চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব ৫৮তম পর্ব
2024-02-19 20:09:32

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

৫৮তম পর্বে যা থাকছে:


* পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরদের জন্য সুখবর

* ব্যাটারি ও তারবিহীন সাঁতারু রোবট

* মহাকাশ থেকে তথ্য আদান-প্রদানে লেজার প্রযুক্তি আনলো চীন



পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরদের জন্য সুখবর

পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিসের প্রধান কারণ মস্তিষ্কের স্ট্রোক। মস্তিষ্কের রক্তনালির মধ্যে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে এটি হয়।

 

এ ধরনের রোগীদের জন্য নিউরাল সিগনাল গ্রহণ করতে সক্ষম এমন একটি ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস তৈরি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। যৌথভাবে সিস্টেমটি তৈরি করেছে সুয়ানউ হাসপাতাল ও সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

চীনের সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি যন্ত্রটি ইতোমধ্যেই দুজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করে ভালো ফল পাওয়া গেছে।

২০১০ সালের একটি দুর্ঘটনায় ঘাড় থেকে শরীরের একাংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় ৫৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তির। সম্প্রতি তার শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস স্থাপন করা হয়। অস্ত্রোপচারটি করে বেইজিংয়ের ক্যাপিটাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত সুয়ানউ হাসপাতাল।

এই ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেসকে বলা হচ্ছে নিউরাল ইলেকট্রনিক অপরচুনিটি। এটি আকারে একটি মুদ্রার সমান। কোনো তারের সংযোগও নেই এতে। রোগীর মাথার খুলির ভেতর যেখানে নিউরাল টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে স্থাপন করা হয় এই ওয়্যারলেস যন্ত্র। 

 

অস্ত্রোপচারের মাত্র ১০ দিন পরেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় ওই রোগীকে। এরপর তিন মাস বাড়িতে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ইমপ্লান্টের সঙ্গে স্নায়বিক সংযোগকারী একটি বিশেষ গ্লাভসের মাধ্যমে বোতল ধরে পানি পান করতে পেরেছেন তিনি।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কাজ করা যন্ত্রটির মাধ্যমে রোগী নিজেই খেতে পারবে। পরে এ ব্যবস্থার আরও উন্নত হলে রোগীর হাত-পা নড়াচড়ার ক্ষমতা বাড়বে এবং আরও কিছু কাজ করতে পারবেন। এটি ব্যবহারের ফলে মেরুদণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোও কাজ করতে সফল হয়েছে এবং রোগীরা স্পর্শ করে তাপমাত্রার পার্থক্য অনুভব করতে পেরেছেন।

একইভাবে মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত অন্য কয়েকজন রোগীর মস্তিষ্কেও অস্ত্রোপচার করে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস বসানো হয়। তাদের মধ্যেও সিস্টেমটি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে দেখা গেছে। 

গবেষকরা জানান, এ পরীক্ষায় নৈতিকতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। অস্ত্রোপচার করার আগে সেগুলো মিটে যায় এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিবন্ধিত হয় সিস্টেমটি।


ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেসটি মস্তিষ্কের সংকেত শনাক্ত ও বিশ্লেষণ করতে পারে। পাশাপাশি এটি মস্তিষ্ক এবং একটি বাহ্যিক ডিভাইস যেমন কম্পিউটারের মধ্যেও যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম।


চীনা গবেষকরা বলেছেন, নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এ ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রচলিত সিস্টেমগুলোর চেয়ে নিরাপদ। এটি মস্তিষ্কের টিস্যুর ক্ষতি করে না। এতে কোনও প্রদাহ, দাগ বা ক্ষতও তৈরি হয় না। নেই বাড়তি কোনো জটিলতা। আবার এটি সচল রাখতে দেহের ভেতরে ব্যাটারি রাখারও দরকার নেই।


|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ


ব্যাটারি ও তারবিহীন সাঁতারু রোবট

মহাকাশ গবেষণা থেকে রান্নাঘর; রোবটের ব্যবহার কোথায় নেই। ঘরের কাজকর্ম তো আছেই, এখন রোবটের ব্যবহার বেড়েছে ক্লিনিক হাসপাতালগুলোতে। সেখানে রোগীদের খাবার দেওয়া, তাপমাত্রা মাপা বা যোগাযোগের কাজগুলো করছে এই যন্ত্রবন্ধুরা। আর সেই তালিকায় যোগ হয়েছে পানিতে থাকা রোগজীবাণু শনাক্তকারী রোবট। যা তৈরি করেছেন  একদল চীনা গবেষক।

 

ব্যাটারি ও তারবিহীন ক্ষুদ্র সাঁতারু রোবট তৈরি করেছেন চীনা গবেষকরা। এই রোবটটি দূষণ ও দূষণের জন্য দায়ী পদার্থ এবং রোগ জীবাণু শনাক্ত করতে সক্ষম। এ  গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ হয়েছে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে।

বাহ্যিক রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সংকেতে চালিত ক্ষুদ্র রোবটটির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ওই গবেষণাপত্রে।

সিটি ইউনিভার্সিটি অব হংকং, তালিয়ান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং বেইহাং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা যৌথভাবে এই রোবটটি তৈরি করেছেন।

তীর-আকৃতির ডিভাইসটি তাপমাত্রা অনুভব ও শনাক্ত করতে পারে। এ ছাড়া, রোবটটি ক্লোরাইড, অ্যামোনিয়াম এবং সার্স-কোভ-২ ভাইরাস শনাক্ত করতে সক্ষম।  এটি সরু পাইপের ভেতর দিয়ে অবলীলায় চলাচল করতে পারে রোবটটি।  একইসঙ্গে অবস্থানের তথ্য , সংকেত পাঠানো এবং স্মার্টফোনেও তথ্য পাঠাতে পারবে এটি।

হংকংয়ের সিটি ইউনিভার্সিটির গবেষক ও গবেষণাপত্রের লেখক ইউ সিংই জানান, এই ওয়্যারলেস স্মার্ট সিস্টেমটি প্যাথোজেন শনাক্তকরণ থেকে দূষণ অনুসন্ধান এমনকি মহাকাশেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারবে।


গবেষকরা রোবটটির নমনীয় লেজের সঙ্গে চুম্বক এবং একটি কয়েল যুক্ত করেছেন। এ ছাড়া এতে আছে একটি অ্যান্টেনা, যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারবে। চুম্বক ও কয়েলের কারণে রোবটটি চলাফেরা করতে পারবে ডলফিনের মতো।


|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ


মহাকাশ থেকে তথ্য আদান-প্রদানে লেজার প্রযুক্তি আনলো চীন

মহাকাশ ভিত্তিক তথ্য নেটওয়ার্ক ও যোগাযোগের প্রধান উপাদান লেজার কমিউকেশন টেকনোলজি। এ প্রযুক্তি আরও বিকশিত করতে কাজ করছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। এ ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তিগত প্রদর্শনের লক্ষ্যে মহাকাশে প্রথমবারের মতো দ্বি-মুখী লেজার যোগাযোগ টার্মিনাল পাঠালো চীন।

 

কুয়াংতোং প্রদেশের শেনচেনে অবস্থিত একটি বেসরকারি লেজার কমিউনিকেশন কোম্পানি ‘হিস্টারলিংক’ এই দ্বি-মুখী টার্মিনালটি নির্মাণ করেছে। 

পরীক্ষামূলক টার্মিনালটি পরিচালনা করা হচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহ সিংশিতাই ২০ এর মাধ্যমে। সিংশিতাই ২০ কৃত্রিম উপগ্রহটি স্মার্ট ড্রাগন ৩ ক্যারিয়ার রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়। 

কৃত্রিম উপগ্রহটি যৌথভাবে নির্মাণ করেছে সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতুর স্যাটেলাইট নির্মাতা কম্পানি ‘হিস্টারলিংক ও আডাস্পেস’।

এ লেজার টার্মিনালটির ডেটা ট্রান্সমিশনের সর্বোচ্চ গতি প্রতি সেকেন্ডে ১০ গিগাবাইট। পাশাপাশি এ লেজার ডিভাইসটি লেজার কমিউনিকেশন বা যোগাযোগের জন্য বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি যাচাইয়ের করবে। এর ডিজাইনাররা বলছেন, লেজার কমিউনিকেশনে মূলত বৃহৎ ট্রান্সমিশন ক্ষমতা, লং রিচ এবং উচ্চ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।


হিস্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও থান চুন জানান, যেকোনও স্পেস-ভিত্তিক তথ্য নেটওয়ার্কে একটি অপরিবর্তনীয় উপাদান হলো লেজার কমিউনিকেশন। উপগ্রহ এবং পৃথিবীর মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য লেজার রশ্মি ব্যবহার করা অত্যন্ত কঠিন এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ কমিউনিটির জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়।


তিনি আরও জানান, প্রযুক্তির সাহায্যে এই লেজার টার্মিনালের ডেটা ট্রান্সমিশন গতি প্রতি সেকেন্ডে ১০০ গিগাবাইট করা সম্ভব।

এরপরও প্রতি সেকেন্ডে ১০ গিগাবাইট ডেটা ট্রান্সমিশন গতি সীমাবদ্ধ রাখার কারণ হলো এই গতি বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে ব্যবহারকারীদের জন্য যথেষ্ট এবং এর ব্যয় অনেক কম।

অদূর ভবিষ্যতে, লেজার কমিউনিকেশন টার্মিনালগুলো নিম্ন-অরবিট ইন্টারনেট স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কগুলোর একটি স্তম্ভ হয়ে উঠবে বলে জানান থান চুন।

কৃত্রিম উপগ্রহ সিংশিতাই-২০ পাঠানো স্মার্ট ড্রাগন-৩ রকেটটি একটি সলিড-প্রপেলান্ট রকেট মডেল। এটি ৩১ মিটার লম্বা, এর ব্যাস ২ দশমিক ৬৫ মিটার এবং এটি ১৪০ মেট্রিক টন ওজন বহন করতে পারে। এটি প্রধানত একটি সলিড-প্রপেলান্ট ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয়।


|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ


নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।


প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার


অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল


স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী