বয়স্কদের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করার গুণ (১)
2024-02-08 20:18:45

 অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও সিচাং-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর সিচাং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।

 

কাজাখদের মধ্যে একটি গল্প প্রচলিত আছে: বহুকাল আগে, একজন রাজা মনে করতেন যে, মানুষ বৃদ্ধ হয়ে গেলে অকেজো হয়ে যায়। তাই তিনি আদেশ জারি করেছিলেন যে, ৬০ বছরের বেশি বয়সী কোনো বয়স্ক ব্যক্তি থাকলে, পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে অবশ্যই বৃদ্ধ ব্যক্তিকে বনে ফেলে রেখে আসতে হবে। এই আইনের অন্যথা হলে মৃত্যুদণ্ড। তো, এক যুবক তার বৃদ্ধ বাবাকে বনে রেখে আসার বিষয়টি কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না। তাই, সে তার বাবাকে একটি বড় কাঠের বাক্সে লুকিয়ে রেখেছিল। একদিন, যুবকটিকে রাজা একটি অভিযানে যাওয়ার জন্য ডেকে পাঠান। তিনি একটি বলদের পিঠে বাবাসমেত সেই কাঠের বাক্সটি নিয়ে রওয়ানা দেন। অভিযাত্রী দল যখন মরুভূমিতে এলো, তখন তাদের পানি ফুরিয়ে গেল এবং রাজা খুবই উদ্বিগ্ন হলেন। তিনি আদেশ করলেন: যে পানি খুঁজে পাবে তাকে প্রচুর পুরস্কার দেওয়া হবে। যুবকটি তার বাবাকে গোপনে বিষয়টি জানায়। বাবা তার ছেলেকে বললেন, বাক্সটি গরুর পিঠ থেকে নামিয়ে সেটিকে ছেড়ে দিতে ও তাকে অনুসরণ করতে। দেখা গেল মুক্ত গরু ঠিকই পানির সন্ধান পেয়ে গেল। কয়েকদিন পর দলটি একটি বড় হ্রদের কাছে এল। রাজা পানিতে একটি চকচকে আলো দেখতে পেলেন। তিনি সন্দেহ করলেন যে, পানিতে রত্ন আছে এবং আদেশ দিলেন: যে কেউ রত্ন খুঁজে পাবে, সে আমার মন্ত্রী হতে পারবে। যুবকটি তার বাবাকে আবারও বিষয়টি গোপনে বলল। পিতা তাকে রত্নটি কীভাবে খুঁজে বের করতে হবে তা জানালেন। কিন্তু রত্নটি খুঁজে পাওয়ার আগে তার ছেলেকে রাজার কাছে দুটি শর্ত দিতে বললেন: প্রথমত, রাজার আদেশ অমান্য করার জন্য যুবককে শাস্তি দেওয়া যাবে না, এবং দ্বিতীয়ত, রাজাকে বয়স্কদের নির্বাসনে পাঠানোর নিয়ম বাতিল করতে হবে। রাজা যুবকের শর্তে রাজি হলেন এবং যুবকটি রত্নটি খুঁজে পেয়ে রাজাকে দিল। রাজা তখন বয়স্ক ব্যক্তিদের নির্বাসনে পাঠানোর নিয়ম বাতিল করলেন এবং যুবকের বৃদ্ধ পিতার কাছে ক্ষমা চাইলেন। সেই থেকে ‘একজন ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তি বুদ্ধিমান’—এমন কথা  কাজাখদের মধ্যে প্রচলিত আছে।

আরেকটি কাজাখ প্রবাদ আছে: ‘তরুণরা কাজ করতে দরজায় আসে, এবং বৃদ্ধরা বিনোদনের জন্য দরজায় আসে।’ কাজাখ পরিবারে, বয়স্করা মূলত ঘরের কাজ করেন না এবং শুধুমাত্র তাদের সামর্থ্যের মধ্যে কিছু কাজ করেন। বাড়িতে বড়-ছোট সবাই আলোচনায় অংশ নিতে পারেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি। প্রতিবছর প্রথম মাংসের স্বাদ নেন বয়স্ক ব্যক্তি। শীতকালীন জবাইয়ের সময় প্রাপ্ত গবাদি পশু ও ভেড়ার মাথাগুলোকে পরবর্তী বছরের নওরোজ উত্সবের সময় বাড়ির বয়স্কদের সামনে পরিবেশন করতে হবে। প্রবীণরা বেড়াতে গেলে, যুবকেরা প্রবীণদের তাদের ঘোড়ার চাদর খুলে ঘোড়াকে পানি ও ঘাস দিতে সাহায্য করবে—এটাও নিয়ম।

উইগুররা তাদের পিতামাতার প্রতি অত্যন্ত অনুগত, তাদের পিতামাতার মতামতকে সম্মান করে, এবং কোনো পরিস্থিতিতে তাদের পিতামাতার সাথে বিরোধিতা করে না; তারা সবসময় তাদের পিতামাতার জন্য সুস্বাদু খাবার রেখে যায় এবং খাওয়ার সময় প্রথমে তাদের বড়দের পরিবেশন করে; তারা প্রায়শই তাদের পিতামাতার সাথে দেখা করতে বাড়িতে যায় বিয়ে করার পর। উত্সব চলাকালীন, শিশুরা প্রথমে তাদের পিতামাতার সাথে দেখা করে এবং তরুণ প্রজন্ম প্রথমে তাদের বড়দের সাথে দেখা করে। যখনই ভালো ফলন হয়, প্রথমে বড়দের উপহার দেওয়া হয়; তরমুজ এবং ফল পাকলে প্রথমে তারা বড়দের চাখতে দেয়; নতুন আটা দিয়ে তৈরি রুটিও বড়রা প্রথমে খায়। যদি কোনো পরিবারে প্রবীণ না থাকে, তবে পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিকেই প্রবীণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তরুণরা বয়স্কদের সামনে ধূমপান, মদ্যপান থেকে বিরত থাকে এবং বয়স্কদের উপস্থিতিতে কথা বলে না বা হাসে না।

উইগুর এবং অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষ বিশ্বাস করে যে, প্রবীণরা মহান জ্ঞান ও প্রজ্ঞাধারী মানুষ। তাদের নাম ধরে ডাকা উচিত নয়। পরিবর্তে, তাঁরা সাধারণত তাদের নামের পরে উপযুক্ত শিরোনাম ব্যবহার করে: পুরুষদের জন্য, তারা সাধারণত ‘বোওয়া’ এবং ‘বয়’ ব্যবহার করে। কুন্দাদা (চীনা ‘দাদা’ এর সমতুল্য), ‘আতা’ (চীনা ভাষায় ‘আঙ্কেল’-এর সমতুল্য) এবং ‘আকা’ (চীনা ভাষায় ‘চাচা’ এবং ‘বড় ভাই’-এর সমতুল্য), ইত্যাদি; মহিলাদের জন্য, ‘মামা’ ও ‘কুনানা’ ব্যবহার করা হয় (যা চীনা ভাষায় ‘ঠাকুমা’-এর সমতুল্য), ‘আপা’ (চীনা ভাষায় ‘খালা’-র সমতুল্য) এবং ‘আকিয়া’" (চীনা ভাষায় ‘জ্যেষ্ঠ বোন’-এর সমতুল্য), ইত্যাদি।

মঙ্গোলিয়ানরা প্রবীণদের সম্মান করার পরামর্শ দেয়। তাদের মধ্যে প্রচলিত একটি প্রবাদ হচ্ছে: "জামাকাপড়ের কলার আছে, এবং মানুষের বড় ভাই আছে। আপনার বড়দের সাত গুণ এবং আপনার ভাইদের তিন গুণ সম্মান করা উচিত।” যদি একজন বয়স্ক প্রবীণ পরিবারে আসেন, তবে তাকে অবশ্যই তার কাছে যেতে হবে এবং ঘোড়াটি তুলে বেঁধে রাখতে হবে। প্রবীণ যখন চলে যেতে চান, তাকে অবশ্যই ঘোড়ার জিন পরতে সাহায্য করতে হবে। আপনি যদি রাস্তায় একজন প্রবীণের সাথে দেখা করেন, তবে ছোটটিকে অবশ্যই ঘোড়া থেকে নামতে হবে বা ধীরে ধীরে হেঁটে যেতে হবে এবং তাদের আন্তরিকভাবে এবং সক্রিয়ভাবে অভ্যর্থনা জানাতে হবে।

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn  আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ঊর্মী/আলিম)