আকাশ ছুঁতে চাই ৫৭
2024-02-15 16:16:09

১ চীনা মেয়ে ও বাংলাদেশি ছেলের ভালোবাসার গল্প  

২. ৯৩ বছর বয়স্ক নকশা শিল্পী নারী

৩. পোশাকে ড্রাগনের নকশা

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

চীনা মেয়ে ও বাংলাদেশি ছেলের ভালোবাসার গল্প

 

                                           

 

১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশে পহেলা ফাল্গুন এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসার কাছে কোন কিছুই যেন বাধা নয়।তারই আরেকটি উদাহরণ বাংলাদেশের আদনান নাফিস ও চীনের দৌ শাওহান। ভালোবেসে বিয়ে করে একযুগেরও বেশি সময় কাটিয়ে দিয়েছেন তারা। নয় বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে এখন তাদের সুখের সংসার।   বিস্তারিত শুনবো আফরিন মিমের প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের ছেলে আদনান নাফিস ও চীনের মেয়ে দৌ শাওহান। ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন সংস্কৃতির বাধা পেরিয়ে নিজেদের তারা বেঁধেছেন ভালোবাসার বাঁধনে। আনন্দ, হাসি-গানে দাম্পত্য জীবনের ১৪ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তারা।এই বছরগুলোতে বলতে গেলে বাংলাদেশের জীবনধারায় পুরোপুরি মিশে গেছেন দৌ শাওহান।

২০০৫ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য দুজন গিয়েছিলেন থাইল্যান্ডে। সেখানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে, একই বিভাগে পড়ার সুবাদে পরিচয় দুজনের। পরিচয় থেকেই ধীরে ধীরে হয়ে যায় প্রেম।

পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে পারিবারিক আয়োজনেই ২০০৯ সালে বাংলাদেশে বিয়ে হয় নাসিফ ও দৌ শানের।এরপর থেকে শুরু হয় তাদের একসঙ্গে পথচলা। 

পছন্দের খাবার সম্পর্কে দৌ শাওহান বলেন, “ আমি চা দিয়ে বাখরখানি খেতে খুব পছন্দ করি। এছাড়া বাংলাদেশি কাচ্চি, বিরিয়ানি, কাবাব, শুটকি,পায়া।

শুধু দেশি খাবারই নয়, দৌ শাওহান বাংলাদেশের সংস্কৃতিতেও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন ভালোভাবে। একসময় চীনা পোশাক পরলেও এখন হরহামেশাই পরছেন শাড়ি। এমনকি নিজে শাড়ি পরলে স্বামীকেও পরতে বলেন পাঞ্জাবি।

এ প্রসঙ্গে আদনান নাফিস বলেন, “আমি যেদিন প্রথম পাঞ্জাবি পরি তখন আমা স্ত্রী খুব অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। সে খুব চায় আমি পাঞ্জাবি পরি। পাশাপাশি আমি যেসব পাঞ্জাবি পরি তার সবই সে কিনে দিয়েছে”।

পরিবারের অন্যন্য সদস্যের সঙ্গেও খুব ভালো সম্পর্ক দৌ শাওহানের। শাশুড়ির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক প্রসঙ্গে দৌ শাওহান বলেন, আমার শাশুড়ির সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। তিনি আমাকে সাপোর্ট করেন। আমার পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়ায়। 

এদিকে নাফিসও কম সৌভাগ্যবান নন। চীনে গেলে পান জামাই আদর।

নাফিস বলেন, আমার পুরো চীন সম্পর্কেই ধারণা পালটে গেছে। আগে একরকম জানতাম , সেখানে গিয়ে অন্যরকম দেখেছি। আমি যখন চীনে যাই তখন আমার শ্বশুরবাড়ির মানুষজন সবাই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। পাশাপাশি তারা আমার পছন্দের খাবার রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। আমি সেখানে গেলে খুব জামাই আদর পাই।

তাদের সংসারে আছে নয় বছর বয়সী সন্তান আইয়্যান আদনান। সন্তানকে ঘিরেই এখন সময় কাটে তাদের।

শ্বাশত প্রেম মানেই ডানাওয়ালা ফিনিক্স। স্থান-কাল, ভাষা সংস্কৃতি আর মানচিত্রের সীমারেখা টপকে সে তার গন্তব্যে পৌঁছাবেই। সেটাই আরেকবার প্রমাণ করলেন আসিফ-দৌ শান দম্পতি।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

 

৯৩ বছর বয়স্ক নকশা শিল্পী নারী

চীনে শুরু হয়েছে ড্রাগন বর্ষ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চায়না মিডিয়া গ্রুপের স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালায় নকশা পরিকল্পনা করে দর্শকদের বিমোহিত করেন তিরানব্বই বছর বয়সী নারী শিল্পী ছাং শানা। শুনবো তার গল্প।

ছাং শানা। তার বয়স এখন ৯৩ বছর। তিনি চীনের বিখ্যাত শিল্পী। তিনি তার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন হাজার বছরের প্রাচীন তুনহুয়াং বৌদ্ধ শিল্পকে ধরে রাখতে এবং সেই শিল্পকে আধুনিক প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য। তিনি ঐতিহ্যবাহী চীনা নবশাকে তার নিজস্ব অনন্য শৈল্পিক রীতিতে তুলে ধরেন।

বসন্ত উৎসবে চায়না মিডিয়া গ্রুপ নিউ ইয়ারস গালা অনুষ্ঠানে তার ঐতিহ্যবাহী চীনা নকশার প্রদর্শনী দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে।

ছাং শানা শৈশব থেকেইশিল্পচর্চা করতেন। তার বাবা ছাং শুহোং(১৯০৪-১৯৯৪) ছিলেন বিখ্যাত শিল্পী। তিনি প্রথমযুগের শিল্পীদের অন্যতম যারা তুনহুয়াং শিল্পকলাকে তুলে ধরেছেন।

ছাং শানা বলেন, ‘আমি তুনহুয়াং থেকে এসেছি। আমার বাবা আমাকে সেখানে নিয়ে যান। আমার বিদেশে পড়ার সুযোগ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানের সভ্যতা দেখেছি। তবে, আমি মনে মনে সবসময়ই বিশ্বাস করেছি যে চীনা সভ্যতা সবচেয়ে গ্লোরিয়াস। এটা আমাদের জাতির রক্তের ভিতর রয়েছে। আমি সবসময় নকশা ভালোবেসেছি। আমি যখনি নকশা দেখি মনে হয় যেন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে। যদিও আমি সারা জীবন ধরেই নকশা তৈরি করছি তবে এবারই প্রথম স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালার নকশা তৈরি করেছি।’

উত্তর পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের তুনহুয়াং সিটির মোগাও গ্রোটোস বা গুহাচিত্র  বৌদ্ধ চারুকলার ইতিহাসে পৃথিবী বিখ্যাত। সেই নকশা আধুনিক জীবনের প্রেক্ষাপটে উঠে আসে ছাং শানার হাতে। তিনি প্রাচীন চীনা শিল্পকলা যেমন হান রাজবংশ, থাং রাজবংশ এবং সং রাজবংশের সময়কার নকশাকে উজ্জ্বল রঙে ফুটিয়ে তোলেন।

ছাং শানা জানান চীনের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতি তার সৃষ্টির প্রেরণা। তিনি পরিবারের ঐতিহ্য শুধু বহনই করেননি সেটাকে পরবর্তী প্রজন্মেও প্রবাহিত করতে সফল হয়েছেন। ছাং শানার ছেলে সুই তোংহুই একজন শিল্পী। এবারের নিউ ইয়ারস গালায় মা ও ছেলে  একসঙ্গে শৈল্পিক নকশা নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন।

ছাং শানা ৯৩ বছর বয়সেও অক্লান্তভাবে শিল্প সৃষ্টি করছেন। এই নারী শিল্পী চীনের শিল্পভুবনকে সমৃদ্ধ করছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

পোশাকে ড্রাগনের নকশা

চীনা নারীদের হালের ক্রেজ হচ্ছে পোশাকে ড্রাগনের নকশা করা। চীনের নারীদের কাছে এখন বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে ড্রাগন মোটিফে পোশাক।

 

মামিয়ানছুন নামে এই পোশাকে লুং বা ড্রাগন আাঁকা রয়েছে। চলতি বছর ড্রাগন বর্ষ। তাই নারীদের স্কার্টে, হানফুতে লুং নকশা এখন চলতি ফ্যাশন। লিন সিন একজন ডিজাইনার নারী।

 

তিনি হানফু ডিজাইনার হিসেবে খ্যাত। তিনি বলেন এখন বিভিন্ন রকম ফেব্রিকের সমন্বয়ে হর্সফেসড স্কার্টের আকারে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যকে সমন্বয় করা হয়েছে। আজকাল দিনে দিনে আরও বেশি নারী ঐতিহ্যবাহী পোশাকের আধুনিক সংস্করণ খুঁজছেন।

 

তারা পোশাকে চীনা সংস্কৃতির ছোঁয়া চান। ঐতিহ্যের ছোঁয়া চান। তার চান যেন চাইনিজ এমব্রয়ডারি থাকে পোশাকে। আবার পোশাকটি যেন পরতেও সুবিধাজনক হয়। মামিয়ানছুন এখন দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশে এটা এখন চলতি ফ্যাশন।

ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়ামেন সিটির বাসিন্দা লাই সিউইয়ুন একজন ফ্যাশন সচেতন নারী। তিনি জানান, এ বছর ড্রাগন বর্ষ। চীনা জাতি নিজেদের ড্রাগনের উত্তরাধিকারী বলে মনে করে। তাই ড্রাগনের প্রাণশক্তিকে ধারণ করে তারা ঐতিহ্যকে নিজেদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে।

চীনা বসন্ত উৎসবের শুভকামনা জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।  ছুন চিয়ে খোয়াইলা, শুভ বসন্ত উৎসব। আসন্ন লণ্ঠন উৎসবের শুভেচ্ছা রইল।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল