চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান
2024-02-09 14:39:28

 


‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ৫৬তম পর্বে থাকছে:

 

১.  চীনের চিয়াংসু প্রদেশের জিডিপি বেড়েছে ৫.৮ শতাংশ

২.  

৩. ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশিদের পছন্দের শীর্ষে চীনা পণ্য

 

 

 

চীনের চিয়াংসু প্রদেশের জিডিপি বেড়েছে ৫.৮ শতাংশ

গতবছর পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি তার আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৮২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

প্রাদেশিক গণকংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 

অধিবেশনে আরও জানানো হয়, গ্রামীণ বাসিন্দাদের মাথাপিছু নিট আয় বছরে ৭ শতাংশ বেড়ে ৩০ হাজার ৫০০ ইউয়ান এবং শহুরে বাসিন্দাদের মাথাপিছু আয় বছরে ৫ শতাংশ বেড়ে ৬৩ হাজার ২০০ ইউয়ান হয়েছে।

 

পাশাপাশি ২০২৩ সালের জিডিপিতে উৎপাদন খাত ৪ দশমিক ৬৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান রাজস্ব যোগ করেছে, যা প্রদেশের মোট জিডিপির ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

 

সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ ও নীতিমালা প্রণয়নের ফলে সব মিলিয়ে ৯৪ হাজারেরও বেশি প্রযুক্তি-ভিত্তিক ছোট ও মাঝারি আকারের শিল্প গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ৭৯৫টি নতুন উদ্যোগকে ‘লিটল জায়ান্ট’ তথা উদীয়মান বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

 


এর মধ্যে ৫১ হাজারেরও বেশি হাই-টেক বা উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প উদ্যোগ আছে এবং এতে প্রায় ১ কোটি ৫৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ইয়াংচৌয়ের পৌর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যুরোর পরিচালক ওয়াং ইউফাং জানান, ‘উচ্চস্তরের উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলোকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন যৌথ কেন্দ্র চালু করা হয়। মূলত এতেই এমন অর্জন সম্ভব হয়েছে ‘

বর্তমানে চীনের পূর্ব উপকূলীয় প্রদেশটির পাঁচটি শহর সুচৌ, নানচিং, উসি, নানথং এবং ছাংচৌয়ের জিডিপিও এক ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে।

এর মধ্যে ছাংচৌয়ের জিডিপি প্রথমবারের মতো এক ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। মূলত এ শহরটির বায়োমেডিকেল শিল্প জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে।

চলতি বছরের জন্য চিয়াংসু প্রদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশেরও বেশি।

 

এদিকে বিদেশে চীনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ১৪৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

 

বিদেশে চীনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (ওডিআই) ২০২৩ সালে ছিল ১৪৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে আর্থিক খাত বহির্ভূত প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ১১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৩০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে।

 

দেশটির হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠান ইওয়াই চায়নার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এসব নন ফিন্যান্সিয়াল বা আর্থিক খাত বহির্ভূত প্রত্যক্ষ বিনিয়োগগুলো বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যুক্ত।

 

চীনা কোম্পানিগুলোর বিদেশি একীভূতকরণ মূল্য বছরে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৩৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বছরের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে দেখা গেছে প্রতিটি মাসেই আগের মাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল।

 

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

টিকটক বদলে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ই-কমার্স বাণিজ্য

 

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আসার পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস পরবর্তী পৃথিবীতে অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো। সম্প্রতিককালে জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটক ইন্দোনেশিয়ার অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রসারিত করছে। দেশটির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য দেড় বিলিয়ন ডলার বিনয়োগ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম টোকোপিডিয়াতে আরও শক্ত অবস্থানে পৌছানো এবং অনলাইন শপিং সেক্টরে বৃদ্ধির জন্যই এমন বিনিয়োগ করেছে এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।

ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির এ বিনিয়োগ ই-কমার্স বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।

টোকোপিডিয়ার কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান আদিতিয়া গ্রাসিও নেলওয়ান জানান, টিকটকের এমন বিনিয়োগের উদ্দেশ্য হলো ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে আরও বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। পাশাপাশি এটি ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর সহায়তায় জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে। মূলত টিকটক হলো গ্রাহকদের কাছে বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শন করার প্ল্যাটফর্ম এবং অর্থপ্রদান প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে টোকোপিডিয়া। পাইলট কার্যক্রমকালে আমরা টিকটকের ব্যাকএন্ড সিস্টেমকে টোকোপিডিয়াতে স্থানান্তর করব।

একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফেলিসিয়া ফিওজা তার অনলাইন শপে চীনের উৎপাদিত বিশেষ সব পণ্য বিক্রি করছেন। তিনি টিকটকে লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে প্রতিদিন শত শত গ্রাহকের কাছে তার পণ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন টোকোপিডিয়ার সঙ্গে টিকটক একীভূত হলে তার ব্যবসার আরও উন্নতি হবে। এবং পণ্য বিক্রি করার জন্য আবার লাইভ করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন।

ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির ই-কমার্স বাণিজ্যে টিকটকের বিনিয়োগ একটি গেম-চেঞ্জার হবে। কারণ এটি ইন্দোনেশিয়ার ক্রমবর্ধমান ই-কমার্স বাজারে শক্তি ইনজেক্ট করার জন্য দুটি জনপ্রিয় ডিজিটাল ইকোসিস্টেমকে একীভূত করছে।

ইন্দোনেশিয়ার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটির ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। এতে টিকটক ছাড়াও অন্যান্য অ্যাপ রয়েছে।

গত কয়েক বছরে মানুষের কেনাকাটা করার পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ঠিক এই জায়গাটিতে  টিকটক অন্যান্য প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা।

 

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

ভিনদেশে চীন:

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশিদের পছন্দের শীর্ষে চীনা পণ্য

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে চলছে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবারের মেলায় বিভিন্ন দেশের স্টল ও পণ্য থাকলেও বাংলাদেশিদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে চীনের তৈরি পণ্যসামগ্রী। ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে আছে চীনে তৈরি হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেকট্রনিক্স ও অন্যান্য পণ্য।


সোমবার বাণিজ্য মেলায় সরেজমিন বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটিএইডস, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্যের পাশাপাশি চীনের তৈরি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স, অ্যালুমিনিয়াম, ক্রোকারিজ ও শিশুদের খেলনার দোকানগুলোতে ভিড় ছিল দেখার মতো।

 


মেলায় চীনা গেজেট স্টল 'সিংইয়ুন' থেকে কেনাকাটা করছেন সুমি আক্তার। তিনি বলেন, 'আমি প্রায়ই কসমেটিকসহ বিভিন্ন চীনা পণ্য কিনি। এর আগে চীনা ব্রান্ডের পারফিউম কিনেছিলাম। আজ একটি গেজেট কিনেছি। চীনের তৈরি পণ্যগুলোর গুণগত মান অনেক ভালো।’

 চায়না বাজার নামে একটি স্টলের ব্যবস্থাপক জানান, ‘আমার দোকানের অধিকাংশ পণ্যই চীনা। এর মধ্যে হোম অ্যাপ্লায়েন্স বেশি। চীনা পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। এসব পণ্যের চাহিদাও অনেক।’

আয়োজকসূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশি–বিদেশি মিলিয়ে ৩৩১টি স্টল মেলায় অংশ নেয়। এ বছর আছে ৩৫০টি স্টল। দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ইরান, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা মেলায় নিজেদের পণ্য বিক্রি করছেন।

২০২২ সাল থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বাণিজ্য মেলা হচ্ছে। এর আগে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে হতো বাণিজ্য মেলা। জনদুর্ভোগ এড়াতে বাণিজ্য মেলা মূল শহর থেকে পূর্বাচলে স্থানান্তর করে বাংলাদেশ সরকার।

এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমে বাড়ছে বাংলাদেশ ও চীনের বাণিজ্য। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৫ শতাংশই আসছে চীন থেকে। গেল বছর চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক জোরদারে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। গত এক দশকেরও বেশি সময়ে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সামনের দিনগুলোতে চীন থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবাগুলো আরও বাড়বে। চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহযোগিতা কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সেদিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী