‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৫৭
2024-02-13 17:05:07

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। নিংসিয়ার শাহু লেক: পর্যটকের স্বর্গ

২। বন্ধুত্বের গভীরতা দেখাল চীন-সিঙ্গাপুরের ভিসামুক্ত নীতি

৩। সেরা পর্যটন গ্রাম চীনের ইয়ুনছুন

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।   

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫৭তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।      

১। নিংসিয়ার শাহু লেক: পর্যটকের স্বর্গ

 

বিশ্বের অন্যতম সেরা সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান এবং পর্যটকের স্বর্গ হিসেবে খ্যাত

চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের শাহু লেক সিনিক স্পট। চীনের অন্যতম বৃহৎ লবণাক্ত হ্রদ এই শাহু লেক।

 

নিংসিয়ার রাজধানী ইনছুয়ান থেকে ৫৬ কিলোমিটার এবং শিচুইশান শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই লেক। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটনের জন্য এর মূল খ্যাতি।

 

 

শাহু লেক সিনিক স্পটের মূল আয়তন ৮০.১০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ৪৫ বর্গকিলোমিটার জল এবং ২২.৫২ বর্গকিলোমিটার মরুভূমি। লেকের তীরে রয়েছে অজস্র পাখির বসবাস। ব্ল্যাক সোয়ান, সারস ও বিভিন্ন প্রজাতির বুনোহাঁস ও জলজ পাখি যখন লেকের জলে ভাসে, আকাশে দলবেঁধে ওড়ে, সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরে তখন অনন্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। সেই দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দী করতে দেশ বিদেশ থেকে আসেন অসংখ্য পর্যটক।

 

এখানে লেকের তীরেই রয়েছে থাকার নানা সুব্যবস্থা। কেউ চাইলে ক্যাম্প করেও থাকতে পারবে এখানে। রাতে সৈকতে মাছের বারবিকিউ জমে ওঠে। এছাড়া এখানে রয়েছে উটে চড়ার ব্যবস্থা, আকাশে বেলুন ও গ্লাইডারে চড়া, লেকে নৌকা চালানো ও নানা রকম জলক্রীড়ার আয়োজন।

 

 

এখানকার লেকের তাজা মাছ খুব সুস্বাদু। শাহু লেক লার্জ ফিশ হেড(শাহু লেক বড়মাছের মুড়ো) নামে একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও বিখ্যাত মাছের রান্না সারা দেশ জুড়ে বিখ্যাত।

 

 

চীন সম্রাট ছিন শি হুয়াং এর সময় থেকে এখানে সভ্যতা রয়েছে। এই অঞ্চল চীন সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল সেই প্রাচীন যুগ থেকেই। এখানে হুই জাতির মানুষরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

 

এই অঞ্চলের অর্থনীতি মূলত ছিল কৃষি ও পশুপালন নির্ভর। তবে বর্তমানে এই অঞ্চলের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। গড়ে উঠেছে বিশেষ শিল্পাঞ্চল । এর উত্তর পূর্বে রয়েছে মহাপ্রাচীর। এই অঞ্চলেই রয়েছে গোবি মরুভূমি রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহার করার জন্য উলভবেরি নামে ভেষজের ব্যাপক চাষ হয় এই অঞ্চলে।

 

ইয়াংজি নদীর তীরবর্তি এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, গ্রামজীবনও পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কারণ। এখানে হুইজাতির সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও খুব বিখ্যাত। বেইজিং-তিব্বত একসএপ্রসওয়ে দিয়ে সরাসরি শাহু লেক যেতে পারেন পর্যটকরা।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

২। বন্ধুত্বের গভীরতা দেখাল চীন-সিঙ্গাপুরের ভিসামুক্ত নীতি

 

কার্যকর হয়েছে চীন-সিঙ্গাপুর ভিসামুক্ত নীতি। এতে করে আরও স্পষ্ট হয়েছে দুই দেশের বন্ধুত্ব, বিশ্বাস ও সহযোগিতার গভীরতা। চীনের শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়া এই ভিসামুক্ত নীতির ফলে নতুন মাত্রা যোগ হবে দুই দেশের পর্যটন শিল্পে।

 

চীন-সিঙ্গাপুর ভিসামুক্ত নীতির চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল গত ২৫ জানুয়ারি। এটি কার্যকর হওয়ার ফলে এখন থেকে পাসপোর্টধারী চীনা ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা ৩০ দিন ভিসা ছাড়া একে অপরের দেশে প্রবেশের ও থাকার সুযোগ পাবেন।

 

চীনা পর্যটকরা সিঙ্গাপুরের পর্যটন বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে চলেছেন। সিঙ্গাপুরের পর্যটন বোর্ড জানিয়েছে, ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরে বিদেশি পর্যটক এসেছিল ১ কোটি ৩৬ লাখ। এর মধ্যে চীনের পর্যটক ছিল ১৪ লাখ। ২৩০ কোটি সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার খরচ করে ব্যয়ের তালিকায় তারাই ছিল শীর্ষে।

 

মূলত চীনের পর্যটকদের হাত ধরেই গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, সিঙ্গাপুরের পর্যটন শহরগুলোতে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৭২ হাজার মানুষের। ভিসামুক্ত নীতির কারণে সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলে আশা করছে দেশটির পর্যটন বোর্ড।

 

সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক কেভিন ছিয়ং বলেছেন, ভিসামুক্ত চুক্তিটি মূলত চীন-সিঙ্গাপুরের বন্ধুত্বের একটি মাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। তার মতে, সিঙ্গাপুর ও চীনের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

 

৩। ঘুরে আসুন চীনের সেরা পর্যটন গ্রাম থেকে

 

প্রাকৃতিক নানা বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ চীনের ইয়ুনছুন গ্রাম। পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের আনচি কাউন্টিতে অবস্থিত গ্রামটি এখন পর্যটকদের আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য।

বিশ্বসেরা পর্যটন গ্রামের তালিকায় থাকা গ্রামটি প্রায় ৫ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। তিন দিকই পাহাড়ে ঘেরা এই গ্রামে ৯০শতাংশের বেশি বন ও গাছপালায় আচ্ছাদিত। তাইতো বছরে গড়ে কয়েক হাজার দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন এই গ্রামে।

জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সেরা পর্যটন গ্রামের তালিকায় রয়েছে এই ইয়ুনছুন গ্রাম। ৩২টি দেশের ১৭৪টি গ্রামের মধ্য থেকে বেছে নেয়া হয় ৪৪টি গ্রাম।

এই  গ্রামের পরিবেশ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর। তাইতো এই গ্রামকে  ‘সুন্দর টাউন’ নামেও অভিহিত করেছেন অনেকেই। টলটলে জল ও সবুজ পাহাড়ের এই গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যেমন অনন্য তেমনি এর রয়েছে দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

গ্রামের অধিবাসীরাও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। তবে ১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে অর্থনৈতিক উন্নতি যেমন হয়েছিল তেমন পরিবেশ দূষণও ঘটেছিল। পরে পরিবেশ দূষণ দূর করা হয়।

এই গ্রামে  হাজার বছরের পুরানো মন্দির যা, লোংছিং মন্দির নামে পরিচিত। পাঁচ রাজবংশের পাঁচ-পরবর্তী সময়ে নির্মিত হয়েছিল মন্দিরটি। এছাড়া এখানে রয়েছে হাজার হাজার বছর বয়সী প্রাচীন গাছ, শত বছরের পুরনো প্রাচীন শিল্প এবং গুহা।

 

সেরা পর্যটন গ্রামের উপাধি পাওয়ার পর থেকে আরও ঢেলে সাজানো হয়েছে এই গ্রাম। পর্যটকদের থাকার জন্য করা হয়েছে সুব্যবস্থা। আধুনিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে সাজানো হয়েছে খামারবাড়ি ও হোমেস্ট। যারফলে পর্যটকরা সুন্দর পরিবেশে থাকার পাশাপাশি উপভোগ করতে পারেন গ্রামের  সৌন্দর্য।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী