলন।
একটি মিথ্যা হাজার বার বললেও মিথ্যা। মার্কিন প্রতিবেদনটি যেভাবেই তৈরি করা হোক না কেন, এটি একটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিবেদন এবং একটি মিথ্যা প্রতিবেদন হিসাবে এর প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারে না।
ঘটনাগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করেছে যে চীন কেবলমাত্র তার ডব্লিওটিও প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে তা নয় বরং ডব্লিওটিও নিয়মগুলো রক্ষা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রচারের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং বহুপাক্ষিকতার প্রকৃত অনুশীলনকারী হয়েছে। চীনকে আক্রমণ করার পরিবর্তে, যুক্তরাষ্ট্রের বরং নিজেদের দিকে তাকাতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
(শুয়েই/হাশিম)