দেহঘড়ি পর্ব-৫৭
2024-02-11 18:39:18

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘লাইফস্টাইল টিপস’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

অটোইমিউন রোগের টিসিএম চিকিৎসা

অটোইমিউন রোগ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার এক ধরনের বিভ্রাট। এ বিভ্রাটে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলভাবে তার নিজের টিস্যুকে আক্রমণ করে, যার ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অটোইমিউন রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যালার্জি, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস, প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ, স্কেলেরাসিস, টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস, গুইলেন-বারে সিনড্রোম, সোরিয়াসিস ও হাশিমোতো’স থাইরয়েডাইটিস।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিসিএম শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তি অর্থাৎ ‘ছি’র ভারসাম্য বজায় রাখা এবং এর প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে অটোইমিউন রোগের চিকিৎসা করে। আজ আমরা কয়েকটি টিসিএম চিকিৎসা নিয়ে আলাপ করবো, যেগুলো সাধারণত অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়:

ভেষজ ওষুধ: অন্যান্য রোগের মতো অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রেও টিসিএম চিকিৎসকরা প্রত্যেক রোগীর নির্দিষ্ট লক্ষণ ও ভারসাম্যহীনতার অন্তর্নিহিত কারণ অনুসারে ভেষজ ফর্মুলেশনগুলো নির্ধারণ করেন। এই ফর্মুলেশনগুলোর মধ্যে প্রদাহ-বিরোধী, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার সামঞ্জস্যবিধান এবং টিস্যু-মেরামত বৈশিষ্ট্যের ভেষজ অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেমন অ্যাস্ট্রাগালাস শিকড় (হুয়াং ছি), চীনা অ্যাঞ্জেলিকা শিকড় (তাং কুই), সাদা পিওনি শিকড় (পাই শাও), অ্যাট্রাক্টিলোডস শিকড় (বাই চু) এবং যষ্টিমধু (কান ছাও)।

অ্যাস্ট্রাগালাস শিকড়ে রয়েছে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং সামগ্রিক জীবনীশক্তি বাড়ানোর ক্ষমতা। অন্যদিকে চীনা অ্যাঞ্জেলিকা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে এবং রক্ত সঞ্চালনকে উন্নীত করতে সহায়তা করে। সাদা পিওনি প্রদাহ ও ব্যথা কমায়, অ্যাট্রাক্টিলোডস হজমের ক্রিয়াকে সাহায্য করে এবং প্লীহাকে শক্তিশালী করে আর যষ্টিমধু প্রদাহ কমায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে সুশৃঙ্খল করে।

আকুপাংচার: অটোইমিউন রোগের জন্য আকুপাংচার চিকিৎসার লক্ষ্য হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সুশৃঙ্খল করা, প্রদাহ কমানো এবং ব্যথা ও ক্লান্তির মতো উপসর্গগুলো দূর করা। আকুপাংচার বিশেষজ্ঞরা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত পয়েন্টগুলোর পাশাপাশি প্রভাবিত অঙ্গ বা সিস্টেমের সাথে যুক্ত মেরিডিয়ান পয়েন্টগুলোতে ফোকাস করে।

ডায়েটারি থেরাপি: অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে টিসিএম যে ডায়েটারি সুপারিশগুলো করে, তার লক্ষ্য থাকে প্রদাহ কমানো এবং পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার জন্য পুষ্টির যোগান দেওয়া এবং শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করা। এর মধ্যে থাকতে পারে সহজে হজমযোগ্য গরম রান্না করা খাবার, প্রদাহ-বিরোধী খাবার যেমন ফল, শাকসবজি, শস্য এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে এমন খাবার যেমন প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্রক্রিয়াজত চিনি ও কিছু অ্যালার্জেন পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।

চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন: মানসিক চাপ প্রদাহের সূচনা ঘটানো এবং রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল করার মাধ্যমে বিভ্রাট আরও বাড়িয়ে দেয়। অটোইমিউন রোগের টিসিএম চিকিৎসায় মানসিক চাপ কমানোর কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকে - যেমন ধ্যান, ছিকং, থাই চি এবং মননশীলতা অনুশীলন। এগুলো চাপ শিথিল করে, মানসিক সুস্থতা বাড়ায় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।

সাপ্লিমেন্টারি ও পুষ্টি সহায়তা: ভেষজ ওষুধ ও ডায়েটারি থেরাপির বাইরে টিসিএম চিকিৎসকরা শরীরের নির্দিষ্ট ঘাটতি বা ভারসাম্যহীনতা দূর করতে সম্পূরক খাবার বা পুষ্টি সহায়তার সুপারিশ করেন। এর মধ্যে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, প্রোবায়োটিক এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্টারি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে, প্রদাহ কমায় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

শ্রেষ্ঠত্বের আলোকবর্তিকা ম্যাকওয়ের মাস্ট হাসপাতাল

চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাওয়ে অবস্থিত ম্যাকাও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি হসপিটাল বা মাস্ট হাসপাতাল। এটি আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে শ্রেষ্ঠত্বের আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সহানুভূতির সঙ্গে রোগীদের যত্ন নেওয়া এবং অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তিকে একত্রিত করার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত মাস্ট হাসপাতাল এই অঞ্চলের একটি নেতৃস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে উদ্ভাবন ও শ্রেষ্ঠত্বের নীতি একত্রিত হয়েছে এ হাসপাতালে। পশ্চিমা চিকিৎসা এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা বা টিসিএম উভয় ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয় এখানে।

কর্মীদল এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত হাসপাতালটি বিস্তৃত বিশেষায়িত চিকিৎসা পরিসেবা প্রদান করে। সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে প্রাথমিক যত্ন ও রোগপ্রতিরোধ থেকে শুরু করে কার্ডিওলজি, অঙ্কোলজি, নিউরোলজি এবং আরও অনেক রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসার চাহিদা পূরণ করছে মাস্ট হাসপাতাল।

এ হাসপাতালের কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রোগী-কেন্দ্রিক যত্নের প্রতিশ্রুতি। মাস্ট হাসপাতাল তার রোগীদের মঙ্গল ও স্বাচ্ছন্দকে অগ্রাধিকার দেয় এবং সহানুভূতিশীল ও ব্যক্তিভিত্তিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের চেষ্টা করে। রোগীরা এ হাসপাতালের দরজায় পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উষ্ণতা ও সহানুভূতির সাথে অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং সুস্থ হয়ে উঠার জন্য একটি অসাধারণ পরিবেশ দেওয়া হয়। হাসপাতালের মাল্টিডিসিপ্লিনারি পদ্ধতি এটা নিশ্চিত করে যে, প্রতিটি রোগী তাদের স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও পছন্দ অনুসারে পৃথক চিকিৎসা পায়।

ম্যাকাও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে এ হাসপাতালটি চিকিৎসাশিক্ষা ও গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র ও চিকিৎসকদের ক্লিনিকাল প্লেসমেন্ট, ইন্টার্নশিপ ও আবাসিক কার্যক্রম প্রদান করে। উপরন্তু, মাস্ট হাসপাতাল সক্রিয়ভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ক্লিনিকাল পরীক্ষাগুলোতে সম্পৃক্ত থেকে চিকিৎসা জ্ঞান ও উদ্ভাবনের অগ্রগতিতে অবদান রাখে। একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে, হাসপাতালটি গবেষণা ও আবিষ্কারের সংস্কৃতিকে উত্সাহ দেয় এবং স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতিতে সহায়তা করে।

নিজের কর্মএলাকা পেরিয়ে মাস্ট হাসপাতাল বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে সেবা দেওয়ার জন্য বিনিয়োগ করেছে। বিভিন্ন আউটরিচ প্রোগ্রাম ও জনস্বাস্থ্য উদ্যোগের মাধ্যমে হাসপাতালটি স্বাস্থ্য উন্নয়নের, প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির এবং স্বাস্থ্যসেবা বৈষম্য দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান আয়োজন করা থেকে শুরু করে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান পর্যন্ত, মাস্ট হাসপাতাল সক্রিয়ভাবে ম্যাকাও জুড়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করছে।

 

লাইফস্টাইল টিপস

এটা সর্বজনবিদিত যে, চীনা জীবনযাপন পদ্ধতি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। আপনি যদি চীনাদের মতো একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে চান তাহলে মেনে চলতে পারেন তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি-সম্পর্কিত পরামর্শ।

পরিবারকে গুরুত্ব দিন

চীনা সমাজে পরিবারকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেজন্য পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো তাদের খুব প্রত্যাশিত। তারা জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের ভীষণ সম্মান করে। এটি কেবল নিজের পরিবারের জ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রেই ঠিক নয়, পরিবারের বাইরের জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ঠিক। এছাড়া চীনারা যথাযথ সামাজিক সম্পর্ক লালন করে, সম্প্রীতিপূর্ণ জীবন ভালোবাসে এবং কারোর সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না।

চীনা সমাজে মা-বাবারা সন্তানদের উন্নতি ও কল্যাণের জন্য সম্ভব সবকিছু করেন এবং আশা করেন ভবিষ্যতে সন্তানরা তাদের আত্মত্যাগের প্রতিদান দেবে।

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনা