হুয়াবোবো চীনের তরুণ প্রজন্মের হাতে সৃজনশীল ছোঁয়া পাচ্ছে
2024-02-08 10:15:19

চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ উত্সবে বিভিন্ন আকারের হুয়াবোবো স্টিমড করা চীনের মিং ও ছিং রাজবংশের সময় থেকেই শানতোং প্রদেশের চিওতোং অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ লোকপ্রথা। বর্তমানে এই অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তরুণ প্রজন্মের হাতে সৃজনশীল ছোঁয়া পাচ্ছে।

হুয়াবোবো পেস্ট্রি ময়দা থেকে তৈরি করা হয় এবং সাধারণ সরঞ্জাম ব্যবহার করে ময়দাকে কেবল বিভিন্ন নকশাই দেওয়া হয় না, বরং সেটা দিয়ে বিভিন্ন প্রাণবন্ত প্রাণী, উজ্জ্বল ও সুন্দর ফুল এবং গাছপালাও তৈরি করা হয়। হুয়াবোবো লোকরীতির এক অনন্য অভিব্যক্তি হয়ে উঠেছে।

চীনের চান্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী এখন বছরের শেষের সময়। পাস্তা প্রস্তুতকারক চৌ হাইনিং চীনের বিভিন্ন জায়গার হুয়াবোবোর অর্ডার সরবরাহ করতে ব্যস্ত। এখন বছরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময় তার। নয় বছর আগে, তখনকার ২১ বছর বয়সী চৌ হাইনিং চিনান থেকে জন্মস্থান উইহাই শহরের লিনকাং জেলার ওয়াংথোং থানায় ফিরে আসেন এবং মা ইউ রিফেনের হাত থেকে হুবোবো তৈরি করার কাজ শেখার পর আর তা ছেড়ে দেননি।

হুয়াবোবো সবসময়ই শানতোং প্রদেশের চিওতোং অঞ্চলের জনগণের জীবন এবং লোকজ রীতিনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ঐতিহ্যবাহী উত্সব বা বিয়ের অনুষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে হুয়াবোবো টেবিলে রাখা হয়। খুব সাধারণ সাদামাটা মহিলাদের হাতে এক একটি পিচ, ডালিম, ড্রাগন প্রভৃতি জিনিস বা পশু-প্রাণীর আকৃতিতে পরিণত হয়ে ওঠে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক জীবনের গতি দ্রুত হওয়ার সাথে সাথে খুব কম সংখ্যক মানুষ ঘরে হুয়াবোবো তৈরি করে। ২০১০ সালে ইউ রিফেন ওয়াংথোং থানায় একটি হুয়াবোবোর দোকান চালু করেন। তার ভালো কারুকাজ এবং বিশাল চাহিদার কারণে, তার দোকান খোলার সাথে সাথে অসংখ্য অর্ডার আসে।

হুয়বোবো তৈরি করতে মায়ের ব্যস্ততা দেখে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক চৌ হাই নিং জন্মস্থানে ফিরে শিল্প সৃষ্টি করা এবং পুরানো কারুশিল্পের একজন উত্তরাধিকারী হওয়াকে বেছে নেন। চৌ হাই নিংয়ের কাছে পুরানো কারুশিল্পের উত্তরাধিকার করাই হলো জন্মস্থান প্রসঙ্গে জানাশোনা গভীরতর করার প্রক্রিয়াও।

বর্তমানে হুয়াবোবো শানতোং প্রদেশের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের স্বতন্ত্র প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন।

চৌ হাই নিংয়ের মা ইউ রিফেন ওয়াংথোং থানার হুয়াবোবো পাস্তা কারিগরদের সমিতির প্রধান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার নেতৃত্বে অনেক হুয়াবোবো কারিগর শিল্পায়নের সুবিধা ভোগ করেছেন। ইউ রিফেন অনেক শিক্ষানবিশ গ্রহণ করেছেন। কয়েক বছর পর চৌ হাইনিংয়ের নৈপুণ্য মায়ের সমতুল্য হয়েছে। তিনিই মায়ের স্থলাভিষিক্ত হয়ে শিক্ষানবিশদের শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শতাধিক হুয়াবোবো পাস্তা প্রস্তুতকারককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শানতোং প্রদেশের বাইরে থেকে আসা ব্যক্তি।

পুরানো কারুশিল্প এবং নতুন মুখ - চৌ হাইনিংসহ তরুণ প্রজন্মের যোগদান শুধুমাত্র হুয়াবোবোর উত্তরাধিকারকে বহন করছে না, বরং পরিবর্তনও বয়ে আনছে। সাধারণভাবে বলা যায়, ঐতিহ্যবাহী হুয়াবোবোর রং সাদা এবং এর ডিজাইন ও মডেলিং অপেক্ষাকৃত সহজ। চৌ হাইনিং বলেন, “আমরা ফল ও সবজির রস দিয়ে নানা রঙের হুয়াবোবো বানাই এবং এর মডেলিং আরও প্রাণবন্ত ও বৈচিত্র্যময়। তারা ঐতিহ্যকে ভিত্তি হিসেবে নিয়ে সাংস্কৃতিক ধারা ও বাজারের চাহিদার সমন্বয় করেছেন। নতুন ডিজাইন গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

চৌ হাইনিংয়ের মতো ২৬ বছর বয়সী লিন পোং হুয়াবোবোর তরুণ উত্তরাধিকারী। তার বাবা লিন রোং থাও চিওতোং অঞ্চলের হুয়াবোবোর শানতোং প্রাদেশিক পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বশীল উত্তরাধিকারী। শৈশবকালে তিনি হুয়াবোবোর জগতে মেতে ওঠেন। এখন তিনি হচ্ছেন উইহাই শহরের ওয়েনতেং জেলার একটি হুয়াবোবো প্রস্তুতকারী কোম্পানির কারখানা পরিচালক। তার নেতৃত্বে ১০ জনের বেশি শ্রমিক হুয়াবোবো তৈরি করছেন।

লিন পোং কথা তেমন বলেন না, তবে তিনি গোপনে নৈপুণ্য নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, “আমি জটিল ও সুন্দর আকার দিতে এবং হুয়াবোবোকে একটি চমত্কার চারুকলা হিসেবে গড়ে তুলতে পছন্দ করি। সাত বছরের পরিশ্রমের পর এখন লিন পোং নিজের শৈল্পিক স্টাইল প্রতিষ্ঠা করেছেন।”

লিন পোংয়ের তৈরি পশুপ্রাণীর আকৃতির হুয়াবোবো খুব প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয়। তিনি মনে করেন, হুয়াবোবোর আকৃতি ও নকশায় সৃজনশীলতা আসছে। তবে ভালোবাসার বাহক হিসেবে এর বিষয় প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত কখনও পরিবর্তিত হয়নি।

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে সবাই মিলে ব্রাজিলের ওপর নজর দেবো।