১০ ফেব্রুয়ারি চান্দ্র নববর্ষ বা বসন্ত উৎসব। খরগোষ বর্ষকে বিদায় জানিয়ে ড্রাগনবর্ষকে বরণ করে নিচ্ছেন চীনের মানুষ।
বসন্ত উৎসব চীনাদের মধ্যে সবচেয়ে কাঙ্খিত ছুটি এবং আনন্দদায়ক পারিবারিক পুনর্মিলনের সময়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কার্যক্রমে জমজমাট থাকে ছুটির সপ্তাহটি।
বসন্ত উৎসবে চীনজুড়ে ল্যান্ডমার্কগুলোতে লাল রংয়ের ফোয়ারা ছুটেছে। কী শহর, কী গ্রাম- লণ্ঠনের শোভায় ঝলমল করছে চারদিক। চীনা সংগীতের সুরমূর্চ্ছনায় বইছে এক স্বর্গীয় আনন্দধারা।
ড্রাগন বর্ষ ও বসন্ত উৎসবের এক সপ্তাহ আগে থেকেই চীন জুড়ে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী উদযাপন কার্যক্রম। ঝলমলে শপিংমল এবং বর্ণাঢ্য লণ্ঠন শোগুলো যথারীতি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে।
বসন্ত উৎসবের সময় লণ্ঠন জ্বালানো চীনের একটি ঐতিহ্য। পর্বতারোহণ এবং নতুন বছরে সৌভাগ্যের জন্য প্রার্থনার রীতিও রয়েছে চীনে।
যদিও বসন্ত উৎসব ঐতিহ্যবাহী উদযাপনের পুনরুজ্জীবন ঘটছে চীনে, বিগত বছরের বিদায় এবং নতুনকে স্বাগত জানাতে অভিনব সব পন্থা অবলম্বন করছেন চীনারা।
ড্রাগন বর্ষ-বরণে, উত্তর-পশ্চিম চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে, দৌড়বিদরা ড্রাগন আকৃতির রুটে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
চীনে আট দিনের বসন্ত উৎসবের ছুটি দেশব্যাপী পর্যটনকেও চাঙ্গা করে তোলে। সবচেয়ে উত্তরের হেইলংচিয়াং প্রদেশের বরফ আচ্ছাদিত ল্যান্ডস্কেপ থেকে শুরু করে সর্ব দক্ষিণের হাইনান প্রদেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় উপকূলীয় শহর সানইয়া পর্যন্ত, চীন জুড়ে পর্যটকরা উপভোগ করছেন বসন্ত উৎসবের আনন্দমুখরতা।
যাদুঘর পরিদর্শন চীনাদের বসন্ত উৎসবের ছুটির আরেকটি প্রধান অবকাশযাপন মাধ্যম হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিককালে। জাদুঘরগুলোও ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বসন্ত উৎসবের উদযাপনীতে চীনের তরুণ প্রজন্ম এখন অধিক সংখ্যায় ঝুঁকছেন থিয়েটারের দিকে। চীনা নৃত্যনাট্য থেকে অপেরা এবং কনসার্ট পর্যন্ত, ছুটির সপ্তাহটিতে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন থিম নিয়ে মঞ্চে পারফর্ম করছেন শিল্পীরা।
চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজির বসন্ত উৎসব গালা নববর্ষ ও বসন্ত বরণের বিশ্বব্যাপী এক নন্দিত অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া চীনের বসন্ত উৎসব যেন পূর্ণতাই পায় না।
চান্দ্র নববর্ষের প্রাক্কালে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় ২০০টি দেশে ৬৮টি ভাষায় সম্প্রচার হয় জাঁকজমপূর্ণ এ অনুষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী ৬৭ কোটি ৯০ লাখ দর্শক দেখেছেন এ অনুষ্ঠান। ১৯৮৩ সালে শুরু হওয়া এ গালা চীনা নববর্ষের সূচনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা টিভি প্রোগ্রাম হিসাবে স্বীকৃত বসন্ত উৎসব গালা বিশ্ববাসীকে চীনা সংস্কৃতি ও নববর্ষ উৎসব সম্পর্কে সম্যক ধারনা দেয়।
চীনা বসন্ত উৎসব এবং চান্দ্র নববর্ষ উদযাপন এখন আর চীনাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বের প্রতিটি দেশে এখন নানা আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে এ উৎসব।
এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বসন্ত উৎসবকে বিশ্বসংস্থায় ছুটির দিন ঘোষণা করেছে।
৮ জুন জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজন করা হয় চীনের বসন্ত উৎসব ও নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বক্তৃতায়, জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি চাং চুন, আশা প্রকাশ করেন যে ড্রাগনবর্ষের চেতনা জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি অভিন্ন বিশ্ব সম্প্রদায় গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববাসীকে আরও ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে প্রেরণা যোগাবে।
এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় নিযুক্ত চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি দল এবং জেনিভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে বসন্ত উৎসব উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
জেনিভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ছেন সু বলেন, ‘চীনা বসন্ত উৎসব’ এখন ‘বিশ্বের বসন্ত উৎসবে’ পরিণত হয়েছে। এতে প্রাচ্যের সাংস্কৃতিক প্রভাবশক্তি এবং জাতিসংঘের বৈচিত্র্যময় অন্তর্ভুক্তিমূলক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের মহাসচিব রেবেকা গ্রিনস্প্যান বলেন, ‘নতুন বছর আমাদের উচিত বোঝাপড়া জোরদার করা এবং সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া। আর এটাই হচ্ছে ড্রাগনবর্ষের বার্তা।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা ব্যুরো, সিএমজি বাংলা।