সরকারি ভবনের সামনে আইনের লাঠি: আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়
2024-02-10 20:19:15

পূর্ব হান রাজবংশের শেষের দিকে, হান রাজবংশের সম্রাট লিংদি-এর শাসনামলে, নপুংসকদের একটি দল সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করত এবং তারা ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত ও অযোগ্য। জনগণ অভিযোগ করছিল এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যাপকভাবে নষ্ট হচ্ছিল। এটি একটি বিশৃঙ্খল যুগ, এবং আইনি ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে তার যথাযথ প্রতিরোধ-ক্ষমতা হারিয়েছিল।

ছাও ছাও, তিন রাজ্য আমলে ছাও ওয়েই শাসনের প্রতিষ্ঠাতা, সর্বদা মহান রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং দেশ ও জনগণকে রক্ষা করাকে নিজের দায়িত্ব হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ছাও ছাও, যার বয়স তখন মাত্র ২০ বছর,  লুয়াংয়ের উত্তরাঞ্চল এলাকায় জননিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময়, ছাও ছাও তরুণ ছিলেন এবং মন্দ আচরণকে ঘৃণা করতেন। তিনি ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের আইন উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারিতা করতে দেখলে তা সহ্য করতে পারতেন না। তাই তিনি এটি সংশোধন করার জন্য মনস্থির করেছিলেন। ছাও ছাও মানুষকে ১০টিরও বেশি পাঁচ রঙের লাঠি তৈরি করতে এবং জেলার গেটের চারপাশে দাঁড় করিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, যে-কেউ গুরুতরভাবে আইন লঙ্ঘন করলে, বেসামরিক বা বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেও, তাকে পাঁচ রঙের লাঠি দিয়ে হত্যা করা হবে।

ছাও ছাও প্রচুর বই পড়তেন এবং বেসামরিক ও সাহিত্য উভয় বিষয়ে প্রতিভাবান ছিলেন। তিনি বিশেষ করে "সান জুর আর্ট অফ ওয়ার’ পছন্দ করতেন এবং "সান জুর আর্ট অফ ওয়ার" এর জন্য প্রথম ঐতিহাসিক টীকা তৈরি করেছিলেন। "দা আর্ট অফ ওয়ার" অনুযায়ী সবচেয়ে উন্নত সামরিক কৌশল হল "বিনা লড়াইয়ে শত্রুকে জয় করা।" এর মানে শক্তি দেখিয়ে যুদ্ধ না-করেই শত্রুকে পরাজিত করা যায়। পাঁচ রঙের লাঠি স্থাপন করা কিছুটা যুদ্ধের কৌশলের মতো ছিল। কিন্তু এমনও লোক ছিলেন, যারা এ কৌশলে বিশ্বাস করতেন না। কয়েক মাস পর, জিয়ান থু, শক্তিশালী মন্ত্রী জিয়ান শুওর চাচা, প্রকাশ্যে রাতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে বাইরে হাঁটছিলেন। যদিও জিয়ান শুও একজন নপুংসক ছিলেন, তিনি সম্রাট লিংদি-এর বিশ্বস্ত ছিলেন। জিয়ান থু তার ভাগ্নের ওপর নির্ভর করতেন এবং আধিপত্য বিস্তারে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, ছাও ছাও তাকে কিছু করার সাহস করবেন না। তিনি ভাবতেও পারেননি যে, ছাও ছাও দ্রুত জিয়ান থুকে গ্রেপ্তার করে সত্যি সত্যি তাকে পাঁচ রঙের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করবেন। কিন্তু বাস্তবে তাই ঘটে। তারপর থেকে, ছাও ছাও-এর প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কেউ এটি লঙ্ঘন করার সাহস করেনি।

যুদ্ধবাজদের অভিযানের যুগে, ছাও ছাও দ্রুত সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি সেনাবাহিনীকে কঠোরভাবে শাসন করতেন এবং সামরিক আইনের মহিমা বজায় রখার ওপর বিশেষ মনোযোগ দিতেন। আইন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ছাও ছাও-এর সৈন্যরা সাহসী ছিল এবং শহর ও অঞ্চল জয় করেছিল। এই অর্জনগুলি সেনাবাহিনীর কঠোর শৃঙ্খলার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। আইন মানার ক্ষেত্রে ছাও ছাও নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। একবার ছাও ছাও তার সেনাবাহিনীকে একটি অভিযানে নিয়ে গিয়ে একটি গমের ক্ষেতের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন। জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য, ছাও ছাও তার সৈন্যদের গমের ক্ষেত পদদলিত না করার নির্দেশ দিলেন এবং যারা এই আদেশ অমান্য করবে তাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে, ছাও ছাও-এর ঘোড়াটি ভয় পেয়ে গমের ক্ষেতে ভিরতে ছুটে গিয়ে ক্ষেত নষ্ট করে। তাই ছাও ছাও অপরাধ নিয়ে আলোচনা করতে আইন ও শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠান। কর্মকর্তারা বলেন যে, প্রাচীন প্রথা অনুসারে, ঘোড়ার প্রভু দায়মুক্ত হতে পারেন। ছাও ছাও বলেন, তিনি তার নিজের নিয়ম লঙ্ঘন করে সেনাবাহিনীকে কমান্ড করতে পারেন না। কিন্তু তার একটা ভারী দায়িত্ব ছিল তাই তাকে মারা যাবে না। তাই তিনি আত্ম-শাস্তির চিহ্ন হিসেবে শিরশ্ছেদের বদলে তার নিজের চুল কেটে ফেলেছিলেন।

২২০ খ্রিস্টাব্দে, ছাও ছাও-র বয়স সত্তর বছরের বেশি। তিনি একটি উইল করে গিয়েছিলেন যে, তার মৃত্যুর পরে, তার জন্য উচ্চ মঞ্চ তৈরি করতে হবে না, সমাধির পাশে গাছ লাগাতে হবে না, এবং তার সাথে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ধন-সম্পদ কবরে দেওয়া যাবে না। তাকে সহজ-সরলভাবে সমাধিস্থ করা হবে। হাজার হাজার বছর ধরে, চীনা ইতিহাসের একজন মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে, ভবিষ্যত প্রজন্ম ছাও ছাও’কে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। থাং রাজবংশের সম্রাট লি শিমিন, তাকে "অতীতে অন্যায় সংশোধনের প্রচেষ্টায় অতুলনীয়" বলে অভিহিত করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, তিনি সেই সময়ে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি বিশাল অবদান রেখেছিলেন। মাও সেতুং বলেছিলেন যে, তিনি একজন মহান রাজনীতিবিদ যিনি আইনের শাসনের প্রচার করেছিলেন এবং মিতব্যয়ীতার পক্ষে ছিলেন, যা সমাজকে স্থিতিশীল রেখেছে ও বিকশিত হতে সাহায্য করেছে।

যদিও আমরা এখন শান্তিপূর্ণ যুগে রয়েছি, আইনি বিধিবিধান অনুযায়ী নেতৃত্ব দেওয়া এখনও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শাসনের একটি মূল্যবান চেতনা। আজকের চীন আইনের শাসনের চেতনা প্রদর্শনের জন্য আর "পাঁচ রঙের লাঠির" ওপর নির্ভর করে না, তবে আইনের শাসনের চেতনা প্রদর্শনের জন্য আইনের শাসনব্যবস্থার উন্নতির ওপর নির্ভর করে। এই "পাঁচ রঙের লাঠি" আর শুধু একটি নির্দিষ্ট সরকারি ভবনের দরজায় ঝুলছে না, প্রতিটি শাসককর্মীর হৃদয়ে ঝুলছে। (স্বর্ণা/আলিম/ছাই)