চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৫৫
2024-02-10 14:56:43

১. চীনে বসন্ত উৎসবে বর্ণাঢ্য আয়োজন

আতশবাজি, লণ্ঠন, ঐতিহ্যগত খাবার দাবার এবং নানা রীতি রেওয়াজের মধ্য দিয়ে বর্ণিল আয়োজনে চীনে উদযাপিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব। 

এর মধ্য দিয়ে চীনে চান্দ্র নববর্ষের সূচনা হয়। এটি চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক উৎসব।

তাই এই উৎসবকে ঘিরে রঙিন হয়ে উঠেছে গোটা চীন। এর আগে চলে মাসব্যাপী প্রস্তুতি। এটি পরিবারের সদস্যদের পুনর্মিলনের একটি বড় উপলক্ষ্য। একসঙ্গে বিদায়ী বছরের শেষ নৈশভোজে অংশ নেন তারা।

নিজেদের বাড়িঘর ছাড়াও সড়কগুলোকে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক লাল রঙে সাজানো হয়েছে।

উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রাচীন শহর কাশগর সেজেছে বসন্তের সাজে। চীনা নতুন বছর বা বসন্ত উৎসব উপলক্ষে গোটা শহরকে সাজানো হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি ছোট লন্ঠন দিয়ে।

স্থানীয়রা জানান, এই পুরানো শহরের ১২টি প্রধান সড়কে ঝুলানো মিনি লণ্ঠন শুধু শোভাই বাড়াচ্ছে না আনন্দঘন পরিবেশও তৈরি করছে।  অস্থানীয় বাজারও বসেছে পথের পাশে।

এই শহরে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার দর্শক ভ্রমণ করতে আসেন। আর উৎসবে এই আনাগোনা বেড়েছে দ্বিগুন।

ড্রাগন মোটিফ এবং ড্রাগন আকৃতির পুতুলসহ লণ্ঠনের মতো জিনিসগুলো শিশুদের আনন্দের বিশেষ উপলক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। 

এটি দেশের ভোক্তাব্যয় এবং ব্যবসায়িক আয়ের জন্য একটি প্রধান মৌসুমের প্রতিনিধিত্ব করে।

এ উপলক্ষ্যে রাজধানী বেইজিং, শাংহাই, উত্তর-পূর্ব চীন এবং মধ্য চীনের বিভিন্ন প্রদেশসহ সারা দেশে বর্ণাঢ্য ড্রাগন ড্যান্স ও শোভাযাত্রা, লণ্ঠন উৎসব, মেলা এবং ঐতিহ্যিক চমকপ্রদ সব আয়োজন করা হয়। 

বিশ্বের দেশে দেশে চীনের বসন্ত উৎসব

শুধু চীনেই নয়, নানা আয়োজনে বসন্ত উদযাপন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহু ভাষাভাষি মানুষ। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে ভিনদেশের মধ্যেও।

মালয়েশিয়ার গাছপালা এবং গলিগুলো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে লাল লণ্ঠনে। কুয়ালালামপুরের কিছু এলাকা যেনো এক খণ্ড চীনে পরিণত হয়েছে। 

এ উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়। এতে চীনাদের পাশাপাশি স্থানীয়রা ভিড় করেন। সেখানে চীনা সাংস্কৃতিক পরিবেশনারও আয়োজন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী ড্রাগন নৃত্য এবং বিভিন্ন খাবার স্থানীয়দের খুব আকৃষ্ট করে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের প্রাণকেন্দ্রে চীনা বৈচিত্র্যের বিকাশ ঘটেছে। প্রাণবন্ত চীনা সংস্কৃতিতে মুগ্ধ পর্যটকরা।  বাদ্যবাজনা বাজিয়ে চীনা নববর্ষকে বরণ করে নেন তারা।

এমন আয়োজনে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের থেকে শুরু করে কেপটাউনের বাসিন্দারাও চীনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বেশি করে শেখার সুযোগটি কাজে লাগান।

চীনা রাশিচক্র অনুযায়ী এটি ড্রাগনের বছর। আর ড্রাগন থিমের পণ্য এবং সাজ সরঞ্জামে ছেয়ে গেছে গোটা চীন। 

প্যারিসে বসন্ত উৎসব উদযাপন ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতিতে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ  প্যারিসের চায়না কালচারাল সেন্টারে চীনাদের এই উৎসবকে ঘিরে আয়োজন করা হয় আকর্ষণীয় প্রচারমূলক গালা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান চলাকালীন, শিক্ষক এবং ফরাসি ছাত্ররা ঐতিহ্যবাহী চীনা যন্ত্রের পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে।

নরওয়ের অসলো কনসার্ট হলেও চীনা বসন্ত উৎসব উদযাপনের আয়োজন করে সেখানকার চীনা দূতাবাস।

এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সার্বিয়া, ইথিওপিয়া, রাশিয়া,পাকিস্তান এবং কাজাখস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রঙিন আয়োজনে উদযাপন করা হচ্ছে এই উৎসব।  

প্রতিবছরেই বসন্ত উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন উদ্যম ও নতুন আশা নিয়ে নতুন বছরকে আলিঙ্গন করেন চীনারা।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

 

২. থিয়ানচিনের প্রাচীন সংস্কৃতি সড়কে প্রেসিডেন্ট সি

বসন্ত উৎসবের আগে, গত ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি উত্তর চীনের থিয়ানচিন সফরের সময়, শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত প্রাচীন সংস্কৃতি সড়ক পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। এ সময় তিনি বলেন, চীনের আধুনিকায়নকে অবশ্যই সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।


প্রেসিডেন্ট সি সংস্কৃতিক সড়কে অবস্থিত স্থানীয় বৈশিষ্ট্যময়, বিখ্যাত দোকান-পাট ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের সঙ্গে পরিচিত হন।

কওরেন ছাং শপ পরিদর্শনের সময় প্রেসিডেন্ট সি তাদের পণ্যবৈচিত্র, ক্রেতা ও দামের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। ১৯০ বছরের পুরনো বাদামের দোকানটি তাদের চীন বাদাম, আখরোট, অ্যাপ্রিকট ও টকমিষ্টিঝাল পাইন বাদামের জন্য বিখ্যাত। প্রেসিডেন্ট সি দোকানে একটি ছোট শিশুকে খাবারের প্যাকেট উপহার দেন।

প্রেসিডেন্টকে খুব কাছে পেয়ে এবং তার সঙ্গে বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পের আনন্দে উদ্বেলিত হন স্থানীয় বাসিন্দা ও কওরেন ছাংয়ের কর্মী মা সিয়াওমেং:

‘প্রেসিডেন্ট যখন আমাদের দোকানে আসেন, তখন সেখানে অনেক ক্রেতা ছিলেন। তিনি সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সবাই খুব খুশি হয়। আমরা আশা করিনি সাধারণ সম্পাদক আমাদের দোকানে আসবেন। আমরা সত্যিই খুব উচ্ছ্বসিত।’

থিয়ানচিনের বৈশিষ্ট্যময় উডব্লক পেইন্টিং চীনে নববর্ষের সাজসজ্জার অন্যতম উপকরণ। চীনের প্রাচীন মিং ও ছিং ডাইনেস্টির সময়কালে এর বিকাশ ঘটে।

প্রেসিডেন্ট সি বিখ্যাত ইয়াংলিউছিং নিউ ইয়ার পেইন্টিং দোকান পরিদর্শন করেন এবং বিশেষ এ শিল্পরীতির বষিয়ে আগ্রহ দেখান। প্রেসিডেন্ট সির পরিদর্শন সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে তাকে উৎসাহ যুগিয়েছে বলে জানানা সু লিইয়ান:

‘নববর্ষের পেইন্টিংগুলো দেখে প্রেসিডেন্ট খুব খুশি হন। তিনি এ সব অমূল্য সাংস্কৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন। আমি এ দক্ষতা উন্নয়নে আরও চেষ্টা করবো এবং এটি পরবর্তী প্রজন্মমের কাছে পৌঁছে দেব।’

প্রেসিডেন্ট সি থিয়ানচিনের ঐতিহ্যবাহী মাটির মূর্তি শিল্পের বিখ্যাত শপ ক্লে ফিগারাইন ছাং পরিদর্শন করেন। ২০০ বছরের পুরনো এ শিল্প মাধ্যমটি ২০০৬ সালে জাতীয় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

----------------------------------------------------------------------

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।