সংবাদ পর্যালোচনা: যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা অপব্যবহার গাজায় যুদ্ধবিরতির সবচেয়ে বড় বাধা
2024-02-22 15:55:21

‘একজন আমেরিকান হিসেবে আমি লজ্জিত যে আমার দেশ ইতিহাসের ভুল দিকে ছিল। আমার দেশ এখনও যে ভুলের মধ্যে আছে তাতেও আমি  লজ্জিত’— যুক্তরাষ্ট্রের নেটব্যবহারকারীরা এসব মন্তব্য করেছেন। কারণ স্থানীয় সময় ২০ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র আবারও ভেটো দিয়েছে।

আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে আলজেরিয়া এই খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে। এর মূল বিষয় হল গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, অবিলম্বে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া, মানবিক ত্রাণ সামগ্রী গাজায় প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিত করা। এটা কেবল নিরাপত্তা পরিষদের ঐকমত্য নয়, এটা আন্তর্জাতিক সমাজের ঐকমত্যও। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এতে আবারও ভেটো দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র কেন বার বার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর হল ‘‌এটি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের জিম্মি ইস্যুর আলোচনার জন্য অনুকূল নয়’। বিশ্লেষকরা মনে করেন এই বক্তব্য ভিত্তিহীন।

খসড়া প্রস্তাবের সমর্থকদের মধ্যে রয়েছে জর্ডান, মিশর এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের অন্যান্য  মধ্যস্থতাকারী। যদি প্রস্তাবটি পাস হয়, তাহলে দু’পক্ষের সংলাপের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করবে, যুদ্ধবিরতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি হবে। আর খসড়ায় গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়, যা বিভিন্ন পক্ষ মধ্যস্থতা করতে এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে জিম্মি বিনিময় করতে সাহায্য করবে।

এই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো নিয়ে চীনসহ নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যরা তীব্র হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে: ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবুজ সংকেত দেওয়ার সমতুল্য’; ‘খসড়ার বিপক্ষে ভোট দেওয়া আসলে যুদ্ধকে সমর্থন করা’; ‘গাজায় হতাহত ও মানবিক অবস্থা অসহনীয়’...

ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করা যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘অভ্যাসগত অপরাধ’। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষ শুরুর পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ৮টি ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে মাত্র দুটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বার বার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছে, যা নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ নেওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়েছে। এ থেকে দেখা যায়, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্র কখনোই একজন ন্যায়সঙ্গত মধ্যস্থতাকারী নয়, বরং সবসময় পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, একটি কারণ হল ইহুদি জাতি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সংখ্যালঘু জাতি, এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পেছনের ‘অর্থদাতা’। ইসরায়েলকে অসন্তুষ্ট করলে  নির্বাচন প্রভাবিত হবার আশঙ্কা করছেন মার্কিন রাজনীতিবিদরা। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র খসড়ায় ভেটো দেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে ইসরায়েলের জন্য স্থান ও সময় করে দেয়ার চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যামেরন বলেছেন: ‘আমরা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি’। এটা তার ‘সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য’ হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান লোহিত সাগরে সংকট বাড়ছে, লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে, অন্যদিকে ইসরায়েলকে অব্যাহতভাবে সামরিক সাহায্য দেয়, যা সংঘর্ষ বিস্তার ও তীব্রতর হতে উৎসাহিত করছে, যুক্তরাষ্ট্রই মধ্যপ্রাচ্যের বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী সবচেয়ে বড় পক্ষ। যদি যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে এমন কাজ করে, গাজার যুদ্ধ সম্ভবত পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিপর্যয়ে পরিণত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো গাজায় যুদ্ধবিরতির পথে বাধা হওয়া উচিত নয়, নিরাপত্তা পরিষদের এ ক্ষেত্রে আরো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

(তুহিনা/হাশিম/শুয়েই)