ফেব্রুয়ারি ২০: ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন জার্মানি সময় ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে শেষ হয়েছে। ইউক্রেন সংকট ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত তীব্রতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে, এবারের সম্মেলন উদ্বেগ ও অস্বস্তিতে পূর্ণ ছিল। কিভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে- তা সবার চিন্তা ছিল। বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীগণ নানা প্রস্তাব ও পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মূল বক্তব্যে বলেন, অশান্ত বিশ্বের স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে চীন দৃঢ়ভাবে কাজ করবে, যাতে অনেক পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে। লাতিন আমেরিকান সংবাদসংস্থা তার মন্তব্যে বলেন, ‘চীনের উন্নয়ন মানে শক্তিশালী শান্তির শক্তি এবং স্থিতিশীলতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান’।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের নিরপত্তা নীতি-বিষয়ক ফোরাম, যা বিশ্বের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও উন্নয়ন প্রবণতা সম্পর্কে পশ্চিমা বিশেষ করে ইউরোপের ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। সম্মেলনকালে ‘মিউনিখ নিরাপত্তা প্রতিবেদন ২০২৪’ প্রকাশিত হয়, যা ‘উভয়ের পরাজয়ের’ থিম হিসেবে হতাশায় পূর্ণ ধারণা প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশ বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সামগ্রিক স্বার্থে মনোনিবেশ করতে ইচ্ছুক নয়; বরং তুলনামূলকভাবে বড় সুবিধার জন্য প্রতিযোগিতা করতে চায়। জি-৭ দেশগুলোতে জরিপ করা বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, তাদের দেশগুলো আগামী ১০ বছরে নিরাপদ ও ধনী হবে না।
কিছু বিশ্লেষক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের উচ্চ মানের উন্নয়নের কারণে ‘নিজের জয়, অন্যের পরাজয়ের’ ধারণা চর্চা করছে। তবে, এখন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে, উদীয়মান বাজার দেশ ক্রমাগত উন্নয়ন ও শক্তিশালী হচ্ছে, আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন হয়েছে। পশ্চিমের ‘উভয়ের পরাজয়ের’ উদ্বেগের পেছনে ছিল নিজের অনুকূল ও সুবিধা হারানোর হতাশা ও বিরক্তি।
অন্যদিক থেকে দেখলে, পশ্চিমের উদ্বেগ কিছুটা সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত। যেমন, ইউক্রেন সংকট প্রায় দুই বছর ধরে চলছে, যা ইউরোপীয় দেশগুলোকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে, কিছু ইউরোপীয় রাজনীতিবিদ ‘সময়ের দাবি’ শব্দটি দিয়ে এই সংকট বর্ণনা করেছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশৃঙ্খল বিশ্বের মুখে, চীন সবসময় সব দেশের অভিন্ন স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্যোগ ও প্রস্তাব দিয়েছে। ঠিক এ কারণে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ‘চায়না বিশেষ সম্মেলন’ খুব জনপ্রিয়। চলতি বছরের সম্মেলনের মূল বক্তব্যে চীন বিশ্বকে একটি সুস্পষ্ট সংকেত দিয়েছে। তা হলো- চীন প্রধান বড় দেশগুলোর সহযোগিতা প্রচার করা, হট-স্পট সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা, বিশ্ব পরিচালনা করা এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি জোরদারে স্থিতিশীল শক্তি হতে চায়। এর চারটি দিক থেকে ‘স্থিতিশীল’ নিরাপত্তা ও উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বকে আশ্বাস দেয় এবং পশ্চিমের ‘উভয়ের পরাজয়ের’ উদ্বেগ নিরসনে বুদ্ধি যোগায়।
চীনের সক্রিয় মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরান ২০২৩ সালে ঐতিহাসিকভাবে পুনরায় বন্ধু হয়েছে; জলবায়ু হুমকির মুখে চীন জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঐক্যমত্য’ পৌঁছানো জোরদার করেছে, সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে বিশ্বের সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণের তীব্রতা হ্রাস অর্জন করবে; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন জাতিসংঘের কাঠামোতে আন্তর্জাতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গভর্নেন্স সংস্থা প্রতিষ্ঠা সমর্থন করে, মানুষের অভিন্ন কল্যাণ রক্ষা করবে...... এসব বিষয় থেকে দেখা যায়, চীনের ধারাবাহিক কর্ম ও পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন স্বার্থের উপর ভিত্তি করে এবং অভিন্ন চ্যালেঞ্জ সমাধান করার উপর গুরুত্ব দেয়।
মানব ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, সঠিক পথ বেছে নিলে সমৃদ্ধি আসে, ভুল পথ বেছে নিলে বিপর্যয় আসে। বর্তমান নিরাপত্তার সংকটাবস্থা থেকে বের হয়ে আসার পথ খুব স্পষ্ট। তা হলো উন্মুক্ত হওয়া উচিত, বন্ধ করা নয়; ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত, বিচ্ছিন্নতা নয়; সহযোগিতা ও সংলাপ করা উচিত, প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব নয়। ‘উভয়ের পরাজয়’ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার পরিবর্তে পশ্চিমা অভিজাতদের উচিত চীনের প্রস্তাবগুলো শোনা।
(তুহিনা/তৌহিদ/শুয়েই)