দেহঘড়ি পর্ব-৫৮
2024-02-18 21:41:11

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘লাইফস্টাইল টিপস’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

যক্ষ্মা নিরাময় দ্রুততর করে টিসিএম

যক্ষ্মা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস ব্যাকটেরিয়া-সৃষ্ট একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ, যা প্রাথমিকভাবে ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং পরে শরীরের অন্যান্য অংশকেও প্রভাবিত করে। যক্ষার চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি (টিসিএম) ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় যক্ষ্মার কার্যকর চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপর নির্ভর করা হয়। তবে টিসিএমকে একটি সম্পূরক চিকিৎসা হিসাবে গ্রহণ করা যায়। কারণ এ চিকিৎসাপদ্ধতি নিরাময় দ্রুততর করে। টিসিএমে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়, যার লক্ষ্য থাকে শরীরের মূল শক্তি বা ‘ছি’র ভারসাম্য বজায় রাখা এবং রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।

টিসিএমে মনে করা হয়, শরীরের যে কোনো রোগের জন্য দায়ী মূল জীবনীশক্তি বা ‘ছি’য়ের দুটি উপাদান - তাপশক্তি বা ইয়াং এবং ঠাণ্ডা শক্তি বা ইয়িনের মধ্যকার ভারসাম্যহীনতা। এতে আরও মনে করা হয়, যক্ষ্মার মূল কারণ ফুসফুসের ‘ছি’য়ের ঘাটতি, কফ, ব্লাড স্ট্যাসিস এবং ইয়িনের ঘাটতি। এ রোগের টিসিএম চিকিৎসায় প্রত্যেক রোগীর ব্যক্তির নির্দিষ্ট লক্ষণের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। আজ আমরা যক্ষ্মা নিরাময়ের কতগুলো টিসিএম উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

ভেষজ ওষুধ: রোগীর লক্ষণ ও অসামঞ্জস্যের ধরনের ভিত্তিতে যক্ষ্মার চিকিৎসায় কয়েক ধরনের ভেষজ সূত্র ব্যবহার করা হয়। ভেষজগুলোর মধ্যে সাধারণত থাকে অ্যাস্ট্রাগুলাস (হুয়াং ছি), জিনসেং (রেন শান), এবং কর্ডিসেপ্স (দোং ছোং সিয়া ছাও)-এর মতো ভেষজগুলো। এগুলো সাধারণত ‘ছি’ বৃদ্ধি করতে এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য ভেষজগুলো তাপ পরিষ্কার করে, কফ দূর করে, ইয়িনকে পুষ্ট করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

আকুপাংচার: ফুসফুস ও প্লীহার ‘ছি’কে শক্তিশালী করতে, শরীরের শক্তির মাত্রা উন্নত করতে এবং সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আকুপাংচার। এক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা এবং টিসিএম-রোগ নির্ণয়ের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট আকুপাংচার পয়েন্ট নির্বাচন করা হয়।

ডায়েট: স্বাস্থ্য ও অসুস্থতা থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের এমন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যেগুলো ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা দেয়, ‘ছি’ বাড়ায় এবং ইয়িনকে পুষ্ট করে। এছাড়া যক্ষ্মা রোগীদের নাশপাতি, পদ্মমূল ও সাদা ছত্রাকের মতো খাবার খাওয়ার এবং মশলাদার, চর্বিযুক্ত ও ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। মশলাদার, চর্বিযুক্ত ও ঠান্ডা খাবার কফ তৈরি করতে এবং প্লীহাকে দুর্বল করতে পারে।

ছিকুং ও থাইচি: ছিকুং ও থাইচি হলো মৃদু শারীরিক কসরৎ বা ব্যায়াম। নিয়মিত এমন ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয় যক্ষ্মা রোগীদের। কারণ এ ব্যায়াম শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে, শারীরিক শক্তি বাড়ায় এবং সারা শরীরে ‘ছি’ প্রবাহকে উন্নীত করে। 

আধুনিক বিবেচনা: টিসিএম যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা দেয় এবং কিছু উপসর্গ উপশম করে, তবে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, যক্ষ্মা একটি গুরুতর ও প্রাণ-সংহারী রোগ, যার নিরাময় এবং অন্যদের মধ্যে সংক্রামিত হওয়া রোধে অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে প্রচলিত চিকিৎসার প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যক্ষ্মার এমন একটি চিকিৎসার সুপারিশ করে, যাতে কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদে অ্যান্টিবায়োটি গ্রহণ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

টিসিএমকে যক্ষ্মার প্রচলিত চিকিৎসার বিকল্প হিসাবে গ্রহণ করা করা উচিত নয়, তবে পরিপূরক থেরাপি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।


#চিকিৎসার_খোঁজ

হৃদরোগের চিকিৎসায় আস্থার নাম বেইজিং আনচ্যন হাসপাতাল

বেইজিং আনচ্যন হাসপাতাল চীনের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি অগ্রবর্তী প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অত্যাধুনিক সুবিধা, আন্তরিক সেবা এবং রোগীর সুস্থতার প্রতি অটল অঙ্গীকারের জন্য বিখ্যাত এ হাসপাতাল। রাজধানী বেইজিংয়ে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই চিকিৎসা-প্রতিষ্ঠানটি তার অত্যাধুনিক অবকাঠামো, বিস্তৃত পরিষেবা এবং অত্যন্ত দক্ষ কর্মীদের কারণে আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।

কার্ডিওলজি, অনকোলজি, নিউরোলজি, অর্থোপেডিকস ও আরও বিস্তৃত ক্ষেত্রে সেবা দেওয়ার জন্য অসংখ্য বিভাগ রয়েছে বেইজিং আনচ্যন হাসপাতালে। সর্বশেষ চিকিৎসা প্রযুক্তি ও ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামে সজ্জিত প্রতিটি বিভাগ সঠিক রোগনির্ণয় ও কার্যকর চিকিৎসা প্রদানের জন্য নির্ভুলতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করে।

এ হাসপাতালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর কার্ডিওলজি সেন্টার। হৃদরোগের চিকিৎসায় এটি বিশ্বের অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃত। প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ও কার্ডিয়াক সার্জনদের একটি দল নিয়ে গঠিত কেন্দ্রটি হৃদরোগের প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা এবং নন-ইনভেসিভ ডায়াগনস্টিকস থেকে শুরু করে জটিল অস্ত্রোপচার পর্যন্ত ব্যাপক পরিষেবা দেয়। করোনারি আর্টারি ডিজিজ, অ্যারিথমিয়াস, জন্মগত হার্টের ত্রুটি, হার্ট ফেইলিউরসহ বিভিন্ন হৃদরোগের জন্য দেওয়া হয় উদ্ভাবনী চিকিৎসা।

গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতির জন্য আলাদা মর্যাদা বহন করে বেইজিং আনচ্যন হাসপাতাল। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাবরেটরি আর চিকিৎসা জ্ঞান ও অগ্রগামী গ্রাউন্ডব্রেকিং থেরাপির জন্য শীর্ষস্থানীয় একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এর রয়েছে সহযোগিতার সম্পর্ক। 

বারো শ’ শয্যার বেইজিং আনচ্যন হাসপাতাল একটি বিস্তৃত অবকাঠামোর স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠান, যেখানে রয়েছে অনেকগুলো ওয়ার্ড, বিশেষায়িত ইউনিট ও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা। স্বল্পমেয়াদী পর্যবেক্ষণ, নিবিড় পরিচর্যা বা দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন - রোগীদের যাই প্রয়োজন হোক না কেন এ হাসপাতাল প্রদান করে।

ব্যতিক্রমী চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এ হাসপাতালে রয়েছে নিবেদিত উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের একটি বহু-মাত্রিক দল। দেশের মেডিকেল বোর্ড-স্বীকৃত চিকিৎসক ও সার্জন থেকে শুরু করে দক্ষ নার্স, টেকনিশিয়ান, সহায়তা কর্মী – হাসপাতালের কর্মীদলের প্রতিটি সদস্য রোগীর নিরাপত্তা, আরাম ও সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শ্রেষ্ঠত্ব ও ক্রমাগত পেশাগত বিকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এ হাসপাতালের কর্মীরা ক্লিনিকাল কেয়ার ও রোগীর পরিষেবার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে।


#হারবাল_হিলিং

বহু গুণের আধার আমলকি

আমলকির রয়েছে হরেক গুণ। টক স্বাদের আমলকি শুধু ফল হিসাবে নয়, ভেষজ হিসাবে খুব ব্যবহৃত হয়। ত্বক থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়া এবং রক্ত পরিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমলকির জুড়ি নেই। নিয়মিত আমলকি খেলে কোলস্টেরোল নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং ডায়াবেটিস ও হাঁপানি দূরে থাকে। জানিয়ে দিচ্ছি আমলকির নানা উপকারিতা সম্পর্কে:   

হার্ট সুস্থ রাখে: বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ প্রতিরোধে আমলকি খুব কার্যকর। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, আমলকি হৃৎপিণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে হৃদযন্ত্র ভালোভাবে কাজ করতে পারে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: আমলকি রক্তে শর্করা ও লিপিডের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রমাণিত যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে আমলকি খান, তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: আমলকিতে আছে ভিটামিন সি’র মতো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী কতগুলো উপাদান। এগুলো শরীরের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপকে সঠিকভাবে পরিচালনায় সাহায্য করে। এর ফলে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। 

গলা ব্যাথা কমায়: ঠাণ্ডা লাগলে অনেকের গলা ব্যাথা হয়। এই সময় আমলকি ভীষণ প্রয়োজনীয়। কারণ এটি ভিটামিন সি দিয়ে পরিপূর্ণ। এমনকি, ঋতু পরিবর্তনের সময় গলা ব্যথা হয় অনেকের। নিয়মিত আমলকি খেলে এ সমস্যা দূর হয়। 

ওজন কমায়: শরীরের ফ্যাট, কোলেস্টরল মাত্রা ও অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ কমানোর জন্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই প্রয়োজনীয়। আমলকিতে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকার কারণে বেশিরভাগ শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সঠিকভাবে হয়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

বার্ধক্য বিলম্বিত করে: ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর আমলকি নিয়মিত খেলে অনায়াসে বার্ধক্য বিলম্বিত করা যায়।


 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।