চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৫৬
2024-02-17 20:01:10

 

১. চাইনিজ ড্রাগন সম্পর্কে অজানা কথা!

১০ ফেব্রুয়ারি চীনা চান্দ্র নববর্ষ, ড্রাগনবর্ষকে স্বাগত জানিয়েছেন চীনের মানুষ। চীনা সংস্কৃতিতে ড্রাগন কেবল পৌরাণিক নয়, রহস্যময়ও বটে। এটি শক্তি, জ্ঞান ও সৌভাগ্য নিয়ে আসে। প্রাচীনকালে ড্রাগনকে একটি ঐশ্বরিক সত্তা হিসাবে বিবেচনা করা হতো, যা জলবায়ু ও বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতো বলে বিশ্বাস করা হতো।

 

মানুষেরা অনুকূল বাতাস ও ফসলের প্রাচুর্যের জন্য ড্রাগনের পূজা করতো এবং শ্রদ্ধা করতো। দৈনন্দিন জীবনযাপনে ড্রাগন ব্যপক প্রাধান্য পেতো; এটি শক্তির প্রতীক হিসাবে উপিস্থিত থাকতো মানুষের জীবনের আশা-আকাঙ্খা মূর্ত করতে।

ড্রাগনের বৈশিষ্ট্য ও অর্থ:

দ্বাদশ শতকের একটি লেখার অংশে বর্ণিত যে, ড্রাগনের মধ্যে আছে অন্য প্রাণীদের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অংশ, যেমন হরিণের শিং, ঈগলের নখর, বাঘের পাঞ্জা, সাপের গলা, সমুদ্র-দানবের পেট, উটের কপাল, মাছের আঁশ, ষাঁড়ের কান ইত্যাদি।

 

কিংবদন্তি আছে, জেড সম্রাট রাশিচক্রে কোন প্রাণী থাকবে তা নির্ধারণ করার জন্য একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিলেন। প্রতিযোগিতায় ড্রাগন প্রথম স্থান অর্জনের জন্য নিশ্চিতভাবে এগিয়ে থাকলেও খরায় ভুগতে থাকা একটি গ্রামকে সাহায্য করার জন্য প্রতিযোগিতা থেকে নিজকে প্রত্যাহার করে নেয়। এইভাবে, সম্মানের সাথে ড্রাগন শীর্ষ পুরস্কারটি হারায়।

প্রাচীন চীনে, ড্রাগন ছিল রাজকীয় প্রতীক। পোশাক ও প্রাসাদ সজ্জায় এর রূপ ব্যবহৃত হতো। সাহিত্য ও লোককাহিনীতেও ছিলো এর বিস্তার; অপরিহার্যভাবে যুক্ত ছিলো সম্রাটের শাসনব্যবস্থার সাথে। 

প্রতিবেদন: নাসরুল্লাহ মানসুর/সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান।


২. সিএমজির বর্ণিল বসন্ত উৎসব গালা 

বরাবরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চীনা বসন্ত উৎসবের সেরা চমক বহুল প্রতীক্ষিত সিএমজি স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালা ২০২৪। 

 

গালার এই আয়োজন উপভোগ বসন্ত উৎসবের অন্যতম একটি বড় অংশ। ড্রাগনবর্ষের প্রাক্কালে শুক্রবার বেইজিং সময় রাত ৮টায় শুরু হয় এ জমকালো আয়োজন। বেইজিংয়ের মূল ভেন্যু থেকে এবং সারা দেশের চারটি সাব-ভেন্যু থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। 

 

চায়না মিডিয়া গ্রুপ আয়োজিত এবং সম্প্রচারিত এই গালা সারা বিশ্বের দর্শক-শ্রোতাদের জন্য একটি বিনোদনমূলক রঙিন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যা দুর্দান্ত ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। এতে নাচ, গান, কমেডি স্কেচ, মার্শাল আর্ট, অ্যাক্রোব্যাটিক্স ও  অপেরাসহ চীনের ঐতিহ্যিক নানা বিষয় তুলে ধরা হয় চমকপ্রদ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে।

 

এ বছরের উৎসবটি ঐতিহ্যবাহী চীনা সাংস্কৃতিক উপাদান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মানুষের আস্থা ও সুখী জীবনের অন্বেষণকে তুলে ধরে এবং সারা বিশ্বের চীনা জনগণের কাছে নববর্ষের উষ্ণ শুভেচ্ছা প্রেরণ করে।

এতে একটি উদ্ভাবনী বিন্যাসে উপস্থাপিত লোকশিল্প থেকে শুরু করে মঞ্চে আনা ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি, কোরিওগ্রাফ করা নৃত্য, জাতিগত মহাকাব্যিক গাথা এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি প্রদর্শন করা হয়। একইসঙ্গে এতে চীনের মূল ভূখণ্ড, হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ানের শিল্পীদেরও পরিবেশনা রাখা হয়। 

 

এবারের গালায় চীনের সিনচিয়াংয়ের প্রাচীন নগর কাশগর বিশেষ গুরুত্ব পায়। এবার প্রথমবারের মতো গালার একটি শাখা মঞ্চ স্থাপন করা হয় কাশগরে। এছাড়া শেনইয়াং, সিয়ান ও ছাংশায়ও শাখা মঞ্চ স্থাপন করা হয়।  

অনুষ্ঠানটি একাধিক টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন এবং বেশ কয়েকটি নতুন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার করা হয়। এবার সিএমজি প্রথমবারের মতো নিয়ে আসে মাল্টি-ক্যামেরা পোর্ট্রেট স্ক্রিন সিগন্যাল, যা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের অনুষ্ঠান দেখাকে সহজ করে দেয়।

 

গালার দর্শক সংখ্যা গতবছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেড়ে ৬৭ কোটি ৯০ লাখ হয়েছে। চান্দ্র নববর্ষের প্রাক্কালে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় ২০০টি দেশে ৬৮টি ভাষায় সম্প্রচার হয় জাঁকজমপূর্ণ এ অনুষ্ঠান। সারা বিশ্ব থেকে গালায় মুগ্ধ দর্শকরা জানিয়েছেন তাদের উষ্ণ প্রতিক্রিয়া।   

চীনা ভাষায় গালা শব্দটিকে ছুনওয়ান বলা হয়ে থাকে। ১৯৮৩ সালে শুরুর পর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা টিভি অনুষ্ঠান হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে সিএমজি বসন্ত উৎসব গালা।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।


৩. শাংহাইয়ে শিল্পকলার বাজার

 

শাংহাই মহানগরীর মঞ্চে চলছে ব্রডওয়ের বিখ্যাত গীতিনাট্য ‘নাতাশা, পিয়ের অ্যান্ড দ্য গ্রেট কমেট অফ এইটিনথ টুয়েলভ’। চীনের শাংহাই মহানগরীর বাসিন্দারা আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি বিষয়ে বেশ আগ্রহী। দেশবিদেশের অনেক বিখ্যাত সাংস্কৃতিক দল এখানে প্রায়ই আসেন। 

 

বিখ্যাত রুশ সাহিত্যিক লিও তলস্তয়ের বিশ্বখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ থেকে নির্বাচিত অংশ নিয়ে গীতিনাট্য ‘নাতাশা, পিয়ের অ্যান্ড দ্য গ্রেট কমেট অফ এইটিনথ টুয়েলভ’ গড়ে উঠেছে। এই মিউজিকাল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শাংহাইতেও দর্শক মাতিয়েছে। 

 

মিউজিকাল স্টার কনসার্ট ‘দ্য রিইউনিয়ন’ নামে বিশ্ব সংগীত অভিনয়শিল্পীদের জড়ো করেছে। ক্ল্যাসিক মিউজিকাল ‘দ্য ফ্যানটম অফ দ্য অপেরা’ এবং ‘ল্য মিজারেবলস’ এর সংগীতগুলো পরিবেশন করছে। এটা তাদের প্রথম চীন সফর। শুধু বেইজিং ও শাংহাইতে তার পরিবেশনা করছে।

 

দর্শকের মধ্যে শাংহাইয়ের বাসিন্দা যেমন আছেন তেমনি বাইরের অনেক শহর থেকেও দর্শক এসেছেন। 

এ ধরনের আয়োজনের ফলে শাংহাইয়ে সাংস্কৃতিক পর্যটনশিল্পও  চাঙা হচ্ছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

----------------------------------------------------------------------

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।