বসন্ত উৎসবের ছুটি উদযাপনে এখন সংস্কৃতির প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে পর্যটন। বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে, বসন্ত উৎসবের ছুটিতে অভ্যন্তরীণ পর্যটন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ব্যাপক হারে। কোভিড-১৯ মহামারির আগের সময় অর্থাৎ ২০১৯ সালের বসন্ত উৎসবের সময়ের পর্যটক-সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে এবারের পর্যটক-সংখ্যা। দর্শনীয় স্থানগুলোর টিকিটের অর্ডার গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ছিল ৬০ শতাংশেরও বেশি। আর দেশের বাইরের টিকিটের অর্ডার ছিল ২০১৯ সালের চেয়ে ১৩০ শতাংশ বেশি।
বসন্ত উৎসব উদযাপনের ইতিহাসে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী উৎসবটিতে নতুন কিছু উপাদান যোগ হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের রোমাঞ্চকর সাংস্কৃতিক পর্যটন এখন নববর্ষের নতুন রীতিতে পরিণত হয়েছে যেন। এটি শুধু ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসবকেই সমৃদ্ধ করে না, পাশাপাশি প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ও সংস্কৃতির গভীরতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাও ফুটিয়ে তোলে। এতে বিভিন্ন স্থানের সাংস্কৃতিক পর্যটনের বাজারও সম্প্রসারিত হয়।
চীনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, হোটেল ও রেস্তোঁরা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও রেলপথের মতো খাতগুলো চলতি বসন্ত উৎসবে বেশ মুনাফা করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিদেশি দর্শনীয় স্থানগুলোর টিকিটের অর্ডারও ২০১৯ সালের চেয়ে ১৩০ শতাংশ বেড়েছে। তার মানে বসন্ত উৎসবের ছুটি চলাকালে চীনা পর্যটক বিশ্ব পর্যটনে তথা বিশ্ব অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতেও বিশেষ অবদান রাখছে।
ছুটি চলাকালে ‘সাংস্কৃতিক পর্যটন ভোজ’র ব্যবস্থা করা হয় বিভিন্ন স্থানে। যেমন সমৃদ্ধ ও গভীর পর্যটন সম্পদের ভিত্তিতে বসন্ত উত্সব চলাকালে বেইজিংয়ে ‘সংস্কৃতি নববর্ষ উদযাপন, ‘অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নববর্ষ উদযাপন, এবং ‘বরফ-তুষার নববর্ষ উদযাপন’সহ ছ’টি ব্যবস্থায় মোট ৭ হাজারেরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পর্যটন সম্পদ হোক অথবা বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক পর্যটন-অনুষ্ঠান হোক - সবই শহরবাসী ও পর্যটকদের পর্যটন পণ্যভোগ উদ্দীপিত করে। অন্য সরকারি ছুটি এবং ঐচ্ছিক ছুটির সময়ে মানুষ চাহিদামতো ভ্রমণ করতে পারে না। তাই অনেক মানুষ বসন্ত উত্সবের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ভ্রমণ করতে যান। পাশাপাশি আরও বেশি তরুণ-তরুণী ঐতিহ্যবাহী নববর্ষ উদযাপন পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসন্ত উত্সব উদযাপন করেন এবং এ ছুটির নতুন তাত্পর্য সৃষ্টি করেন। পর্যটনের মাধ্যমে নববর্ষ পালন করা নতুন একটি কার্যক্রমে পরিণত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে দেখে গেছে, চলতি বছরে বসন্ত-উত্সব পর্যটন ২০২৩ সালের একই সময় বা ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় আরও প্রসারিত হয়েছে। পর্যটন কার্যক্রম যোগানোর ফলে ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সবে নতুন তাত্পর্য যুক্ত হয়েছে। জনগণ আনন্দদায়ক পারিবারিক পুনর্মিলন উপভোগ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক পর্যটন অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে পারেন। আসলে নববর্ষ উদযাপন ঐতিহ্যবাহী খাদ্য ও চিত্তবিনোদন থেকে আরও সমৃদ্ধ ও উচ্চ পর্যায়ের সাংস্কৃতিক পর্যটন অভিজ্ঞতা পর্যন্ত প্রসারিত হচ্ছে।
এক কথায়, অফ-পিক পর্যটন মৌসুম বসন্ত উত্সবের ছুটিতে অত্যন্ত সন্তোষজনক পর্যটন গোটা ২০২৪ সালের পর্যটন বাজারের জন্য একটি ভালো সূচনা। পর্যটন পরিষেবা ও তত্ত্বাবধান সুসম্পূর্ণ হবার পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপদ ও আনন্দদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত হচ্ছে এখন। (প্রেমা/রহমান)