দেহঘড়ি পর্ব-৫৯
2024-02-25 19:32:36

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘লাইফস্টাইল টিপস’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

প্যানক্রিয়াটাইটিসের ভালো সম্পুরক চিকিৎসা টিসিএম

প্যানক্রিয়াটাইটিস অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহসৃষ্টিকারী একটি রোগ। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এ রোগ জীবন-সংহারী হয়ে উঠতে পারে। অগ্ন্যাশয় শরীরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ যার প্রধান কাজ পরিপাকীয় এনজাইম ও ইনসুলিন তৈরি করা। প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হয়, যখন এই অঙ্গটি স্ফীত হয়ে যায়। পিত্তথলির পাথর, অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন, নির্দিষ্ট ওষুধ, সংক্রমণ ও অটোইমিউন রোগসহ বিভিন্ন কারণে এই প্রদাহের সূত্রপাত হতে পারে। প্যানক্রিয়াটাইটিসের লক্ষণগুলির মধ্যে গুরুতর পেটে ব্যথা, বমি, বমি বমি ভাব, জ্বর, দ্রুত হৃদস্পন্দন এবং এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে অর্গান ফেইলর পর্যন্ত থাকতে পারে।

দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বব্যাপী চিকিত্সকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে প্যানক্রিয়াটাইটিস। এ রোগের প্রচলিত চিকিত্সায় ব্যথা ব্যবস্থাপনা এবং খাদ্যতালিকায় পরিবর্তনের মাধ্যমে উপসর্গ উপশমের প্রতি জোর দেওয়া হয়। তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্যানক্রিয়াটাইটিসের চিকিত্সায় একটি পরিপূরক পদ্ধতি হিসাবে টিসিএম বেশ কার্যকর।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি বা টিসিএমে মনে করা হয়, প্যানক্রিয়াটাইটিস আসলে শরীরের প্রাণশক্তি বা ‘ছি’, রক্ত সঞ্চালন এবং অঙ্গের কার্যকারিতার ভারসাম্যহীনতার প্রকাশ। টিসিএম চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন, এই মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে প্যানক্রিয়াটাইটিসের উপসর্গগুলো উপশম করা, প্রদাহ কমানো এবং এ রোগ নিরাময় করা যায়।

চিকিৎসা

ভেষজ ওষুধ: প্যানক্রিয়াটাইটিসের টিসিএম চিকিৎসার অন্যতম ভিত্তি হলো ভেষজ ওষুধ। টিসিএম চিকিৎসকরা প্রত্যেক রোগীর নির্দিষ্ট উপসর্গ, শারীরিক গঠন এবং শরীরের ভারসাম্যহীনতা বিশ্লেষণ করে ভেষজ ফরমুলেশন নির্ধারণ করেন। এই ভেষজ ফর্মুলেশনগুলো সাধারণত ঔষধি গাছ, শিকড়, ছাল ও খনিজপদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি, যা প্রদাহ বিরোধী, ব্যথানাশক এবং পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী। প্যানক্রিয়াটাইটিসের চিকিৎসায় সাধারণ যেসব ভেষজ ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর মধ্যে বৈকাল স্কালক্যাপ, চাইনিজ রুবার্ব, যষ্টিমধু, আদা ও চাইনিজ স্কালক্যাপ।

আকুপাংচার: আকুপাংচার টিসিএমের আরেকটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান। এটি প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীদের ব্যথা উপশম, প্রদাহ হ্রাস এবং পরিপাক উন্নত করে। শরীরের মেরিডিয়ান বরাবর নির্দিষ্ট আকুপাংচার পয়েন্টগুলোকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে আকুপাংচারবিদরা ‘ছি’ প্রবাহে ভারসাম্য আনেন, ‘ছি’ ও রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা দূর করেন এবং শরীরের সহজাত নিরাময় প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আকুপাংচার অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ কমাতে, ব্যথা উপশম করতে এবং প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীদের জীবনের সামগ্রিক মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

ডায়েট: উপযুক্ত ডায়েট প্যানক্রিয়াটাইটিসের টিসিএম চিকিত্সার একটি মৌলিক দিক। টিসিএম চিকিৎসকরা প্রতিটি রোগীর স্বতন্ত্র চাহিদা এবং শারীরিক গঠন অনুসারে একটি সুষম ডায়েটের উপর জোর দেন। এতে মশলাদার, চর্বিযুক্ত ও প্রদাহসৃষ্টিকারী খাবার এড়ানোর সাথে সাথে পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার যেমন জাউ, সেদ্ধ সবজি, ভেষজ চা এবং চর্বিহীন প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

জীবনধারা পরিবর্তন: ভেষজ ওষুধ, আকুপাংচার ও ডায়েটের পাশাপাশি প্যানক্রিয়াটাইটিসের টিসিএম চিকিৎসা সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে উন্নীত করার লক্ষ্যে সুস্থ জীবনধারার উপর গুরুত্ব দেয়। এর মধ্যে চাপ কমানোর কৌশল যেমন থাই চি, ছি কুং এবং ধ্যান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে, প্রদাহ কমাতে এবং হজমশক্তি বাড়াতে মৃদু ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। টিসিএম চিকিৎসকরা একটি স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবন বজায় রাখা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং শরীরের নিরাময় প্রক্রিয়াকে ঠিক রাখার উপরও জোর দেন।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

মধ্য চীনের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রেনমিন হাসপাতাল

উহান ইউনিভার্সিটির রেনমিন হাসপাতাল মধ্য চীনের হুপেই প্রদেশের উহান শহরে অবস্থিত এ অঞ্চলের অন্যতম স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি এ হাসপাতালটি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে তার রোগী-কেন্দ্রিক সেবা, অত্যাধুনিক গবেষণা এবং একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের জন্য। হুপেই অঞ্চল ও তার বাইরেও স্বাস্থ্যসেবার পটভূমি তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এই হাসপাতাল।

শত বছর আগে ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উহান ইউনিভার্সিটির রেনমিন হাসপাতাল। শুরুতে এর নাম ছিল হুবেই মেডিকেল ইউনিভার্সিটির প্রশিক্ষণ হাসপাতাল। আর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জার্মানি থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী চীনা নাগরিক ছ্যন ইয়ুছাংয়ের উদ্যোগে। একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে উহান ইউনিভার্সিটির রেনমিন হাসপাতালের। কয়েক দশক ধরে হাসপাতালটি একটি সামগ্রিক চিকিৎসাকেন্দ্র হিসাবে বিকশিত হয়েছে, যা রোগীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা চাহিদা মেটাতে বিস্তৃত বিশেষায়িত পরিষেবা এবং অত্যাধুনিক সুবিধা প্রদান করে। প্রাথমিক যত্ন এবং প্রতিষেধক ওষুধ থেকে শুরু করে জটিল অস্ত্রোপচার এবং উন্নত চিকিৎসা পর্যন্ত, রেনমিন হাসপাতাল চিকিৎসা-অগ্রগতি এবং রোগীর যত্নের অগ্রভাগে রয়েছে।

উহান ইউনিভার্সিটির রেনমিন হাসপাতালে রয়েছে বিভিন্ন বিশেষত্বের বিস্তৃত চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা, যার লক্ষ্য প্রত্যেক রোগীর আলাদা প্রয়োজন অনুসারে উচ্চ-মানের যত্ন দেওয়া। এখানকার বিভাগগুলোর অন্যতম কার্ডিওলজি, অঙ্কোলজি, নিউরোলজি, অর্থোপেডিকস, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, শিশুরোগ ইত্যাদি। আর অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে এমআরআই, সিটি এবং পিইটি-সিটি স্ক্যানারসহ উন্নত ইমেজিং সরঞ্জাম, অত্যাধুনিক অপারেটিং রুম, নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট, বহির্বিভাগের রোগীদের ক্লিনিক এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র।

চার হাজারের বেশি শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালে রয়েছে অধ্যাপক, অভিজ্ঞ চিকিত্সক, শল্যচিকিৎসক, নার্স ও সহযোগী স্বাস্থ্য পেশাদারদের একটি বৃহৎ দল।

কর্তৃপক্ষ বলছে, অত্যাধুনিক গবেষণা এবং একাডেমিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে চিকিৎসা জ্ঞান এবং উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনমিন হাসপাতাল। হাসপাতালে বেশ কয়েকিট অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাবরেটরি রয়েছে এবং ওষুধের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী গবেষণা পরিচালনার জন্য এর রয়েছে শীর্ষস্থানীয় একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক।

একটি একাডেমিক চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে, উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনমিন হাসপাতাল পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চীনের অন্যতম শীর্ষ মেডিকেল স্কুল - উহান ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে অধিভুক্ত এ হাসপাতালটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, আবাসিক চিকিৎসক, ফেলো ও অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাদারদের জন্য চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

অসাধারণ কাজের জন্য নানা স্বীকৃতিও পেয়েছে উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনমিন হাসপাতাল। গত দশ বছরে এটি জাতীয় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে দ্বিতীয় পুরস্কার এবং জাতীয় বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে দ্বিতীয় পুরস্কারসহ ২ শতাধিক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পুরস্কার অর্জন করেছে।

 

#হারবাল_হিলিং

ল্যাভেন্ডারের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে জানেন?

ল্যাভেন্ডার কেবল এর সুগন্ধের জন্য মূল্যবান নয়, মূল্যবান এর অসংখ্য স্বাস্থ্যগত উপকারিতার জন্যও। এই বহুমুখী ভেষজ এর থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য ঐতিহ্যবাহী ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহু শতাব্দী ধরে। জানিয়ে দিচ্ছি ল্যাভেন্ডারের প্রধান কয়েকটি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে:

মানসিক চাপ কমায়: ল্যাভেন্ডার বিখ্যাত মন ও শরীরের উপর এর শান্ত ও শিথিল প্রভাবের কারণে। ল্যাভেন্ডারের নির্যাস বা এর সুগন্ধ নিঃশ্বাসের সাহায্যে গ্রহণ করলে উদ্বেগ কমে এবং মনে প্রশান্তি আসে।

ব্যথা উপশম করে: ল্যাভেন্ডারের বেদনানাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, অস্থিসন্ধির ব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে। ল্যাভেন্ডারের নির্যাস আক্রান্ত জায়গায় লাগালে অস্বস্তি মুক্তি পাওয়া যায়।

ত্বক ভালো রাখে: ল্যাভেন্ডারে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি ত্বকের ছোটখাটো জ্বালা প্রশমিত করতে, প্রদাহ কমাতে এবং ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।

ঘুমের মান বাড়ায়: অনিদ্রা ও ঘুমের ব্যাঘাতের একটি চমৎকার প্রাকৃতিক প্রতিকার ল্যাভেন্ডার। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শোবার আগে ল্যাভেন্ডার নির্যাস নিঃশ্বাসের সাহায্যে গ্রহণ করলে ঘুমের সময়কাল ও গুণমান বাড়ে।

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।