চলতি বাণিজ্যের ৫৭ তম পর্ব
2024-02-16 15:32:38

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ৫৭ তম পর্বে থাকছে:

 

১. বসন্ত উৎসবে চীনে বাণিজ্য-অর্থনীতিতে এসেছে জোয়ার

২.  যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা স্নাক ব্রান্ড

৩. বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থানে চীনের পরচুলা

বসন্ত উৎসবে চীনে বাণিজ্য-অর্থনীতিতে এসেছে জোয়ার

উৎসবকে ঘিরে মার্কেট, রেস্তোরাঁ, বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় ছিল উপচেপড়া ভিড়। ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকদের চাপ বেড়েছে বহুগুণ। ক্রেতার চাপে পরিপূর্ণ ছিল স্ট্রিটফুডের দোকানগুলোও। বসন্তকে ঘিরে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ও পর্যটন কর্মকাণ্ড চীনের বাণিজ্যের পালেও হাওয়া লেগেছে। শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত  চীনের প্রধান বাণিজ্যিক জেলাগুলোতে ১৫ কোটি ৬২ লক্ষ ছিল যা বছরে অন্য সময়ের ১১১ শতাংশ বেশি। বসন্ত উৎসব ঘিরে দেশজুড়ে তিন হাজারেরও বেশি সাংস্কৃতিক ও পর্যটন কর্মকাণ্ডের আয়োজন ছিল।

আনহুই প্রদেশের ইসিয়ান Yixian শহরের হাজার বছরের পুরনো একটি গ্রামে হোটেলের ব্যবসা করছেন শ্যু লি। তিনি জানালেন—

< শ্যু লি, হোমস্টের ব্যাবস্থাপক>

‘নববর্ষের চার দিনের সমস্ত কক্ষের বুকিং আমরা দুই তিন মাসের আগেরই পেয়ে গেছি। হোটেলের কোনো রুমই এখন খালি নেই।‌‌‌‌‌‌'

বসন্তের ছুটির প্রথম দিন অনলাইনে রুম বুকিংয়ের অর্ডার গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি ছিল।

হবেই, হেনান, শানতোং ও শানসির মতো প্রদেশে পর্যটন সংক্রান্ত অর্ডার বেড়েছে গত বছরের চেয়ে ১৫ গুণ। মধ্য চীনের হেনানের অন্যতম প্রাচীন শহর লুওয়াং-এ কিছু দর্শনীয় স্থানের টিকিটের অর্ডারও ৩৫ গুণ বেড়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ানের বিশালাকার পান্ডা ছিল পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। সরকারি তথ্যমতে, সিচুয়ানের রাজধানী ছেংতুতে পান্ডা-থিমযুক্ত হোমস্টের বুকিং গতবছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, নববর্ষের দিন চীনের বড় চেইনশপগুলোর বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। সেদিন উত্তর-পূর্ব চীনে অললাইনে খাবার বিক্রি বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি।

এদিকে উৎসবে সোনার দোকানেও ভিড় বেড়েছে চীনাদের। এবার যেহেতু ড্রাগনবর্ষ, তাই ড্রাগনের মতো দেখতে সোনার বার ও মালার চাহিদাও ছিল বেশি।

চীনা রাশিচক্রে এবার ড্রাগনবর্ষ মঙ্গলের প্রতীক। আর সেই মঙ্গল বারতা বসন্তের প্রথম দিনই পৌঁছে গেছে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যের সকল শাখায়।

 

 

।। প্রতিবেদন: শাহানশাহ রাসেল

।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা স্নাক ব্রান্ড

চীনের ক্লাসিক স্ন্যাকস ব্রান্ড শ্যুউ ফু ছি দীর্ঘ সময় ধরে ক্রিস্পি পিনাট ক্যান্ডি এবং নৌগাট ক্যান্ডিসহ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন চীনা খাবার উৎপাদন করে আসছে। এসব খাবার বিভিন্ন উৎসবে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। সম্প্রতি কম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রসহ উপসাগরীয় অঞ্চলের চেইন শপগুলোতে তাদের পণ্য বিক্রি শুরু করেছে।

ইতোমধ্যেই শ্যুউ ফু ছি সফলভাবে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। ফলে অধিকাংশ সুপার মার্কেটেই এখন পাওয়া যাচ্ছে তাদের পণ্য। ২০২৩ সালে ওয়ালমার্টেও উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে শ্যুউ ফু ছি।

 

 

আমেরিকার বৃহত্তম অনলাইন এশিয়ান সুপারমার্কেট উইই এবং অনলাইন এশিয়ান মার্কেটপ্লেস ইয়ামির সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে কম্পানিটি।

শুধু তাই নয়, উত্তর আমেরিকার বাজারে টানা দুই বছর উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধিও অর্জন করেছে শ্যুই ফু ছি।

শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমেরিকান গ্রাহকরা এ কম্পানির পণ্যগুলোর গুণমান ও স্বাদ বেশ পছন্দ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সুপারশপগুলোতে শ্যুউ ফু ছির অন্তর্ভুক্তি সেটাই প্রমাণ করে।

শ্যুউ ফু ছির আন্তর্জাতিক ব্যবসার প্রধান হুয়াং ই বলেছেন,

<আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আরও বেশি ঐতিহ্যবাহী চীনা মিষ্টির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে উদগ্রীব। আমাদের লক্ষ্য হলো আরও বেশি করে মুচমুচে বাদাম ক্যান্ডি তৈরি করা। এটি আমাদের বিশেষ একটি পণ্য, যা বিশ্বব্যাপী চীনা চান্দ্র নববর্ষ উদযাপনেরও একটি অনুষঙ্গ।>

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও শ্যুউ ফু ছির নববর্ষ ঘিরে তৈরি করা পণ্যগুলো কানাডার বিখ্যাত সুপারমার্কেট যেমন ওয়ালমার্ট, সোবিস এবং লোব্লাতেও পাওয়া যাবে। উত্তর আমেরিকার বাইরে  ২০২৩ সালে ব্র্যান্ডটির উপস্থিতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারেও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ক্যান্ডি এবং নববর্ষকে ঘিরে তৈরি করা পণ্যগুলো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং মালয়েশিয়ার লোটাস' এবং এয়নের মতো স্থানীয় চেইন সুপারমার্কেটগুলোতেও পাওয়া যায়। এমনকি এ কম্পানির একটি আঠালো ক্যান্ডি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে সুদূর ভিয়েতনামেও।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৭৮তম অধিবেশনে চীনের চান্দ্র নববর্ষকে ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় চীনের চান্দ্র নববর্ষের ব্যাপ্তি এখন কত বেশি। আর সেই উৎসবের হাত ধরে যে বিশ্বব্যাপী  চীনের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যপণ্যের প্রসার বাড়বে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন চীনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

ভিনদেশে চীন:

বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থানে চীনের পরচুলা

পরচুলাকে নকল চুল বলা হলেও এটি মূলত তৈরি করা হয় মানুষের চুল দিয়ে। আবার পশু-প্রাণীর বড় পশম থেকে শুরু করে কৃত্রিম তন্তু বা সিনথেটিক ফাইবার দিয়েও তৈরি হয় পরচুলা। রাসায়নিক নানা উপাদানের ব্যবহারে তৈরি হলেও ফাইবারের পরচুলা কিন্তু দেখতে আসল চুলের মতোই।

 

 

পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম চুল। এসব পরচুলা পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি প্রদেশের কারখানাগুলোয় নকল চুল তৈরির বার্ষিক উৎপাদন ছাড়িয়েছে ৩ কোটি সেট। যা থেকে আয় হয়েছে ২৫ কোটি ইউয়ান।

২০১৮ সালে চিয়াংসি প্রদেশের শুইচিয়াং টাউনশিপের ইছুন সিটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় উইগ কারখানা আনসিন। বর্তমানে কারখানাটির উৎপাদন অঞ্চল তিনটি স্থানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কারখানাটির কৃত্রিম চুল তৈরির বার্ষিক উৎপাদন ছাড়িয়েছে ৩০ লাখ সেট। যা থেকে আয় হয় ৪ কোটি ইউয়ান।

সম্প্রতি এ কারখানার তৈরি ৩০০ বাক্স উইগ গেল নেদারল্যান্ডসে। বসন্ত উৎসবের আগে অন্তত ৫০টি দেশ থেকে অর্ডার এসেছিল এ কারখানায়।

চিয়াংসিতে সবমিলিয়ে ১০টি গ্রামে ৯৩টি পরচুলার কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কম্পানি এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করেছে।

কারখানাটির দায়িত্বে থাকা লিন শেংআন জানান, এই বাক্সগুলোতে ২ হাজারেরও বেশি উইগ রয়েছে। এগুলো নেদারল্যান্ডসের অর্ডারের একটি ছোট চালান। সম্প্রতি ওয়ালমার্ট থেকেও এসেছে ৪ লাখ ডলারের অর্ডার।

একই শহরের সিয়াওতোং গ্রামের একটি কারখানায় পরচুলার আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম তৈরি করেন চেং তেফু। তিনি জানান, পরচুলার কারখানা যত বাড়ছে তত বাড়ছে এ সংক্রান্ত অনুষঙ্গের ব্যবসাও। বিশেষ করে সম্প্রতি আলিএক্সপ্রেসের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মেও তার ব্যবসা বেড়েছে।

চেং তেফুর কম্পানির বার্ষিক উৎপাদন এখন ৫০ লাখ ইউয়ানের বেশি। স্থানীয় গ্রামবাসীরাই কাজ করছেন এসব পরচুলা ও অনুষঙ্গের কারখানায়।

প্রদেশটির পরচুলা তৈরির শিল্পকে আরও বিকশতি করতে স্থানীয় সরকার কিছু নীতিমালাও নিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে  চীনের তৈরি পরচুলা এখন চলে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, নাইজেরিয়াসহ আরও অনেক দেশের বাজারে।

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 



প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শাহানশাহ রাসেল

 

অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী