চিনি শিল্পীর মিষ্টি ক্যারিয়ার
2024-02-22 16:28:47

চীনাদের বসন্ত উত্সব উদযাপনে মিষ্টি অপরিহার্য। উত্সবে মিষ্টি খেলে নতুন বছরে সবকিছু মিষ্টি হবে। তাই মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন না যারা, তারাও বসন্ত উত্সবের সময় নিজের রুটিন ভেঙে কিছু মিষ্টির স্বাদ নেন।

আজকের ‘জীবন কথা’ অনুষ্ঠানে আমরা দু’জন তরুণ চিনি শিল্পীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো শ্রোতাদের।

মার্জিত নার্সিসাস, স্ফটিকস্বচ্ছ লিচু এবং প্রাণবন্ত ডালিম দেখতে পাচ্ছেন আপনি? বিশ্বাস করতে পারেন কি, এ সব চিনি দিয়ে তৈরি করা। এ সব সুন্দর শিল্পর্কম তৈরি করেছেন ছুই চিউ সিয়াং। তার জন্ম ৯০-এর দশকে। সাধারণ শেফের রান্নাঘরের মতো নয়, তিনি একটি শান্ত ঘরে রান্না করেন। ঘরটিতে রয়েছে একটি টেবিল, একটি চেয়ার এবং দুটি বৈদ্যুতিক গ্রিলিং বাতি। এই হলো ছুই চিউ সিয়াংয়ের স্টুডিও’র সবকিছু। এখানেই ছুই চিউ সিয়াং একটার পর একটা সুন্দর ছোট অলঙ্কার তৈরি করেছেন।

 

ছুই চিউ সিয়াং বলেন, ‘এটি চলতি ড্রাগন বর্ষের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা একটি সোনার ড্রাগন। তিন দিন ধরে এটা তৈরি করেছি আমি। দুবার ড্রাগনের ভঙ্গি ভালো হয়নি। তাই তৃতীয়বারের চেষ্টায় এর সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।’

 

চীনের চান্দ্র পঞ্জিকার বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে ছুই চিউ সিয়াং চীনের ঐতিহ্যবাহী চিনি চিত্রের ভিত্তিতে জাতীয় ঐহিত্য চিনি শিল্পে মিলিয়ে এ প্রাণবন্ত ড্রাগন তৈরি করেছেন। চিনি নরম করার পর বারবার টানাটানি ও আঁকাবাঁকা করতে হয়, যাতে রেশমের মতো দীপ্ত দেখায়।

ছু চিউ সিয়াং বলেন, “যেমন এ বড় থেকে ছোট দাঁড়িপাল্লা তৈরি করতে গেলে একটির পর একটি টানার পর একটির পর একটি লাগাতে হয়। এ ড্রাগন পুরোটা ফাঁপা। পুরো একটি মিছরি কিউব নিয়ে মুখ দিয়ে ফু দিয়ে ফাঁপা করতে হয়। এটি ঠান্ডা হওয়ার আগে প্রথমে ড্রাগনের আকার, তার পর ড্রাগনের চিকন কেশর তৈরি করতে হবে। ঠান্ডা হওয়ার পর এটি তৈরি সম্পন্ন হবে।”

ছুই চিউ সিয়াং আমাদের সাংবাদিককে বলেন, বাবার’ প্রভাবে এ মিষ্টি কাজ করছেন তিনি।

ছু চিউ সিয়াং বলেন, “আমার বাবা গ্রামের বাড়িতে একজন কাঠমিস্ত্রি। ছোটবেলা থেকে আমি দেখেছি, একটি রুক্ষ কাঠ তার হাতে নানা ধরণের শিল্পকর্মে পরিণত হয়। আমি সে ধরণের হস্তশিল্পকে পছন্দ শুরু করেছি। তাই চিনি দিয়ে চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে প্রকাশ করতে চাই।”

প্রাণবন্ত চিনি তৈরি করা ছুই চিউ সিয়াং’র বরাবরের চেষ্টা। চিনির ভালো আকার করা এবং চকচকে করার জন্য গলিয়ে চিনি গরম করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে চিনি ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম করে সিরাপ করা হয়, তার পর ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠান্ডা করা হয়। বাতি দিয়ে গরম করার পর এ সিরাপ খুব আঠালো হয়। এ তাপমাত্রার মধ্যে চিনি শিল্পী একটু একটু করে চিনির আকার তৈরি করেন।

ছুই চিউ সিয়াংয়ের বন্ধু লি ই ছুন বলেন, ছুই ড্রাগনে দাঁড়িপাল্লা দিতে গেলে, তার হাতে গরমের কারণে বড় ফোস্কা হয়েছে। এটি তিনি একদম টের পাননি। তাকে ফোস্কা উপশমের কথা বললে তিনি নির্বিকারভাবে লি ই ছুনের দিকে না তাকিয়ে বলেন, এ চিনি গরমের অবস্থায় তৈরি করতে হয়, যাতে ড্রাগন আরও প্রাণবন্ত হয়।

যদিও তৈরির প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে এবং এটি অনেক কষ্টকর। শেষ পর্যন্ত যে শিল্পকর্ম তৈরি হয়েছে, তাতে খুব সন্তুষ্ট ছুই চিউ সিয়াং। জাতীয় ঐতিহ্যে চিনি তৈরির প্রকৌশলে মিশিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি নিজের মতো নতুন নতুন উদ্ভাবন করেন। নিজের তৈরি চিংড়ির ইন্কপেইন্টিং অনুযায়ী চিনি শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন ছুই। এ শিল্পকর্ম তৈরির জন্য তিনি বেশ কয়েকবার বাজারে গিয়ে সারা দিন ধরে জীবিত চিংড়ি মাছ পর্যবেক্ষণ করেন।

ছুই চিউ সিয়াং বলেন, ভবিষ্যতে তিনি এ মিষ্টি কাজের মধ্য দিয়ে প্রত্যেককে প্রভাবিত করতে চান, যাতে সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সকলের মনে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সমীহ জাগানো যায়।