ফেব্রুয়ারি ১২: ২০২৩ সালে চীনের বেশ কয়েকটি স্থানে বন্যা, টাইফুন ও ভূমিকম্প আঘাত করেছিল। যা জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলের মানুষদের বিষয়ে যত্নশীল। তারা নিজের হাতে সুন্দর ঘরবাড়ি তৈরি করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ বসন্ত উত্সব চলাকালে তাদের জীবন কেমন চলছে? দুর্যোগোত্তর পুনর্গঠন কাজের অগ্রগতি কেমন হয়েছে? আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় সে বিষয়ে আপনাদেরকে জানাবো।
বসন্ত উত্সব চলাকালে চীনের হেই লুং চিয়াং প্রদেশের শাং চি শহরের লুং ওয়াং মিয়াও গ্রামটি তুষারে ঢাকা পড়েছে। অনেক শীত হলেও উষ্ণ পরিবেশ দেখা দেয়। বাড়িঘরের বাইরে ইয়াংকো পরিবেশন করা হয়, তুষারে খেলাধুলা হয়, লণ্ঠন ঝুলানো হয় এবং ঘরের ভিতরে জানালায় পেপার কাটিং লাগানো হয় এবং ডাম্পিং তৈরি করেন গ্রামবাসীরা। টেবিলে জমজমাট খাবারে গ্রামের বাড়ির স্বাদ পাওয়া যায়। গ্রামবাসী ইয়াং ছুন কুই পরিবারের সবাই টেবিল ঘিরে গত বছরে স্মরণীয় মুহূর্ত নিয়ে আড্ডা দেন।
গত বছর গুরুতর বন্যা হয়েছিল বেইজিং, থিয়ান চিন, হ্য পেই ও উত্তর-পশ্চিম চীনে। দুর্যোগোত্তর সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রথমে ট্রেনযোগে এবং তারপর গাড়িতে করে লুং ওয়াং মিয়াও গ্রামে যান। লুং ওয়াং মিয়াও গ্রাম বন্যায় গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
গ্রামবাসী ইয়াং ছুন কুই’র বাড়িতে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নিরোধক উপকরণ, ভূমিকম্প প্রতিরোধক পর্যায় এবং শীতকালের আগে ঘরে উঠতে পারবে কিনা, সে সব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। ওই দিনের সব মুহূর্ত এখনও ইয়াং ছুন কুই’র মনে পড়ে।
সে সময়ের কথা স্মরণ করে ইয়াং ছুন কুই বলেন, ‘যখন প্রেসিডেন্ট সি আসেন, তখন খুব গরম ছিল। প্রেসিডেন্ট সি আমাদের শীতকালীন জীবনের বিষয়ে অনেক যত্নশীল। তিনি বলেছেন যে, উত্তর-পূর্ব চীনের শীতকাল অনেক তাড়াতাড়ি আসে এবং শীতকাল দীর্ঘ হয়। গরম পরিবেশ তৈরি করা নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত থাকেন। ঘরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বয়লার দেখেতে পান। শীতকালে তা পর্যাপ্ত কি না? তাকে এ প্রশ্ন জিজ্ঞাস করেন সি এবং বয়লার মেশিন কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা দেখাতে বলেন। যা খুবই উষ্ণ একটি বিষয়।”
বর্তমানে লুং ওয়াং মিয়াও গ্রামে ১৬৮টি বাড়িঘরের পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং অবকাঠামো পুনরুদ্ধার হয়েছে। দুর্গতরা সময়মতো বাড়িতে উঠেছে। চারা লালনের লক্ষ্যে ১০৭টি গ্রিনহাউস পুনর্গঠিত হয়েছে, যা বসন্তকালীন উত্পাদনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে সি চিন পিং পরপর তিনবার দুর্গত অঞ্চলে মানুষদের দেখতে যান। গত নভেম্বর মাসে উত্তর চীনে শীতকাল শুরু হয়। সি চিন পিং দুর্গতদের দেখতে এবং পুনর্গঠন কাজে নির্দেশনা দিতে ওয়া ছুয়ান চুয়াং গ্রামে যান। গ্রামবাসী ফু চি চুন জানান, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নতুন তৈরি অর্ধেক দেয়াল স্পর্শ করে বিস্তারিত জানতে চান। প্রেসিডেন্ট সিকে দেখে খুব মুগ্ধ হন এবং চোখে পানি চলে আসে। এখন গ্রামবাসীরা উত্সাহের সঙ্গে সুন্দর জীবন কাটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট সি’র সমবেদনা ও উত্সাহে কঠিনতা ও দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সবাই আস্থাবান ও সাহসী হয়েছেন। বর্তমানে ফু চি চুন আগের স্থানে আগের চেয়ে দ্বিগুণ বড় নতুন বাড়ি তৈরি করেছেন। গ্রামে ১৭২টি পরিবারের বাড়িঘর সুসংবদ্ধ ও সংস্কার কাজও শেষ হয়েছে। বসন্ত উত্সবের বাজার আবারও খুলেছে।
চীনের কান সু ও ছিং হাই প্রদেশ গত বছরে ভূমিকম্পে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বসন্ত উত্সব চলাকালে দুই প্রদেশে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল ও বাড়িঘর মেরামত ও সুসংবদ্ধ করার কাজ জোরদার হচ্ছে। যাতে দুর্গত মানুষেরা দ্রুততার সঙ্গে নতুন বাড়িতে উঠতে পারে। সবার সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। অস্থায়ী বসতিতে সবাই বসন্ত উত্সবের আওয়াজ উপভোগ করতে পারছেন।
ড্রাগন বর্ষ সাহস, পরিশ্রম ও অসীম প্রাণশক্তির প্রতীক। সুসংহত হলে শক্তি বাড়বে। আস্থার বৃদ্ধি সোনার মতো মূল্যবান। নতুন অগ্রযাত্রা সবার আস্থা বৃদ্ধি করে আরও সুন্দর ভবিষ্যত গঠনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
(রুবি/তৌহিদ/লাবণ্য)