‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. ঐতিহ্য সংরক্ষণে তরুণ সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকরা
চীনা ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তরুণ পৃষ্ঠপোষকরা। চীনা বসন্ত উৎসব বা নববর্ষে লণ্ঠন প্রদর্শনী উপভোগ করা চীনাদের জন্য একটি প্রথা। সম্প্রতি এই উৎসব উপলক্ষে পূর্ব চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরে, একদল তরুণ তরুণী আওশান লণ্ঠন পর্বত নামে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক লণ্ঠন শো’র আয়োজন করে।
প্রাচীন চীনের উত্তরের সং রাজবংশের সময়কালের আওশান লণ্ঠন পর্বত উৎসব। প্রত্নতাত্ত্বিক লণ্ঠন প্রদর্শনকে আরও বাস্তবসম্মত করতে, এই তরুণরা তাদের নকশায় নিয়ে এসেছেন বেশ কিছু প্রাচীন ছবি। তরুণ এই দলের নেতৃত্ব দেন ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি প্রেমী ছেন সিইউয়ে।
লণ্ঠণ শো এর জন্য এমন তরুণদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, যারা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় আগ্রহী। এমনটাই জানালেন ছেন সিইউয়ে।
"এবারের ড্রাগনবর্ষ উদযাপন করতে, আমরা অনেক কারিগরের সাথে যোগাযোগ করেছি। লণ্ঠন তৈরিতে তাদের আমন্ত্রণও জানিয়েছি। তারা একটি দীর্ঘ ড্রাগন লণ্ঠনের জন্য একটি বাঁশের কঙ্কাল তৈরি করেছিল এবং কঙ্কালটিতে লাগিয়েছিল তেলযুক্ত কাগজ। এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের প্রত্যেকের যে আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টার, এ লণ্ঠনগুলো কিন্তু সেটারই ইঙ্গিত দেয়।‘’
২০২২ সালে চায়না একাডেমি অফ আর্ট থেকে স্নাতক করেন ছেন। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে চীনের নানান ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করে আসছেন।
ধীরে ধীরে, আরও বেশি সংখ্যক তরুণ তার ভিডিওগুলোর কারণে আগ্রহী হচ্ছে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি। ছেন বিশ্বাস করেন, তিনি ভিডিওতে চীনের ঐতিহ্যের যে নান্দনিকতা প্রকাশ করে চলেছেন তা তরুণ চীনাদের অনুরণিত করছে।
চীনা ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জনসাধারণকে আরও বেশি জানানোর জন্য উৎসব কেন্দ্রিক বিভিন্ন ইভেন্টেও অংশ নেন ছেন।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক: ফয়সল আব্দুল্লাহ
২. জন্মস্থানই সিনচিয়াংয়ের তরুণ ফটোগ্রাফারের অনুপ্রেরণার উৎস
তরুণ ফরাসি ফটোগ্রাফার নিকো দ্যা রুজ চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের রাজধানী উরুমুছিতে খুঁজে পেয়েছেন প্রতিভাবান তরুণ নারী ফটোগ্রাফারের মা হাইলুনকে। নিজের শহর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজের আকাঙ্খা পূরণে কাজ করে চলেছেন তিনি।
চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক-সিজিটিএনের ‘ওয়ার্ল্ডস আল্টিমেট ফ্রন্টিয়ার’ শীর্ষক এক প্রামাণ্যচিত্র সিরিজের একটি অংশে বিধৃত হয়েছে ফরাসি ফটোগ্রাফার নিকো এবং তার খুঁজে পাওয়া মা হাইলুন। ওই প্রামাণ্যচিত্রে চীনের তিনজন বিদেশিকে অনুসরণ করা হয়, যারা সিনচিয়াংয়ের মধ্য দিয়ে একটি দুঃসাহসিক যাত্রা করেন এবং যাত্রাপথে ওই অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং স্থানীয় লোকজনের জীবন সম্পর্কে জানতে পারেন।
উরুমছি বরাবরই চীনা সাংস্কৃতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ঐতিহাসিকভাবে এটি সব সময় এমন একটি জায়গা যেখানে অনেক জাতির মানুষ সহাবস্থান করে আসছে এবং এমন সহাবস্থানের মনোভাব আজও সেখানকার মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, দৃঢ়।
ফরাসি ফটোগ্রাফার নিকোর খুঁজে পাওয়া মা হাইলুন উরুমুছিতে দুর্দান্ত কাজ করছেন। মার তোলা ফটো শহরের উচ্ছ্বসিত যুব সংস্কৃতিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে, যেখানে তরুণ-তরুণীকে অনন্য ফ্যাশনের পোশাক পরতে, স্কেটবোর্ডিং খেলতে এবং রাস্তায় নাচতে দেখা যায়।
মা দ্য রুজকে আমন্ত্রণ জানান একটি রুফটপ ফটোশুটে যেখানে একটি ঐতিহ্যবাহী কার্পেট ব্যবহার করা হয় ফটোশুটের পটভূমি হিসাবে। তিনি এমন একটি অংশ বেছে নেন, যা সত্যিকার অর্থে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে এবং একটি 'ঘরোয়া' অনুভূতি দেয়।
"যতবার আমি উরুমুছিতে ফিরে আসি, এখানে প্রথম থামি। আমি কেবল রঙ ও প্যাটার্নের দিক থেকে কিছু অনুপ্রেরণা খুঁজে পেতে চাই। এটি আসলে একটি সিনচিয়াং কার্পেট। লাল ও নীলই হলো সত্যিকারের সিনচিয়াং।"
‘উরুক্লিন প্রজেক্ট’ নামে বিশেষ একটি শো করছেন মা, যেখানে তুলে ধরা হয়েছে ব্রুকলিনে পড়ার সময় থেকে শুরু করে নিজ শহর উরুমুছিতে ফিরে আসা পর্যন্ত গত আট বছরে তার অভিজ্ঞতা।
"উরুমুছি ও ব্রুকলিনের মধ্যে সাদৃশ্যের কারণে আমি উরুকলিন প্রজেক্ট করতে উদ্যোগী হই। আমরা গ্যালারিতে পাঁচটি সেট তৈরি করেছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছি, লোকজনকে তাদের পোট্রেইট নেওয়ার জন্য এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।"
ফটোশুটে যোগদানকারী স্থানীয় ব্যক্তিরা মায়ের কাজ ও তার আন্তঃসাংস্কৃতিক ব্যাখ্যায় প্রভাবিত হয়েছেন। তারা আশা করেন, এটি সত্যিকারের উরুমুছি সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দেবে।
মায়ের জন্য মডেল হয়েছিলেন ফিনা নামে এমন একজন। তিনি বলেন, "এখানে আপনি বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং আপনার নিজের মানুষদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমি এটিকে খুব অর্থবহ বলে মনে করি।"
সিজে নামের এক যুবক বলেন, "সিনচিয়াংয়ে এই ধরনের শো কেউ দেখেনি। অনেকেই জানেন না এখানে কী ধরনের মানুষ বাস করে, বা কী ধরনের দৃশ্য রয়েছে। শোটি দারুণ।"
মা জানান, এখানে তিনি নানা সমস্যার সম্মু বটে খীন হয়েছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই শহরই তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার উৎস।
তিনি বলেন, "আমি অনেক সংগ্রাম করেছি। আমি হাই ফ্যাশন থেকে অনেক দূরত্ব অনুভব করেছি। এক সময় আমি অনুপ্রেরণার জন্য বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর বুঝতে পারি অনুপ্রেরণার জন্য নিজের দিকে তাকানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি আমার জন্মস্থান উরুমুছির দিকে তাকাই।"
অন্য কোনও দেশ নয় বা শহর নয়, জন্মস্থানই যে জীবনের সবচেয়ে অনুপ্রেরণা হতে পারে তা বুঝেছেন মা হাইলুন। আর সে উপলব্ধি তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন তার মতো আরও অনেক তরুণের মধ্যে।
প্রতিবেদক: শিহাবুর রহমান
সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. আইটি খাতে ১ মিলিয়ন তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে: পলক
আগামী ৫ বছরে আইটি খাতে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ‘চাকরি মেলা-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আইসিটি খাতের জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী ৫ বছরে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি রচনা করা হবে। এতে এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় আসবে। পাশাপাশি ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণ করা হবে। এছাড়া আগামী ৫ বছরে আইটি খাতে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে।’
প্রতিবন্ধীদের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে পলক বলেন, বিগত ১০ বছরে একটি মন্ত্রণালয় থেকে মেলার মাধ্যমে ১ হাজার ৬০০ জনের চাকরি দেয়ার সুযোগ হয়েছে। এর পাশাপাশি যদি দেশের আরও মন্ত্রণালয় মিলে কাজ করে, তাহলে এর মধ্য দিয়ে ৫০ হাজার প্রতিবন্ধীর কাজের সুযোগ হবে। তিনি বলেন, দেশের নাগরিক স্মার্ট হয়ে আসছে আর এই স্মার্ট নাগরিকদের ক্যাশলেস ইকোনমি গড়ার মধ্যে দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সরকারও পরিণত হচ্ছে স্মার্ট সরকারে। এর মধ্যে দিয়ে বৈষম্যহীন স্মার্ট সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে এবং তৈরি হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিবেদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক: শিহাবুর রহমান
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী